রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


স্কুলছাত্রীর শ্লীলতাহানির মূল্য ২০ হাজার টাকা!


প্রকাশিত:
১৭ জুন ২০২১ ০৫:৪৭

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:০৯

প্রতীকি ছবি

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার স্বরূপপুর নিচপাড়া এলাকায় নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে (১৫) শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা এক ব্যক্তির ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এছাড়াও শাস্তি হিসেবে তিনটি থাপ্পড় মারার হয় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে। ওই ব্যক্তির নাম খোদাবক্স (৪৪)। খোদাবক্স উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের স্বরূপপুর নিচপাড়া গ্রামের মৃত বিশুর ছেলে।

গ্রামবাসী ও সালিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুন বিকেলে ওই কিশোরী বাড়িতে নিজের কক্ষে ছিলেন। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। প্রতিবেশী খোদাবক্স বাড়িতে তাকে একা পেয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। ওই কিশোরীর চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এলে খোদাবক্স পালিয়ে যান। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর বাবা গ্রামের মাতব্বরের কাছে বিচার দাবি করেন। মাতব্বররা বিষয়টি নিয়ে গত রোববার রাতে সালিস-বৈঠকে বসেন। সেখানে গ্রামের মাতব্বর মধ্যে রাজ্জাক মণ্ডল, অভিযুক্ত খোদাবক্সের চাচাতো ভাই সেকেন্দারসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়েটির বাবা অভিযুক্ত খোদাবক্সকে তিনটি থাপ্পড় মারেন। এছাড়া সালিসে মাতব্বররা খোদাবক্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এ বিষয়ে ওই স্কুল ছাত্রীর বড় ভাই সুবিচার পাননি এমন অভিযোগ করে বলেন, ‘অভিযুক্ত খোদাবক্সের একজন অসৎ চরিত্রের মানুষ। তিন সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও এলাকার মেয়েদের প্রতি কুনজর দিয়ে বেড়ান। এর আগেও তার বিরুদ্ধে গ্রামের অন্য এক নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু গ্রামের মধ্যে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি সেবার বেঁচে যান। এবারও তার কোনো শাস্তি হলো না। তার চাচাত ভাই সেকেন্দার গ্রামের প্রধান মাতব্বর। তিনি প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের মাতব্বরদের চাপ দিয়ে আমার বোনের শ্লীলতাহানির মূল্য তিনটি থাপ্পড় ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। সেই টাকাও আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। জরিমানার টাকা সেকেন্দার মাতব্বরের কাছে রাখা হয়েছে।’

ভুক্তভোগী কিশোরীর ভাবী বলেন, ‘আমরা গরীব, তাই সালিস বৈঠকে ধর্ষণ চেষ্টার সত্যতা পাওয়ার পরেও দোষী ব্যক্তিকে উপযুক্ত সাজা দেওয়া হয়নি। বিচারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে জোর করে সাদা স্টাম্পে আমার ননদ ও শ্বশুড়ের স¦াক্ষর করে নেওয়া হয়েছে। এখন সুষ্ঠু বিচার না পাইলেও মাতব্বরদের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যেতে পারব না। কারণ এখন যদি আমরা এ ঘটনার বিচার চাইতে থানা কিংবা কোর্টে যাই তাহলে গ্রামেই থাকতে পারব না।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গ্রামের মাতব্বর ও অভিযুক্ত খোদাবক্সের চাচাতো ভাই সেকেন্দার স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সালিস বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গ্রামের লোকজনের যৌথ উদ্যোগে গ্রামের রাজ্জাক মাতব্বরের বাড়ির খলিয়ানে গত রবিবার রাতে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক আমিও উপস্থিত ছিলাম।

এছাড়া রাজ্জাক, দুলাল ও মিঠুনসহ গ্রামের আরও মাতব্বর ও লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সালিশের সিদ্ধান্তে মেয়েটির বাবা খোদবক্সকে তিনটি থাপ্পড় মারেন। এছাড়া দোষী ব্যক্তির ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বৈঠকে মাতব্বররা সবাই সিদ্ধান্ত নেই যে, জরিমানার ২০ হাজার টাকা আমার কাছে রাখা হবে এবং মেয়েটির যখন বিয়ে হবে এই টাকা তখন খরচ করা হবে। কারণ, মেয়েটির বাবা খুব গরীব। এই টাকা তাদের হাতে দিলে তা খরচ হয়ে যাবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহাদেবপুর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। আজকেই জানলাম। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরপি/ এসআই



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top