সত্তর বছরের মনতাজ এখনও আইসক্রিমের ফেরিওয়ালা

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চকময়রাম এলাকায় সত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধ মনতাজ এর বাড়ি। শরীরের চামড়া দেখেই বুঝা যায় তিনি বয়সে কতটা প্রবীণ। অভাবের সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে আজ তিনি আইসক্রিমের ফেরিওয়ালা।
রাস্তার পাশে ছোট শিশুদের কাছে আইসক্রিম বিক্রি করার সময় দেখা হল বৃদ্ধ মনতাজের সাথে। পায়ে চালিত জংধরা ভ্যানগাড়িটি তার একমাত্র সম্বল। ভ্যানের মাঝখানে বসানো রয়েছে একটি বাক্স সেখানে কিছু আইসক্রিমের ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে মিতু সুপার আইসক্রিম। প্রকারভেদে আইসক্রিমের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা।
আলাপচারিতায় জানা হলো, ঘরে তার একমাত্র জীবন সঙ্গিনী মোসা. মেন্নাছা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি দীর্ঘ বছর ধরে প্যারালাইজড হয়ে গুরুতর অসুস্থ। স্ত্রীর চিকিৎসার অর্থ আর সংসার চালাতে গিয়ে প্রতিদিন সকালে আইসক্রিমের ফেরিওয়ালা হয়ে ঘর থেকে বের হতে হয় তাকে।
মেয়ে নেই তিন ছেলে, কাজ কর্ম করে যা পায় তাতে ওদের সংসারই চলে না। আরও জানা হল স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা তার সবচাইতে বড় কাস্টমার। করোনার সময়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় থমকে গেছে তার রুজি রোজগার। তবুও তিনি থেমে নেই গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভ্যান গাড়ির হর্ন বাজাতেই আইসক্রিম কিনতে ছুটে আসে ক্ষুদে ছেলেমেয়েরা।
বৃদ্ধ মনতাজ বলেন, 'ছোট ছোট শিশুরা যখন আমার কাছে ছুটে এসে বলে, দাদু আমাকে একটা আইসক্রিম দাও তখন ওদের কথা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। ওদের কাছে আমার সারাটা বেলা এভাবেই কেটে যায়'।
আবার যখন ঘরে ফিরি তখন অর্থ কষ্টগুলো এসে ভিড় করে। এই জরাজীর্ণ শরীর নিয়ে দশটি বছর কেটে গেল ফেরিওয়ালা হয়েই। ঘরের মানুষটি আমার পড়ে আছে অনেক কষ্ট নিয়ে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'বারে, আগের মতো করে আর আইসক্রিম বিক্রি হয়না। পাঁচ টাকা, দশ টাকায় বিক্রি করে আর কয় টাকায় বা লাভ হয়'!
আরপি/এসআর-১৬
বিষয়: ধামইরহাট আইসক্রিমের ফেরিওয়ালা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: