রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


মহাদেবপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে ধান রোপণ যন্ত্র ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’


প্রকাশিত:
১২ আগস্ট ২০২০ ০১:১০

আপডেট:
১২ আগস্ট ২০২০ ০৩:০৩

মহাদেবপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে ধান রোপণ যন্ত্র ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’

এগিয়ে চলছে শিল্পায়ন। বাড়ছে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট। বেশি উপার্জনের লক্ষ্যে শ্রমিকরা ঝুঁকছে নির্মাণশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায়। এ কারণে কৃষিখাতে ব্যাপক শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এ সঙ্কট মোকাবেলায় যন্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে সমান তালে।

কলের লাঙ্গল ও ধান মাড়াই যন্ত্র বহুকালের পুরানো, এ দুটি যন্ত্রের বিকল্প নেই। তবে এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’। অল্প সময়ে অধিক জমিতে স্বল্প ব্যয়ে কম বয়সী চারা লাগাতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের জুড়ি নেই।

যন্ত্রটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করনের লক্ষে নওগাঁর মহাদেবপুরে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে মিনি শাইল (রাবি ধান-১) ধানের চারা রোপণের মাঠ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের জোতহরি এলাকায় এসিআই মটরস্ এর উদ্যোগে কৃষক বিমানের এক একর জমিতে চারা রোপণ করে এ মাঠ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মকবুল হেসেনের সভাপতিত্বে মাঠ প্রদর্শনী সভায় বক্তব্য দেন উপ সহকারী কৃষি অফিসার অকিল কুমার, এসিআই মটরস্ এর রাজশাহী অঞ্চলের রিজিওনাল ম্যানেজার সামিম হোসাইন, নওগাঁর এরিয়া ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান, সিনিয়ন বিজনেজ ডেভলপমেন্ট অফিসার সুজন রহমান, এসডি এগ্রোভেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহিনুর আলম শাহিন প্রমুখ। এ সময় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সুফল সম্পর্কে কৃষকদের অবগত করা হয়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর তথ্যমতে, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র ব্যবহার করে ধান রোপণের ক্ষেত্রে কৃষকরা একাধিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায় চারা রোপণ করা যায়। একজন শ্রমিক ঘণ্টায় প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করতে পারে। যন্ত্রটি ব্যবহার করতে জ্বালানি খরচও খুব কম, ঘণ্টায় মাত্র আধা লিটার পেট্রোল প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া রয়েছে নিয়ন্ত্রিত ও নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে চারা রোপণ করার সুবিধা। নেই চারা নষ্ট হওয়ার কোন আশঙ্কাও।

তথ্যমতে আরও জানা যায়, যন্ত্রটি ব্যবহার করলে বীজতলা তৈরি করার জন্যও আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির উঠানেই বীজতলা তৈরি করা সম্ভব। বৃষ্টির মধ্যেও খুব সহজে চারা রোপণ করা যায়। অত্যন্ত কম খরচ, শ্রম ও অল্প সময়ে অধিক জমিতে চারা লাগানো সম্ভব হওয়ায় কৃষকরা যন্ত্রটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে কমপক্ষে চারজন শ্রমিককে কাজ করতে হয়। এতে করে কৃষকদের অধিক মজুরি গুণতে হয়। কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে বীজ, শ্রম ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন ব্যয়ও কমবে। বাড়বে ধানের ফলন।

উপজেলার জোতহরি গ্রামের কৃষক বিমান বলেন, কম খরচে ধান রোপণ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী এবং লাভবান হবে। জমিতে ধানের চারা রোপণ করলে শ্রমিকের খরচ যদি এক হাজার টাকা হয়, সেখানে এই মেশিন দিয়ে যদি ধান রোপণ করি তাহলে খরচ হবে ১৫০ টাকা।

এ ব্যাপারে মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন. শ্রমিক সংকটসহ বিভিন্ন কারনে ধান আবাদ করে কৃষকরা খুব একটা লাভবান হতে পারছে না। এর মূল কারন হলো শ্রমিকের মজুরি অনেক বেড়ে গেছে। এ জন্য সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, মেশিনের মাধ্যমে ধান রোপণ ও মাড়াই করলে কৃষকরা অনেক লাভবান হবে। মেশিন ক্রয়ে সরকার কৃষকদের আর্থিক সহায়তাও করছেন।

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top