রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


সড়ক দুর্ঘটনায় ইজিবাইক চালক কিশোর তুফানের জীবনে বইছে ঝড়


প্রকাশিত:
১৫ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪০

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৬

কিশোর তুফানকে নিয়ে হাসপাতালে পরিবার। ছবি: প্রতিনিধি

যে বয়সে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল তুফান (১৩)। জীবন সংগ্রামের শুরুতে ছোট হাতে শক্ত করে ধরেছিল ইজি বাইকের হ্যান্ডেল (ব্যাটারি চালিত অটো চার্জার)। কিন্তু একটি দূর্ঘটনায় দু’চোখে সর্ষে ফুল দেখছে। সঠিক চিকিৎসা না পেলে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হতে পারে তার বাম পা। প্রতিদিন তার ঔষধ সহ আনুষঙ্গিক খরচ হচ্ছে ৯০০ থেকে হাজার টাকা। যা তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোর তুফান যখন তার মায়ের (খতেজা বিবি) গর্ভে তখন বাবা-মা’র মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকে তুফানের মা তার বাবার (জদু মন্ডল) বাড়ি উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের চকশিতা গ্রামে আশ্রয় নেয়। তুফান নানার বাড়িতে তার মায়ের কাছে বড় হতে থাকে। তুফানের বাবা মফিজ উদ্দিন তার কোন খোঁজ খবর রাখেন না। তুফান স্থানীয় মালঞ্চী মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। কিন্তু অভাবি সংসারে আর লেখাপড়া করা সম্ভব না হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে চেয়েছিল।

তাইতো বাড়িতে লালন পালন করা সংসারের একটি মাত্র সম্বল একটি গাভী প্রায় ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি ও ঋণ করে গত ৩-৪ মাস আগে তার মা একটি ইজি বাইক (ব্যাটারি চালিত অটো চার্জার) কিনে দেয়। ছোট হাতে শক্ত করে ইজি বাইকের হ্যান্ডেল ধরেছিল তুফান। প্রতি দিনের আয় দিয়ে কিস্তি শোধের পর টেনেটুনে সংসার চালায়।

কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে উপজেলার বন বিভাগের সামনের রাস্তায় অটো রিক্সার সঙ্গে ইজিবাইকের সংঘর্ষে সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে কিশোর তুফানের জীবনে বইছে প্রলয় ঝড়। এতে তার বাম পায়ের হাড় ভেঙে বেরিয়ে আসে।

তাকে উদ্ধার করে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে রাসেল এবং জাভেদ নামের দুই যুবক। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুফানকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাৎক্ষনিকভাবে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল। অর্থাভাবে সেখান সপ্তাহ খানেক চিকিৎসার পর গ্রামের বাড়ি ফিরে আসে।

তুফানের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে ৮ বছরের শিশু অর্ণবের মাটির ব্যাংকের জমানো ২ হাজার ৫শ টাকা, স্থানীয় একটি ব্যাংকের ম্যানেজারসহ তার অফিসারবৃন্দদের ৫ হাজার টাকা। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার ও সুবাস সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, তেল, লবণ সহ আনুষঙ্গিক দিয়ে তুফানের পরিবারকে সহযোগীতা করে। ইউএনও জয়া মারিয়া পেরেরা তুফানের পরিবারকে শুরু থেকে সহযোগীতা করে আসছেন। তুফানের চিকিৎসায় প্রতিদিন ঔষধ সহ আনুষঙ্গিক খরচ হচ্ছে ৯০০ থেকে হাজার টাকা। তার পায়ের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। যা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী কিশোর এখন অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে শয্যাশায়ী। সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে হারাতে হতে পারে তার একটি পা।

তুফানের মা খতেজা বিবি বলেন, প্রতিদিন ছেলের চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। যা আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। একটু ভালভাবে বাঁচতে ছেলেকে একটা চার্জার কিনে দিয়েছিলাম। কিন্তু দূর্ঘটনায় আজ চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। সমাজের হৃদয়বানদের কাছে একটু আর্থিক সহযোগীতা পেলে ছেলে সুস্থ হয়ে আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়া মারিয়া পেরেরা বলেন, তুফানের চিকিৎসার জন্য আমার পক্ষ থেকে যথাসাধ্য সহযোগীতা করেছি এবং করে যাচ্ছি। তবে একে অন্যের পাশে দাঁড়ালে তুফানেরা একটু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সাহস পায়। আসুন চারপাশে ছড়িয়ে থাকা এমন অসহায় মানুষের ‘সাহস’ হয়ে সাধ্য মতো পাশে দাঁড়াই। এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি ভরে রাখবে আপনার অন্তর।

তুফানের মা খতেজা বিবির সঙ্গে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর: ০১৭২৬-৪৩৯৬৫১

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top