রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


চা দোকানির মুরগির ফিডের বাকি ৫৮ লাখ টাকা!


প্রকাশিত:
৭ অক্টোবর ২০২১ ০৪:৪৬

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:৪৮

ছবি: প্রতিনিধি

জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করায় ৫৮ লাখ টাকার মামলায় ফেঁসে গেলেন নওগাঁর এক চা দোকানি। এমন মামলায় দিশেহারা তার পুরো পরিবার। মামলা থেকে বাঁচতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে এখন ঘুরছেন অন্যের দ্বারে দ্বারে।

স্থানীয়রা বলছেন চা দোকানি রাজু বা তার পরিবার কোনদিনই জড়িত ছিলেন না বড় কোন ব্যবসার সাথে।

আর আদনান এগ্রো লিমিটেড এর প্রতিনিধি বলছেন চা দোকানি রাজুকে ফাঁসিয়েছেন অন্য কোন রাজু এটি অফিসকে জানানো হয়েছে। রাজু আহম্মেদ পেশায় চা দোকানি।

সংসারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যাক্তি হওয়ায় এ চা দোকান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়েই চলে তার সংসার। করোনার কারণে দোকান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন সময় অনুদান পেতে দিতে হয়েছে তার জাতীয় পরিচয় পত্র।

আর এটিই হয়েছে তার জীবন মরণ সমস্যা। জাতীয় পরিচয় পত্রে রাজু আহম্মেদ নামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে মামুন (রাজু আহম্মেদ মামুন)। বাঁকি তথ্যগুলোর কোন পরিবর্তণ করা হয়নি।

রাজু আহম্মেদ মামুন নামের জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করে তাকে প্রোপাইটার দেখিয়ে নওগাঁ থেকে মেসার্স বাবু ট্রেডার্স নামে একটি ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাছ ও মুরগীর খাবারের ব্যবসার জন্য ঢাকা উত্তরায় আদনান এগ্রো লিমিটেড এর বিক্রয় পরিবেশক হিসেবে চুক্তি নামা সম্পূর্ণ করেন।

চুক্তি নামাতে যে ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও ১৫ বছর আগে বন্ধ হওয়া একটি গার্মেন্টস দোকানের।

ট্রেড লাইসেন্স এর সবকিছু ঠিক রেখে শুধুমাত্র পরিবর্তণ করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম। হিমু গার্মেন্টস স্থলে বসানো হয়েছে বাবু ট্রেডার্স। ব্যবসায় লেন-দেনের এক পর্যায়ে ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৫ টাকা বাঁকী রেখে উধাও হয় বাবু ট্রেডার্স।

এ বিষয়ে গত ২১ জুলাই নেত্রকোণা আদালতে আদনান এগ্রো লিমিটেড হস্তান্তর যোগ্য দলিল আইন ১৮৮১ এর ১৩৯(১) ধারায় রাজু আহম্মেদ মামুনকে আসামী করে মামলা করেন। এতে ফেঁসে যান চা দোকানি রাজু আহম্মেদ।

রাজু আহম্মেদ বলেন করোনা কালীন সময়ে চা দোকান বন্ধ থাকায় অনুদানের জন্য বিভিন্ন জায়গায় আমার জাতীয় পরিচায় পত্র দিয়েছিলাম। কে বা কারা কোথা থেকে আমার জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছেন তা আমি সঠিক বলতে পারছি না।

আর এ মামলা নিয়ে আমি কি করবো তা ভেবেও পাচ্ছি না। এ বিপদ থেকে উদ্ধার না হতে পারলে না খেয়ে মারা যাবে আমার পরিবার।

রাজু আহম্মেদের বাবা কাজেম মৃধা বলছেন, একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানের এমন বিপদে দিশেহারা পুরো পরিবার। সন্তানকে বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কিন্তু কোউ কোন সমাধান দিতে পারছেন না।

নওগাঁ ফিড ব্যবসায়ী বজলুর রহমান জানান, রাজু বা তার পরিবার কোন দিনই এমন ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন না। রাজু ফিডের ব্যবসাতো দুরের কথা এ বিষয়ে তার সাধারণ জ্ঞানও নেই।

আদনান এগ্রো লিমিটেড এর উত্তর বঙ্গ এরিয়া ম্যানেজার সাহাব উদ্দীন বলেন, চা দোকানী রাজু আহম্মেদকে ফাঁসিয়েছে অন্য কোন রাজু। এ চা দোকানি কোন ভাবেই এর সাথে জড়িত না এটি আমরা পরিস্কার হয়েছি। বিষয়টি অফিসকে জানানো হয়েছে। তবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি এ বিষয়ে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী বেলাল বলছেন, এই জালিয়াতির সাথে আদনান এগ্রো লিমিটেড এর কর্তাব্যাক্তিরাও জড়িত আছেন।

কারণ একজন ব্যবসায়ীর সাথে এতো পরিমান বঁকিতে লেনদেন করবেন তাদের সম্পর্কে জানার প্রয়োজন ছিলো। এবং জাতীয় পরিচয় পত্র যাচায় না করে কেমন করে এতো টাকার লেনদেন করেন তা আমাদেরকে প্রশ্নবৃদ্ধ করে।

 

আরপি/ এমএএইচ-১৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top