রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


স্বপ্নের শহর মহাদেবপুর এখন অবহেলিত জনপদ


প্রকাশিত:
১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৫৩

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১৯

সংস্কার না করায় নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বেহাল। পিচ-খোয়া ওঠে স্থানে স্থানে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত

নওগাঁর দ্বিতীয় রাজধানী খ্যাত মহাদেবপুর উপজেলা শহর স্থানীয়দের এক সময়ের স্বপ্নের শহর হলেও বর্তমানে অবহেলিত জনপদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বেহাল। পিচ-খোয়া উঠে স্থানে স্থানে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। সৃষ্টি হওয়া ছোট-বড় গর্ত এড়িয়ে যানবাহন চলছে এঁকেবেঁকে।

এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারী ও গাড়ির যাত্রীদের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। এ ছাড়াও ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই শহরে প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় নওগাঁ জেলার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত মানের দু’লেন সড়ক ছিলো মহাদেবপুর উপজেলা শহরে। রাস্তায় রেলিং, ফুটপাত, সোডিয়াম লাইটসহ সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগানো হয়েছিলো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ।

বছরের পর বছর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দু’লেন সড়ক ও শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কগুলো শহরবাসীর জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয়দের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করলেও রাস্তাগুলো সংস্কারে তেমন কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের মহাদেবপুর-নওগাঁ দু’লেন সড়কের ঘোষপাড়া মোড় থেকে মাসুদ ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত কার্পেটিং উঠে গিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর ধরে এ সড়কে চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং সিএনজি-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

উপজেলা সদরের নতুন হাটের মোড় থেকে আখেড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের জায়গায় অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে কাদা-পানি একাকার হয়ে রয়েছে। খানাখন্দে পানি জমে থাকায় যানবাহন চলাচলের সময় পানি ছিটকে উঠছে। এতে বেশ কয়েকজন পথচারীর কাপড় নোংরা হতে দেখা গেছে।

শুকনো মৌসুমে তেমন কোন সমস্যা না হলেও বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। একই অবস্থা শহরের সদর ইউনিয়ন পরিষদ, ঘোষপাড়া, পোষ্ট অফিস-কলেজ পাড়া, ভূমি অফিস, পল্লী বিদুৎ, মহিলা কলেজ, বরেন্দ্র অফিস সড়কসহ অধিকাংশ সড়কের। এসব সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য বাস, ট্রাক, মাইক্রো, মটরসাইকেল, ইজি বাইক, ভ্যান ও রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহনে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।

স্কুল কলেজগামী ছাত্র ছাত্রীসহ ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এসব সড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে চলতে গিয়ে পথচারীদের যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে ঠিক তেমনি রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। শুধু স্থানীয়রা নয় মহাদেবপুর দিয়ে নওগাঁ শহরে যাওয়ার জন্য পত্নীতলা, ধামুইরহাট, পোরশা ও সাপাহার উপজেলার মানুষরাও চলাচল করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ ও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় রাস্তাগুলোর এ অবস্থা। পায়ে হেঁটে চলাচলেরও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

শহরের বাসিন্দা সাইফুর রহমান, লোকমান, আমিনুরসহ আরও অনেকেই বলেন, শহরের এই সব রাস্তা দেখে মনে হয় যে এখনও আমরা বর্বর ও আদিযুগে বসবাস করছি। যে যুগে রাস্তা-ঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না। কিন্তু একটি দেশের রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তারা আরও বলেন, মহাদেবপুর এখন উন্নয়ন বঞ্চিত উপজেলা। শহরের বিভিন্ন এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত। আসন্ন দূর্গা পূজায় এসব রাস্তা দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করবে। কিন্তু রাস্তার যে বেহাল অবস্থা তাতে দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে আমরা আশঙ্কায় রয়েছি।

ইলেক্ট্রিক ব্যাটারি চালিত চার্জার ভ্যান চালক ছবের উদ্দিন বলেন, ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় ভ্যান চালাতে গিয়ে দুই-এক দিন পরপরই নাটবল্টু নড়বড়ে হয়ে যায়। অনেক সময় নাটবল্টু খুলে পড়ে যায়। ফলে সারাদিন ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় শক্তি ক্ষয় করে যে রোজগার করি, তার একটা অংশ ভ্যান মেরামত করতেই শেষ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বক্তব্য গ্রহণের জন্য মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ধলুর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিবেদক এর ফোন রিসিভ করেননি। মহাদেবপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ বলেন, এলজিইডি’র সড়কগুলো ধারাবাহিকভাবে সংস্কার করা হবে।

নওগাঁর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক বলেন, মহাদেবপুর সদরের দু’লেন সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শুরু হবে। প্রতিনিয়ত ট্রাকের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিভাগীয় মেরামতের কাজ চলছে।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top