রাস্তা ঘেঁষে ময়লার স্তূপে দুর্ভোগে এলাকাবাসী

নওগাঁ শহরের কুমাইগাড়ী বাইপাস-ডিগ্রির মোড় সড়কের পাশে পৌরসভা থেকে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আর্বজনা। আর এই ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন কোন ছোট পাহাড়। প্রতিনিয়ত সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ । দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও পথচারীরা নাক ঢেকে চলাচল করছে। বিশেষ করে অসুস্থ রুগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ময়লার ভাগাড়টি শহরের বাহিরে স্থানান্তরের দাবী এলাকাবাসীর।
অন্যদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রায় ১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিশোধানাগার নির্মাণ করা হবে। ফলে এ সমস্যা আর বেশি দিন সহ্য করতে হবেনা পৌরবাসীদের।
১৯৬৩ সালে গঠিত হয় নওগাঁ পৌরসভা। সেসময় শহরের উকিলপাড়া, মাস্টারপাড়া, পার-নওগাঁ, হাট-নওগাঁ, বাঁঙ্গাবাড়িয়া, চকদেবপাড়া, কালীতলা, ধর্মতলা এবং কাজীপাড়া পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর ১৯৮৯ সালে আরও কিছু এলাকা পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। সেসব এলাকা হচ্ছে, আরজি নওগাঁ, রজাকপুর, শেখপুরা, বোয়ালিয়া, জগৎসিংহ, খালিশকুড়ি, ভবানীপুর, সুলতানপুর, কোমাইগাড়ি, বরুনকান্দি, শিবপুর, চকবাড়িয়া ও চকরাম চন্দ্র গ্রাম। বর্তমানে পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। প্রায় ২লক্ষ মানুষের বসবাস এই পৌরসভায়।
পৌরসভার একটি মাত্র ময়লা ফেলার ভাগাড়। যা শহরের কোমাইগাড়ী মহল্লার পুরাতন গো-হাটি বা মলফেলা নামেও পরিচিত। নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে শহরের বাইপাস শীবপুর সড়কের কোমাইগাড়ী মহল্লার ছোট যমুনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। রাস্তার পূর্ব পাশে নদী। প্রতিদিন পৌরসভার কয়েকটন বর্জ্য এই ভাগাড়ে ফেলা হয়। ময়লা আর্বজনা রাস্তায় চলে আসে। আবার অনেক সময় ছোট যমুনা নদীতে গিয়েও পড়ে। বৃষ্টি হলে ভাগাড়ের ময়লা আর্বজনা রাস্তায় চলে আসে। এতে করে এই রাস্তায় চলাচলকারীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
ময়লার ভাগাড়ের আশপাশে আবাসিক এলাকা। একসময় জনসংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে তা বেড়েছে। ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধ অসুস্থ হয়ে পড়ছে বয়স্ক ও শিশুরা। প্রয়োজন হয়ে ওঠেছে ভাগাড়টি শহরের বাহিরে অন্যত্র স্থানান্তর করার।
কোমাইগাড়ী মহল্লার স্থানীয় বাসিন্দা শামিম হোসেন বলেন, প্রায় ৩বছর থেকে এখানে ময়লা- আর্বজনা ফেলা হয় পৌরসভা থেকে। এই এলাকার মানুষের খুব সমস্যা হচ্ছে। এটা পৌরসভা এলাকা শহরের মধ্যে পড়ে, এমন ময়লার ভাগাড় কিভাবে করতে পারে পৌরসভা। এটি একটি বড় ভুল সিন্ধান্ত তাদের। একদিকে দুর্গন্ধ ছাড়াচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। শহরের বাহিরে অন্যকোন স্থানে ময়লার ভাগাড় করার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ বার বার পৌরসভা কৃর্তপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন উদ্যোগ নেইনি তারা।
শারমিন সুলতানা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে ময়লা- আবর্জনা ফেলছে পৌরসভা। এটা কেমন কাজ তাদের বুঝলাম না। পৌর এলাকার মধ্যে এটা এক নাম্বার ওয়ার্ড, এখানে স্কুল,কলেজ, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা আছে। সেখানে কিভাবে ময়লার স্তুপ করতে পারে। যতদূর জানি প্রায় ৩বছর যাবৎ এমন করে ময়লা ফেলা হচ্ছে। পরিবশে দূষন হচ্ছে, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী ও পথচারিরা। দ্রুত ময়লার স্তুপ অন্যকোন স্থানে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
নওগাঁ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেন জানান, রাস্তার পাশে ময়লার বিশাল স্তুপ যেন কোন পাহাড়। অতিরিক্ত গন্ধে বমি বমি ভাব হয়ে যায়। এই রাস্তার পাশ দিয়েই কলেজে যাতায়াত করতে হয়। এই এলাকায় অনেক মানুষের বসবাস এখানে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষের বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে দুর্গদ্ধে। কেন যে এখন পর্যন্ত এই ময়লার ভাগাড় অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেনা পৌর কৃর্তপক্ষ। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কিভাবে এমন ভুল সিন্ধান্ত নিল বুঝলাম না।
নওগাঁ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) মো. মজিবর রহমান বলেন, নওগাঁ পৌরসভার প্রায় ৪০-৪৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন চারটি ট্রাক ও ১৫টি ট্রলিতে করে বর্জ্য ভরে কোমাইগাড়ী এলাকার নিয়ে ফেলে। আসলে অন্য কোন স্থানে ময়লাগুলো ফেলার আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই সেখানেই ফেলতে হচ্ছে। তবে এই স্থানের ময়লা- আর্বজনা থেকে কম্পোষ্ট সার তৈরী করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভা মেয়র নজমুল হক সনি বলেন, অন্যকোন স্থানে ময়লাগুলো ফেলার বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় কুমাইগাড়ীতে ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে। তবে পৌরসভার উদ্যোগে এই ময়লা- আর্বজনা থেকে কম্পোষ্ট সার তৈরী করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি একটি বিদেশী দাতা সংস্থা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে, পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্যরে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য পরিবহনে আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিশোধানাগার নির্মাণ। বর্জ শোধনাগার নির্মাণে ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়েছে।
মেয়র আরো বলেন, ইউজিপি-৩ প্রকল্প থেকে প্রায় ১৪ কোটির টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ডিজাইন হবে। যেখানে পচনশীল ও অপচনশীল আর্বজনা কোথায় ফেলা হবে তা আলাদা ভাবে নির্ধারন করা হবে। পচনশীল আর্বজনা থেকে কম্পোস্ট সার হবে। পাশপাশি পাড়া-মহল্লায় ভ্যান দিয়ে আর্বজনা সংগ্রহ করা হবে। অচিরেই কাজটি শুরু হবে বলে আশা করছি। পৌরবাসিকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
আরপি/এসআর-১৫
বিষয়: ময়লার স্তূপ নওগাঁ পৌরসভা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: