রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


দীর্ঘ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে রাণীনগরের কয়েক গ্রামের মানুষ


প্রকাশিত:
৩১ জানুয়ারী ২০২১ ২২:৩৮

আপডেট:
৩১ জানুয়ারী ২০২১ ২২:৩৯

ছবি: প্রতিনিধি

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামে খাল কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ চলছে। দীর্ঘ বছর পর খাল খনন করে রাস্তা নির্মান করায় দীর্ঘ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ওই এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষ। এতে একদিকে যেমন বিলের মধ্য থেকে বয়ে চলা রাস্তায় চলাচলে দূর্ভোগ লাঘব হবে, অন্যদিকে আগের চেয়ে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। এলাকাবাসীর সুবিধার্থে স্থানীয় গ্রামবাসী ও সরকারী অর্থায়নে এই রাস্তার নির্মান কাজ চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্থান আমলে এলাকার পানি নিষ্কাশন এবং রক্তদহ বিল এলাকা থেকে কৃষি উৎপাদিত ফসল বহন ও চলাচলের জন্য মাধাইমুড়ী গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার একটি খাল কাম রাস্তা নির্মান করা হয়। এরপর খাল ও রাস্তা সংস্কার না করায় একদিকে যেমন রাস্তা জমির সাথে মিশে যায়, অন্যদিকে খাল ভরাট হওয়ায় এলাকার ফসলি জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণ ও বন্যার পানি জমিতে দীর্ঘ জলাবদ্ধা সৃষ্টি করলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে থাকে। এছাড়াও বিলের মধ্য থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উৎপাদিত ফসল পরিবহণে চরম দূর্ভোগে পরে মাধাইমুড়ি, মধুপুর, ক্ষুদ্র বেলঘড়িয়া, আমগ্রামসহ প্রায় ৭/৮টি গ্রামের মানুষ।

দীর্ঘ ৩০ বছর আগে কোন রকম খাল খনন ও রাস্তা সংস্কার করলেও আবারো আগের মতোই অবস্থা সৃষ্টি হয়। রাস্তা নির্মান ও খাল খননে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও সুরাহা করতে পারেনি এলাকাবাসী। এক পর্যায়ে গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাবিটা প্রকল্প থেকে ২ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে রাস্তা নির্মানের কাজ শুরু করা হয়। এতেও পুরো রাস্তা নির্মান না হওয়ায় মাধাইমুড়ী গ্রামের লোকজন বাধ্য হয়ে কিছুটা দূর্ভোগ লাঘব করতে গ্রাম থেকে প্রায় এক লক্ষ ৬ হাজার টাকা উত্তোলন করে রাস্তা নির্মান ও খাল খনন কাজ শুরু করেন।

পরে স্থানীয় কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মন্ডল এগিয়ে এসে আরো এক দফা কাবিটা প্রকল্প থেকে আরো ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়ে খাল থেকে মাটি কেটে রাস্তা নির্মান কাজ শুরু করেছেন। এতে যেমন পরিবহন সুবিধা ফিরে পাচ্ছে, পাশাপাশি খাল থেকে মাটি কাটায় পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম হচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় এই এলাকার লোকজন প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। আর রাস্তা নির্মান হওয়ায় ধান কাটা-মাড়াই ও পরিবহন খরচ কমে আসবে। ফলে লাভবান হবে এই এলাকার লোকজন।

মাধাইমুড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম, নুরল হক, আব্দুল হালিম শিশিরসহ আরো অনেকে জানান, রাস্তা না থাকায় ধান কাটা মাড়াই ও পরিবহনে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হতো। এছাড়া খাল ভরাট হওয়ায় বর্ষা ও বন্যার পানি দীর্ঘ জলাবদ্ধতা থাকার কারনে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতো। কিন্তু এই খাল থেকে মাটি কেটে রাস্তা নির্মান করায় একদিকে যেমন পরিবহন দূর্ভোগ লাঘব হবে, অন্য দিকে পানি নিষ্কাশনে অধিক পরিমান জমিতে ফসল উৎপাদন হবে। এতে লাভবান হবে এলাকার লোকজন।

এলাকাবাসি আরো জানান, এখনো প্রায় দুই/আড়াই কিলোমিটার রাস্তার কাজ ও খাল খনন অবশিষ্ট থাকলো। এলাকাবাসির দূর্ভোগ পুরোপুরি লাঘব করতে প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁকি কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ঠদের দৃষ্টি আর্কষন করেন স্থানীয়রা।

এবিষয়ে রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যেত। এছাড়া রাস্তা না থাকায় কৃষকদের ধান কাটা মাড়াই ও কৃষিপন্য পরিবহণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতো। এজন্য গত বোরো মৌসুমে ওই এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করেছিলাম রাস্তা নির্মান এবং খাল খননের জন্য তারা সফল হয়েছে।

রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মন্ডল জানান, বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কাজ শেষ করলে আরো অন্তত: আড়াই কিলোমিটার রাস্তা অবশিষ্ট থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের মাধ্যমে বরাদ্দ নিয়ে অবশিষ্ট রাস্তা নির্মান ও নির্মানকৃত রাস্তায় ইট সোলিংয়ের কাজ করা হবে। এতে রাস্তা এবং খাল দু’টিই সচল হবে।

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top