রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


নওগাঁ মহাদেবপুরের মেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানম


প্রকাশিত:
৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০০

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৩১

ইউএনও ওয়াহিদা খানম

নওগাঁ মহাদেবপুরের মেয়ে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম এর আদিবাড়ী রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় বাঘমারা গ্রামে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ মহাদেবপুর উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিসে চাকুরি করতেন। আর সে সুবাদে সেখানে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন তারা। ওয়াহিদা খানম উপজেলার সর্বামঙ্গলা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন।

ওয়াহিদা খানমের স্বামী মেজবাউল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত। তাদের চার বছরের এক ছেলে রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ প্রায়ই তার মেয়ের কর্মস্থল ঘোড়াঘাট বেড়াতে যেতেন। গত কয়েক দিন থেকে ধরে মেয়ের কাছেই ছিলেন তিনি।

জানা গেছে, দু’দিন আগে রংপুরের পীরগঞ্জ স্বামীর কাছ থেকে কর্মস্থলে আসেন ওয়াহিদা খানম। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে একদল দুর্বৃত্ত ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। এ সময় চিৎকারে তার সঙ্গে থাকা বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাকেও কুপিয়ে যখম করে। গুরুত্ব আহতবস্থায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে রংপুর ডক্টরস ক্লিনিকে আইসিইউতে ও তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওয়াহিদা খানমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দুপুরে রংপুুুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ বলেন, রাত ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে তাহাজ্জুদ নামাজ পরে বিছানায় শুয়ার কিছু পর মেয়ের চিৎকার শুনতে পান। মেয়ে আমাকে ডাকছিল আর বলছিল, ঘরে কেউ ঢুকেছে বাবা, দ্রুত আসো। আমি ওপর তলায় গিয়ে দেখি মুখোশধারী এক ব্যক্তি মেয়ের কাছে চাবি চাচ্ছিল। টাকা-পয়সা ও গহনা কোথায় তা জানতে চাচ্ছিল বারবার। তথ্য না দিলে আমার নাতিকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছিল ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে আমি তাকে ধরে ফেলি। এ সময় তার সঙ্গে আমার ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তখন হাতুড়ি দিয়ে আমার ঘাড়ে আঘাত করলে মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাই।

তিনি আরো বলেন, মুখোশধারী ব্যক্তি শুধু চাবি আর টাকা-পয়সা কোথায় তা জানতে চেয়েছিল। তার মুখোশ পরা ছিল বলে আমি তাকে চিনতে পারিনি। পরে শুনেছি আমার মেয়েকে কুপিয়ে জখম করা হয়। কেন এ হামলা হয়েছে তা আমি বলতে পারছি না। তবে বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙে বের হয়ে যায় ওই ব্যক্তি। তবে বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল।

ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মা নাতিকে নিয়ে বর্তমানে তিনি রংপুর সার্কিট হাউসে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে হামলাকারী। এ সময় মেয়ে বুঝতে পেরে সামনে এগিয়ে আসে। তখন মেয়ে চিৎকার করে বলেছে, আব্বা দেখেন-তো কোন বেয়াদব বাসায় ঢুকেছে। যখন গেটের কাছে এসেছে, তখন তারা বাবাকে ধরেছে। তার চেহারা দেখতে পারেনি, মুখ ঢাকা ছিল। তার সাইজ-টা খাটো। একজনই ভেতরে ঢুকেছে। জঘন্যতম এই হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ওমর আলী শেখের নিকটাত্নীয়রা জানান, বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামে ওয়াহিদার জন্ম। ওমর আলী শেখের চার সন্তান। তার তৃতীয় সন্তান ওয়াহিদা খানম দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্রাহী কর্মকর্তা। দুই বছর ধরে ঘোড়াঘাটের ইউএনও হিসাবে কর্মরত আছেন। সেখানে হামলার শিকার হন।

মহাদেবপুরবাসী শাহিদ হাসান তরফদার শাকিলসহ অনেকে তাদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তারা হলেন, হামলার খবর পেয়ে আমরা হতবাক হয়েছি। হামলাকারীদের শনাক্ত করে তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তাদের সুস্থতার কামনা করছি।

ওয়াহিদা খানমের স্বামী মেজবাউল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকারি মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

মহাদেবপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওমর আলী চাকুরির সুবাদে গত ১৫-১৬ বছর থেকে উপজেলা সদরে বুলবুল সিনেমা হল এলাকায় স্বপরিবারে ভাড়া থাকতেন। তিনি উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিস থেকে ২০১৭ সালে অবসর গ্রহন করেন।

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top