রাজশাহী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


নওগাঁয় ভাড়ার টাকার অভাবে পরিক্ষা দিতে পারেনি তারা


প্রকাশিত:
৩ নভেম্বর ২০১৯ ২১:১৮

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:২৪

ছবি: প্রতীকী

পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার ভাড়ার টাকা না থাকায় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি নওগাঁর মান্দা উপজেলার শ্যামপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, চলতি বছরে শ্যামপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে দুজন মেয়ে ও দুজন ছেলেসহ মোট চারজন জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। গতকাল শনিবার জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীই পরীক্ষা দিতে যেতে পারেনি।

উপজেলার কয়াপাড়া কামার কুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের পরীক্ষাকেন্দ্র। শ্যামপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। যেখানে আসা-যাওয়ার ভাড়া প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা। প্রত্যন্ত গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের জন্য ভাড়ার টাকা না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে দেয়নি বলে জানা গেছে।

শ্যামপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা নিজে থেকে চাঁদা দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যালয়টি ধরে রেখেছি। গত ২০১৮ সালে ৭ জন এবং ২০১৭ সালে ১২ জন জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করে। এ বছরও চারজন পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা থাকলেও তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। শিক্ষার্থীদের পরিবারের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা ভাড়া দিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। যেখানে আমরাই চলতে পারি না, সেখানে টাকা খরচ করে তাদেরকে কীভাবে পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে যাব?

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই এমপিও হওয়ার আশ্বাস পাই। কিন্তু কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত করার জন্য স্থানীয় সাংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন দফতরে জানানো হয়েছিল। এ বছরও পার হয়ে গেল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।


শহিদুল ইসলাম বলেন, এদিকে বয়সও শেষ। বলতে গেলে জীবনটাও শেষ! কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এনজিওতে যাব সে বয়সও নেই। আমার মতো অন্য শিক্ষকরা কৃষি কাজ ও ছোটখাট ব্যবসা করে খুব কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে চারটা ডাল-ভাত খেতে পারতাম। সে আশাও এখন গুড়েবালি। আগামীতে হয়তো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।

কয়াপাড়া কামার কুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব আজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন জেএসসির বাংলা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পর শুরু হয় পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি কার্যক্রম। কেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে দেখা যায় চারজন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল শ্যামপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, আমার যেটা মনে হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। শিক্ষার্থী আছে কি-না সন্দেহ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন থেকে এমপিও না হওয়ায় সঠিকভাবে চলছিল না।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হালিম বলেন, বিষয়টি জানা নেই। শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে অবগত হতে হবে। তবে প্রতিষ্ঠান থেকে কোন পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তা জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। এরপর ২০০০ সালে ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিম্ন মাধ্যমিক হিসেবে পাঠদানের অনুমতি দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৬জন শিক্ষক রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। এছাড়া একজন পিয়ন ও একজন অফিস সহায়ক রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫ জন। ৭৬ শতাংশ জায়গার ওপর সেই সময় মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে সেখানে একটি আধাপাকা ইটের ঘর, যেটা অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য টিনের বেড়া ও টিনের ছাউনির তিনটি কক্ষ রয়েছে।

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top