রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


অবৈধ ইটভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, নিরব প্রশাসন


প্রকাশিত:
৮ এপ্রিল ২০২১ ২০:৫৪

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০২:১৬

ছবি: জমা করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন গাছের গুড়ি

নওগাঁর মহাদেবপুরে অনুমোদন ছাড়াই সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ্য সহযোগিতায় উপজেলা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠা ইটভাটাগুলো পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর এসব ভাটা বন্ধে তেমন কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে ইটভাটা মালিকরা আরও বেপরোয়া। কিছু কয়লা রাখা হলেও কয়েকটি ভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এর ফলে একদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। অন্যদিকে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ধংস হচ্ছে তিন ফসলী কৃষি জমি।

উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের বাগডোব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের পাশেই ফসলী জমি নষ্ট করে তৈরী করা হয়েছে বিশাল ইটভাটা। চারিদিকে বোরো ধানের ক্ষেত। সেসব জমির সাথে লাগোয়া জায়গায় তৈরি কাঁচা ইট শুকানো হচ্ছে। ভাটায় কয়লা থাকলেও চারপাশে জমা করে রাখা হয়েছে হাজার মণ বিভিন্ন গাছের গুড়ি। ভাটার উপরে উঠে দেখা যায় প্রকাশ্য দিবালোকে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

সেখানে কাজ করা শ্রমিকরা জানালেন, ভাটায় আগুন জালানোর জন্য কাঠের প্রয়োজন হয়। প্রতিবার আগুন জ্বালাতে সাতশ’ থেকে আটশ’ মণ কাঠ লাগে। জানতে চাইলে তারা জানান, কাঠ পোড়ানো যে অবৈধ তা তারা জানেন। কিন্তু মহাজন সকলকে ম্যানেজ করেই এই ভাটায় কাঠ পোড়ান। মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকেরা ভাটা পরিদর্শনে আসলেও কোন অসুবিধা হয়না বলেও তারা জানান।

এই ইটভাটাটির নাম আল আমিন ব্রিকস। মালিক মহাদেবপুর উপজেলা সদরের বাসিন্দা ইউসুফ আলী। তিনি বললেন, সকলেই কাঠ পোড়ায়। তাই তিনিও পোড়াচ্ছেন। ইটভাটার কাছেই বাগডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ, বাজারসহ অনেক বসতবাড়ি। ভাটার পাশ দিয়েই চলে গেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মহাদেবপুর-ছাতড়া পাকা সড়ক। ইটভাটার জন্য সামান্য দূর থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলী জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে এনে তা দিয়েই ইট তৈরী করা হচ্ছে। প্রতিদিন মাটিবোঝাই অসংখ্য ট্রাক্টর চলাচলের ফলে সড়কটির সংস্কার কাজ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

ভাটা সংলগ্ন জমির মালিকেরা জানালেন, প্রতিবছর ভাটার কালো ধোঁয়ায় ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কিন্তু ভাটা মালিক এরজন্য কোন ক্ষতিপূরণ দেন না। এই ইটভাটা পরিবেশের মারাত্মক দূষণ করছে বলেও তারা জানান।

চাঁন্দাশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক রঞ্জু বলেন, এই ইটভাটার কোন অনুমোদন নেই। সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে চলছে এটি। তিনি অবিলম্বে এটি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। ওই ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুন নবী রিপন বলেন, অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।

মহাদেবপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও খাজুর ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, মহাদেবপুরে ১৭টি ইটভাটার মধ্যে ১০টি উন্নত ঝিকঝাক ভাটা হলেও বাকী ৭টি এখনও ফিক্সড চিমনির ভাটা। এগুলোতে জ¦ালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা প্রয়োজন হয়। কিন্তু কাঠ পোড়ানোর দায় সমিতির নয়। যারা কাঠ পোড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।

নওগাঁ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহাদেবপুরের ১৭ ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করতে পারেন না। অবৈধভাবে সবকিছু চলছে জেনেও তাদের কিছু করার নেই বলেও তিনি জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভাটা মালিক জানান, তারা বিভিন্ন সময় সরকারি, বেসরকারি, দলীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে থাকেন। তাই তাদের কর্মকান্ডে তেমন কোন অসুবিধা হয়না। তাদের মতে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশী হয়। ইটভাটা সংক্রান্ত আইন কানুন সহজ করা হলে একদিকে যেমন ব্যবসা পরিচালনা করা সহজ হবে, তেমনি সকলেই আইন মেনে চলতে পারবেন।

জানতে চাইলে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর কোন সুযোগ নেই। ইটভাটাগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রয়োজনীয় অনুমোদন না থাকলেও এই ইটভাটাটি কিভাবে বছরের পর বছর ধরে চলছে তা নিয়ে এলাকার মানুষ নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় তারা সন্দেহ পোষন করেছেন। তাদের মতে প্রশাসনের প্রকাশ্য সহযোগিতাতেই চলছে এই অবৈধ ইটভাটা। ভাটা মালিক প্রতিবছর কোটি টাকার ব্যবসায় করলেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে।

আরপি/ এসআই-১০



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top