রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত নওগাঁর গাছীরা


প্রকাশিত:
২৭ অক্টোবর ২০২১ ০৯:৩২

আপডেট:
২৭ অক্টোবর ২০২১ ০৯:৪০

ছবি: রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছীরা

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক এক রকমের বৈশিষ্ট্য। তেমনি এক ঋতু হেমন্ত। শীতের আমেজ শুরু এই হেমন্তেই। শীতকালে বিভিন্ন সবজির মতো হেমন্তকালে খেজুর গাছের রস অনেক সুস্বাদু। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছের এ রস।

শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে মিষ্টি খেজুর রস আর সেই সাথে মুড়ি মিশিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে আগের মত তেমন আর খেজুর গাছ না থাকায় ও গাছীরাও গাছ থেকে রস সংগ্রহ না করায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে মজাদায়ক খেজুর রস খাওয়ার ধুম।

নওগাঁর কিছু এলাকায় এখনও গাছীরা তার আগের পেশায় খেজুর রস সংগ্রহ করেন। যা আগের তুলনায় নামমাত্র বললেই চলে। এরই ধারাবাহিকতায় হেমন্তের আগমনের সাথে সাথেই নওগাঁর আত্রাইয়ে খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রস সংগ্রহকারী গাছীরা। এখনো রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছের পরিচর্যা বা চাচ কাজেই ব্যস্ত সময় পার কেরছেন তারা।

আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু করেছেন। এক সময় এ পেশার উপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল হলেও খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় বর্তমানে রস সংগ্রহকারী গাছীর সংখ্যাও কমেছে। শুধুমাত্র যারা খেজুর রসের উপর নির্ভরশীল, মূলত তারাই এখন কেউ গাছের পরির্চযা বা কেউ রস সংগ্রহে ব্যস্ত। খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় খেজুর রসের ঐতিহ্যও দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের উপরিভাগে মাথার অংশকে ভালো করে পরিস্কার করতে হয়। সেই সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসি বা হাঁড়ি হিসেবে পরিচিত মাটির পাত্রে রস সংগ্রহ করা হয়। তবে কালের ভেদে এখন অনেক গাছী সেই মাটির পাত্রের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের জার্কিনও ব্যবহার করছেন। ছোট ও মাঝারিসহ এমনকি বিশাল বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছীদের কোমড়ে মোটা রশির দঁড়ি বেঁধে গাছে ঝুলে খেজুর গাছের পরিচর্যা ও রস সংগ্রহ করতে হয়।

প্রতিদিন বিকালে খেজুর খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিস্কার করে ছোট-বড় মাটির কলসি খেজুর গাছে বাঁধেন রসের জন্য। সাতসকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তারা। রসের মান ভালো পাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন রস সংগ্রহে বিরতি দেন।ফলে রসের স্বাদ আরো বেশি মিষ্টি হয় বলেও জানান গাছীরা।

রস সংগ্রহকারীরা কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাট বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রয় করেন। আবার কেউ কেউ রস দিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রয় করেন। গ্রামের অনেক মানুষ শীতের সকালে সু-স্বাদু এই খেজুর রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় কেনার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালী গুড়ের চাহিদা অনেক। এ রস থেকে তৈরিকৃত গুড় দিয়ে মুখরোচক খাবার,পায়েসসহ হরেক রকমের লোভনীয় পিঠাও তৈরির ধুম পড়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি। বলতে গেলে বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যের একটি অংশ এই রস। খেজুর রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষাসহ নতুনভাবে রোপনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

 

 

আরপি/এসআর-২১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top