রাজশাহী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


গোপন বাল্যবিয়ে প্রকাশ্যে আসতেই সাংবাদিকের বাড়িতে হামলার চেষ্টা


প্রকাশিত:
১৫ জুলাই ২০২০ ২১:১৭

আপডেট:
১৫ জুলাই ২০২০ ২১:৫৭

ছবি: সংগৃহিত

গোপন বাল্যবিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসতেই নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুল ইসলামের বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল করিম ও তার ভাগ্নে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের নিমদীঘি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে সাংবাদিক নূরুল ইসলামের প্রতিবেশী রফিকুল ইসলামের দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে জেসমিন খাতুনের (১৪) বাল্যবিয়ে দিন আবদুল করিম ও তার ভাগ্নে জাহাঙ্গীর আলম।

যুবলীগ কর্মী এই গ্রামের বাসিন্দা মৃত সোহরাব আলীর ছেলে সজিব আলীর বাড়িতে ওই বিয়ে পড়ন স্থানীয় এক মৌলভী। এর আগে ওই ছাত্রীর সহপাঠির দেয়া খবরের ভিত্তিতে কনের বাড়িতে অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়া মারীয়া পেরেরা।

ওই সময় তার সাথে থানার ওসি খায়রুল ইসলাম ছিলেন। খবর দিয়ে ডেকে আনা হয় ওয়ার্ড সদস্য শহিদুজ্জামান কাজলকে। ওই সময় ছোট মেয়েকে সরিয়ে রেখে বড় মেয়ে আলিয়ারা খাতুনকে ইউএনওর সামনে হাজির করেন রফিকুল ইসলাম।

এর আগে আলিয়ারা খাতুনও বাল্যবিয়ের শিকার হন। বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে সেদিন বাবার বাড়িতে এসেছিলেন আলিয়ারা। বাল্য বিয়ে না দেয়ার শর্তে কনের বাড়ি থেকে ফিরে যান ইউএনও। কিন্তু ওই রাতেই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাল্য বিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা।

পরে এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন আবদুল করিম ও জাহাঙ্গির আলম।এরই জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দৈনিক ইনকিলাবের উপজেলা প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ইসলামের বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালান জাহাঙ্গীর আলম ও তার পরিবারের লোকজন। আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল করিমের নির্দেশেই ওই হামলা হয়েছে।

ওই সময় নূরুল ইসলাম বাড়ির বাইরে ছিলেন। হামলাকারীরা নূরুল ইসলামের স্ত্রী রহিমা ইসলামকে হত্যার হুমকি দেন। তার বাসার খাবার পানি এবং সেচের পানি বন্ধসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসার হুমকি দেন। এই ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় সাংবাদিক পরিবার।

এবিষয়ে নূরুল ইসলাম জানান, রাতেই তিনি বিষয়টি ইউএনওকে জানিয়েছেন। তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছে এর আগে বিষয়টি তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যনাকে জানান। তিনি আইনী ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন।

অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে আবদুল করিম বলেন, এ পর্যন্ত তার সাথে আমার কোনো কথা হয় নাই । বিষয়টা তেমন কিছুই না। সেই দিন ইউএনও স্যার ফোন দিয়ে বললেন তোমাদের গ্রামে নাকি বাল্যবিয়ে হচ্ছে। পরে মেম্বারকে ফোন দিয়ে ইউএনও,ওসি এবং এসিল্যান্ডসহ মেয়ের বাড়িতে যাই।মেয়ের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চোখে পড়ি নি।

হামলার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে তিনি বলেন, তার সাথে শুধু কথা বলার জন্য তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। আপনার কাছে আমার দাবি তদন্ত করে সঠিক রিপোর্ট করেন।

এ বিষয়ে নিয়ামতপুর থানার ওসি খায়রুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে থানায় কেউ কোন অভিযোগ দেয় নি অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানতে চাইলে ইউএনও জায়া মারীয়া পরেরা বলেন, আমাকে বিষয়টি তিনি ফোনে একটু বলেছেন। এখনো অফিসিয়ালি কোনো অভিযোগ করেন নি। বিষয়টি লোকাল একে অপরকে পাল্টা-পাল্টিভাবে দোষারোপ করছেন বলে শুনেছি।

তিনি আরো বলেন,নূরুল সাহেব কাল রাতে ফোন দিলে তাকে থানায় অভিযোগ দিতে বলি। বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন।

 

 

 

আরপি / এমবি-১২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top