রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


নওগাঁয় করোনার প্রভাবে কমেছে মোকামে চাল সরবরাহ


প্রকাশিত:
৪ মে ২০২০ ১৯:৩১

আপডেট:
৪ মে ২০২০ ২০:২৫

নওগাঁর চালের বাজার

চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদিত হয় নওগাঁ জেলায়। প্রতি বছর জেলায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। জেলার প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত খাদ্য রাজধানীসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। 

উত্তরাঞ্চলের মধ্যে ধান-চালের সবচেয়ে বড় মোকাম বা বাজার নওগাঁ। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে জনবল সঙ্কটে নওগাঁর চালকলগুলোতে চাল উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে। অন্যদিকে পরিবহন জটিলতা ও হঠাৎ করে মোকামে চাহিদা কমে যাওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাল সরবরাহ আগের তুলনায় ৩০ ভাগ কমে এসেছে।

নওগাঁ জেলা চাল কল মালিক গ্রুপ এবং ধান-চাউল আড়ৎদার ও ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ জেলায় উৎপাদিত চাল দেশের বিভিন্ন জেলায় সাধারণত প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হতো। বিগত ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বে বেশ কয়েকদিন মোটা চালের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হয়েছে। চালের বাজার বৃদ্ধির সময় পর্যাপ্ত পরিমান চাল মোকামে মজুদ থাকায় চালের চাহিদা কমে গেছে। গত কয়েকদিন যাবত মোকামে চালের চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হচ্ছে।

বর্তমান বাজারে ২৮ চালের দাম ৫০ কেজির বস্তা ১৯০০-২০০০ টাকা। এটি বোরো মৌসুমে উৎপাদিত যা পূর্বে বাজারে ছিলো না। স্বর্ণা-৫ চালের দাম ৫০ কেজির বস্তা ১৮৫০-১৯০০ টাকা। যা পূর্বে ছিলো ২০৫০-২১৫০ টাকা। মিনিকেট নতুন ধানের চালের দাম ৫০ কেজির বস্তা ২১৫০ টাকা। যা পূর্বে ছিলো ২৫০০-২৬০০ টাকা। পাইজাম নাজিরশাইল চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৫০ কেজির বস্তা ২৭০০-২৮০০ টাকা।

তবে বর্তমান কক্সবাজারের উখিয়া ছাড়া দেশের কোনো মোকামে চালের চাহিদা না থাকায় দিন দিন চালের দাম অনেক কমে যাচ্ছে। মোকামে চালের চাহিদা না থাকা ও নতুন ধান বাজারে আসায় ধানের দাম কমে গেছে। এতে চালের দামও কমতে শুরু করেছে।

খুচরা বাজারে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত আটাশ চালের দাম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪১-৪২ টাকা। স্বর্ণা-৫ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা। যা পূর্বে বিক্রি হতো ৪২ টাকা কেজি। মিনিকেট নতুন ধানের চালের দাম ৪৪ টাকা কেজি। যা পূর্বে বিক্রি হতো ৫২ টাকা কেজি। পাইজাম নাজিরশাইল চালের দাম ৫৬-৫৮ টাকা কেজি। এই চালের বাজার অপরিবর্তিত রয়েছে।

মেসার্স ফারিহা রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শেখ ফরিদ উদ্দিন জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে মিলের নিয়মিত শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজে না আসায় মিলে চাল উৎপাদনের পরিমাণ কমে গেছে। এছাড়া লকডাউনের কারণে নওগাঁ থেকে অন্যান্য জেলার মোকামে চাল পাঠানোর জন্য পরিবহন সংকট হওয়ায় চাল সরবরাহ কমে গেছে। তবে ঢাকার মোকামের চাইতে কক্সবাজার উখিয়া রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আতপ চালের পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

নওগাঁ জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, নওগাঁ জেলায় ছোট-বড় মিলে মোট ৯৬০টি মিল চলমান আছে। এর মধ্যে হাসকিং ৯০৫টি ও অটোমেটিক রাইস মিল ৫৫টি। এই রাইস মিলগুলোতে নারী-পুরুষ শ্রমিক মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে থাকেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সব শ্রমিক কাজে না আসায় সকল মিল চালু করতে পারেনি মিলাররা। এছাড়া লকডাউনের কারণে ধান-চাল পরিবহন করা ব্যাপক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্নভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

নওগাঁ ধান্য-চাউল আড়ৎদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, চলমান লকডাউন এবং করোনা আতঙ্কে শ্রমিক সঙ্কটের কারনে অনেক চালকল এখনো চালু হয়নি। এরপরেও যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হচ্ছে মোকামে পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় দিন দিন চালের দাম কমতে শুরু করেছে। চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে পুরোদমে ধানকাটা শুরু হয়েছে। সাধারণত বছরের এই মৌসুমে ধান ও চালের দাম কমে যায়। দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসলে চালকলগুলো পুরো দমে চালু করা যাবে। এছাড়া সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হলে ধান চালের বাজার আবারো স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই চাল ব্যবসায়ী নেতা।

 

আরপি/ এআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top