রাজশাহী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১


মান্দায় চুরির হিড়িক, প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশি তৎপরতা


প্রকাশিত:
১৮ জুন ২০২১ ০৩:৩৬

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ১১:১০

ফাইল ছবি

নওগাঁর মান্দায় ব্যাপকহারে চুরি বেড়েছে । কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না চোরদের এই উপদ্রব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চোরেরা চুরির জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবেই বেছে নিয়েছে এই এলাকাকে। অহরহ ঘটছে গরু থেকে শুরু করে দোকানের মালামাল, অটোরিকশা, শ্যালোমেশিন, মোটরসাইকেল ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনা। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

চলতি বছরের গত ১৩ জুন বিকেলে প্রসাদপুর দুধের বাজারের পাশে অটোরিকশা চুরি ঘটনা ঘটেছে। রোজার মাসে প্রসাদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর খাঁ-পাড়া গ্রামের রাসেলের বাড়ি থেকে গরু চুরি হয়। গত ২৭ মে রাতে উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের বালিচ গ্রামে শাহিন আলমের খামার থেকে অস্ট্রেলিয়ান জাতের দুইটি গাভী সিঁদ কেটে চুরি হয়।

২৫ মে পলাশবাড়ি বাজারে আব্দুল্লাহেল বাকির টেলিকম ও ভ্যারাইটি ষ্টোরের ছাউনির টিন কেটে দুর্র্ধষ চুরি সংঘটিত হয়। ১ মার্চ তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কুরকুচি বিলে একই রাতে ৯টি শ্যালোমেশিন চুরি হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্সে নগদ টাকাসহ প্রায় ৯ লাখ টাকার মালামাল চুরি যায়। ২১ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের চৌদ্দমাইল মোড়ে নৈশপ্রহরীকে বেঁধে ৬ দোকানের মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর গনেশপুর ইউনিয়নের কাঞ্চন পশ্চিমপাড়া গ্রামে সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেল, ১২ হাজার টাকা ও স্বর্ণের একটি চেইন চুরি যায়। ৯ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের তেপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের বাড়িতে ৩টি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়াও ওই সময় গত এক সপ্তাহে এই গ্রামে তিন পরিবারের ৭টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরেরা। ২৯ নভেম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের গোয়াল ঘরের তালা ভেঙে অস্ট্রেলিয়ান জাতের দুটি গাভী চুরি হয়েছে।

জীবনের শেষ অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। এই সংঘবদ্ধ চোরচক্রের কাছ থেকে রক্ষা পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে এতো বড় একটি উপজেলা চলতে পারে না। আমরা এখন অনেক ভয়ে থাকি কখন যে আমাদের সব কিছু চুরি হয়ে যায়। অতি দ্রুত সংঘবদ্ধ চোরদের গ্রেপ্তার করা না হলে চুরি থামবে না।

স্থানীয়রা আরও জানান, চুরির পর পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এরপর আর খোঁজ-খবর থাকে না। সাধারণ মানুষ হিসেবে আর কী করার আছে আমাদের। নিজেরা চুরি যাওয়া মালের সন্ধান করে এক সময় থেমে যেতে হয়।

স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদারকি ও টহল না থাকায় প্রায় সময় এসব চুরির ঘটনায় ঘটছে বলে জানান এলাকাবাসী।

জানা গেছে, গত ২৬.১০.২০ তারিখে অফিসার ইনচার্জ হিসেবে থানায় যোগদান করেন শাহিনুর রহমান। যোগদানের গত আট মাসে ১৫টি গরু চুরি ও দোকান ঘর ও মাঠে শ্যালোমেশিনসহ ৬টি চুরিসহ আরো চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের সঠিক তদারকি না থাকায় ও কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চুরি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোর চক্র। উপজেলাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতির দায়ভার মান্দা থানার কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না বলে সচেতন মহলের অভিযোগ ।

মেসার্স আরাফাত ট্রেডার্স এর মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চুরির হওয়ার পর থানায় অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। একজনকে পুলিশের কাছে ধরে দিয়েছিলাম। ওই চোর পুলিশের কাছে দুইজনের নামও বলেছিল, কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করেনি। এখানে পুলিশের ভূমিকা নীরব। এমতাবস্থায় এর পেছনে যদি কিছু টাকা খরচ করি সেটাও লোকসান হয়ে যাবে। এ কারণে আর সামনে এগিয়ে যাইনি।

প্রসাদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর খাঁ পাড়া গ্রামের রাসেল জানান, এ বছর ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে রোজার মধ্যে আমার তিনটি গরু চুরি হয়। এর পরেই থানায় অভিযোগ করেছি। তবে অভিযোগ করে কোনো ফল পাইনি। পুলিশও আর যোগাযোগ করেনি। যদি আবারও থানায় যাই, তাহলে একটা খরচের ব্যাপার থাকে। পরে মনে করলাম, এ বিষয়ে পুলিশের পেছনে যা খরচ করবো তাই লোকসান। যেহেতু এখনো গরু উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো কাজ করেনি পুলিশ।

বালিচ গ্রামে শাহিন আলম বলেন, গরুর চুরির হওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছিলাম, কিন্তু কোথাও পাইনি। গরু দুটির আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করেছিলাম। তিনি থানা পুলিশকে জানিয়েছিল বলে শুনেছি।

ভারশোঁ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, চুরি ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগ থানায় দেওয়া হয়, কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।

এ ব্যাপারে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, চুরি রোধ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এছাড়া এখনো চেষ্টা করতেছি। কিছু উদ্ধার করেছি এবং কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) মতিয়ার রহমান বলেন, আমাদের কাছে যে কয়টা অভিযোগ এসেছে সেসব বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধারও আছে।

 

 

আরপি/এসআর-১৬



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top