রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


নওগাঁয় আমন ধানে পোকার আক্রমনে দিশেহারা কৃষক


প্রকাশিত:
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:০৮

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩১

আমন ধান চাষ। ছবি: প্রতিনিধি

আমন ধানে পোকার আক্রমন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নওগাঁর কৃষকরা। কীটনাশক ব্যবহার করেও মিলছে না সমাধান। কৃষি বিভাগের লোক মাঠে না পেয়ে। বাধ্যহয়েই পরামর্শ নেওয়ার জন্য ছুটছেন কীনাশকের দোকানগুলোতে। কীটনাশক দোকানগুলো হাতে তুলে দিচ্ছেন নাম সর্বস্ব কোম্পানির ৪ থেকে ৫টি করে কীটনাশক ফাইল ও পাউডার। কৃষি বিভাগ কৃষকের মোবাইলে যোগাযোগ করতে অথবা লিখিত অভিযোগ করতে বলছেন।

কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের তথ্য মতে, চলতি আমন মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় মোট ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানে চাষ করা হয়েছে। তারমধ্য হাইব্রীড জাতের ২৫০ হেক্টর, উন্নত ফলনশীল (উফশী) জাতের ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ১শ ৭০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ২৯ হাজার ৮০ হেক্টর।

পোমশা উপজেলার বাকইল গ্রামের কৃষক আব্দুস ছালাম ও হুমায়ন কবির বলেন, ৪ থেকে ৫ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। ২ থেকে ৩ একর জমির ধান প্রায় নষ্ট হয়ে খড় হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের লোকজন এলাকায় না আসায় কারণে আমরা কোন পরামর্শ নিতে পারছি না। কীটনাশকের দোকানদারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ স্প্রে করে কোন উপকারে আসছে না। এ রকম সমস্যা এই এলাকার অনেক কৃষকের।

নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ৯ বিঘা জমিতে স্বণা-৫ জাতের ধানের চাষ করেছি। মাজরা পোকার আক্রমনে ধানের মুজি কেটে দিচ্ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ না পেয়ে। দোকানে গেলে কাটটাপ গ্রুপের কিটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে বলছে কিন্তু তাতে কোন লাভ হচ্ছে না। গোড় গামর হতে বসেছে ধান। এসময় পোকার আক্রমনে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

একই এলাকার কৃষক ফজলুল ও রশিদ বলেন, ২০ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। ধান লাগানোর কিছু দিন পর থেকে মাজরা পোকার আক্রমন শুরু হয়। আক্রমনের পর থেকেই বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করছি। ওষুধ স্প্রে করলে এক সপ্তাহ ভালো থাকে তারপর আবার ধান মরতে শুরু হরে। কোম্পানির প্রতিনিধীরা যেসব ওষুধ দিচ্ছে এমন ওষুধ বাজারে আমরা কখনো দেখিনি।

মহাদেবপুর উপজেলার ইশ্বরপুর গ্রামের কৃষক শরিফ হোসেন ও আলীপুর গ্রামের ইয়াসিন আলীসহ এলাকার একাধীক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, আমন ধানে পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কৃষি বিভাগের লোকজনদের মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কীটনাশক বিক্রেতাদের পরামর্শ নিয়ে ধানে ওষুধ স্প্রে করে কোন কাজ হচ্ছে না।

চকরাজা গ্রামের কৃষক সুলতান বলেন, ৪বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। প্রতি সপ্তাহে ধানে ওষূধ স্প্রে করি। আবহাওয়া কারণে মাঝ খানে একদিন ওষুধ দিতে পারিনি। দুই দিন পরে এসে দেখি পোকার আক্রমনে অর্ধেক ধান মরে গেছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ না পেয়ে। দোকানে গেছে (মানজা প্লাস, সবিক্রন, এমিস্টার টপ ফাইল ও এসিকার পাউডার) চার প্রকার ওষুধ দিয়ে স্প্রে করতে বলেন। চার বিঘা জমিতে একবার ওষুধ স্প্রে করতে ৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

শ্যামপুর গ্রামের কৃষক সজিদ কুমার সাহা ও অখিল কুমার সাহা বলেন, আমন ধানের এবার মাজরা পোকার আক্রমন এমন ভাবে শুরু হয়েছে। তিন বার ওষুধ স্প্রে করার পর পোকার আক্রমন থেকে ফসল রক্ষা করা যাচ্ছে না। আমাদের তিন ভাইয়ের দেড় বিঘা জমির ধানের আশা ছেড়েই দিয়েছি। লাগানো চাড়া সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে, নতুন করে ধানের গোড়া থেকে চারা গজিয়ে ফসল করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায় বলেন, মাজরা পোকার আক্রমন ফসলকে বাঁচাতে আমরা ধানে পারচিং করতে বলছি। লাউটিং ও ভিরতাকো জাতীয় ওষুধ স্প্রে করলে সহজেই এ পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, নওগাঁ জেলায় আমন ধানে কোথাও কোন প্রকার পোকার আক্রমন নেই। পোকার আক্রমন থাকলে কৃষককে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। কৃষি অফিসের লোকজনদের মাঠে পাওয়া যাচ্ছেনা এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন কৃষক যেন মোবাইল করে জানান তাহলে কৃষি অফিসের লোক গিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসবে।

 

আরপি/আআ-০৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top