রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


বিদ্যালয়ের আয়া পদে ১৫ লাখ টাকায় নিয়োগ!


প্রকাশিত:
১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২০

আপডেট:
১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২৩

ছবি: প্রতিনিধি

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা বিজলী দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে আয়া পদে নিয়োগ বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে সচেতন এলাকাবাসীর ব্যানারে এ কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধনে সচেতন এলাকাবাসীরা অংশ নেয়।

জানা গেছে, কোলা বিজলী দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রায় অর্ধশত বছর অলিখিতি ভাবে কোলা গ্রামের দছির উদ্দিন মন্ডল গংদের ১৩ শতাংশ জমির ওপর বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া আরো দুই শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে লিখে দেওয়া হয়।

সেসময় দছির উদ্দিন মন্ডলের চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েক মাস তাকে হয়রানির পর অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি বিদ্যালয় থেকে আবারও তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়া পদে দছির উদ্দিন মন্ডলের মেয়ে গোলাপি আক্তারকে চাকরি দেওয়ার কথা।

কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দুলাল হোসেনের স্ত্রী মুনিয়া আক্তারকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব জটিলতায় আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা প্রথম দফা স্থগিত হয়। গত শনিবার বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক এর মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আবেদনকারীদের নিকট নোটিশ পাঠানো হয়।

কিন্তু তিনি আবেদনকারী প্রত্যেকের নিকট নোটিশ পৌঁছে না দিয়ে নিপা আকতার নামে এক প্রার্থীকে তারসহ চারটি নোটিশ দিয়ে চলে আসেন।

এতে করে সোমবার (২৯ নভেম্বর) আয়া পদে পরীক্ষায় শারমিন আক্তার ও আফরিন সুলতানাসহ চারজন উপস্থিত হতে পারেনি। আবেদনকারী ১০জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন পরীক্ষায় অংশ নেয়।

জমিতাদা শরিকান গৃহবধু মাছুদা বেগম বলেন, দাতা সদস্য হিসেবে সে সময় আমার স্বামী দছির উদ্দিন মন্ডলকে বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েকমাস হয়রানির পর দোলন নামে অন্য একজনকে চাকরি দেওয়া হয়। বর্তমানে আমার স্বামী অসুস্থ ও বিছানাগত।

আয়া পদে আমার মেয়ে গোলাপি আক্তারকে চাকরি দেওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের পরিবারে চাকরি না দিয়ে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্যের স্ত্রীকে চাকরি দিচ্ছে। দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে এ নিয়োগ বন্ধের দাবী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

দাতা পরিবারের সদস্য এসএম মাহাবুব জামান অভিযোগ করে বলেন, বোনের আয়া পদে চাকরির জন্য প্রধান শিক্ষক ১০ লাখ টাকা দাবী করেন। আমরা বিদ্যালয়ের জমিতাদা কিন্তু তারপরও চাকরির জন্য টাকা দিয়েছি। এখন বেশি টাকা নিয়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ও উত্তর ওই প্রার্থীকে আগেই সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া ইউপি নির্বাচনের পরের দিন সকলে ব্যাস্ত থাকবে জন্য এই সুযোগে তারা নিয়োগ সম্পর্ন করতে চেয়েছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও চাকরি প্রার্থী মুনিয়া আক্তারের স্বামী দুলাল হোসেন বলেন, আমি হচ্ছি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। স্ত্রীর চাকরির জন্য আমি কেন টাকা দিবো। এটা একটা হাস্যকর বিষয়। ফেয়ার পরীক্ষায় নিয়োগ হবে।

বদলগাছী কোলা বিজলী দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টাকার বিনিমিয়ে যে নিয়োগের গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবেদনকারী ১০জনের মধ্যে পাঁচজন উপস্থিত হয়েছিল।

পরীক্ষায় যে ভাল করবে সেই নিয়োগ পাবে। এছাড়া চারটি নোটিশ প্রত্যেক আবেদনকারীকে না দিয়ে একজনকে দেওয়া ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।

ডিজি প্রতিনিধি ও নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলিমা আক্তার বলেন, পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ফলাফলের ভিত্তিত্বে নিয়োগ পাবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয়ের জমি দাতা পরিবারের সন্তান এসএম মাহাবুব জামান, রুবি বেগম, মামুন হোসেন, কোলা গ্রামের সাদেকুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন ও আরাফাত হোসেন।

 

আরপি/ এমএএইচ-১৮



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top