রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

জেলা জুড়ে মুকুলের গন্ধ, আশায় বুক বেঁধেছে চাষিরা


প্রকাশিত:
৮ মার্চ ২০২১ ০১:১৫

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৯

ছবি: আম গাছে ফুটেছে মুকুল

শীতের তীব্রতার পর আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জুড়ে অবস্থিত আমবাগানগুলোয় আম গাছে ফুটেছে মুকুল। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে ছোট বড় প্রতিটি গাছ। জাতীয় গাছ আম গাছের ডালে ডালে শোভা পাচ্ছে হলুদ আর সবুজের মহামিলন। আর তাই মুকুলের সমারোহে জেলার প্রতিটি আনাচে কানাচে বইতে শুরু করেছে পাগল করা ঘ্রাণ। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিত করছে। দেখা মিলছে মুকুলের আশপাশে মৌমাছির আনাগোনাও।

এদিকে গত বছর মহামারি করোনার কারণে হওয়া ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবার আশায় বুক বাঁধছেন এ জেলার আম চাষিরা। অনেকেই মুকুল রক্ষা করতে গাছে গাছে স্প্রে করছেন কীট নাশক জাতীয় ঔষধ। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হবে বলে ধারণা করছেন কৃষি বিভাগ।

গাছে গাছে প্রচুর মুকুল আসলেও শংকায় রয়েছেন বাগান মালিকরা। তাদের ধারণা এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে। কিš‘ অতি ঝড়-বৃষ্টি এই আশায় পানি ঢেলে দিতে পারে। তারা মনে করেন, প্রতি বছরের মতো আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। তবে মুকুল ফোটা দেখে এবার স্বপ্ন দেখছেন গত বছর ব্যাপক লোকসানে পড়া আমচাষিরা।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা গ্রামের আম চাষি রহমত শেখ বলেন, গত বছর মহামারি করোনার কারণে আমে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পাঠাতে না পেরে বাগানেই নষ্ট হয় যায় বিপুল পরিমাণ আম। এমনকি সার, কীটনাশক প্রয়োগ করার খরচ পর্যন্ত ওঠেনি গত বছর।

এদিকে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আম বাজারজাতকরণে এ বছর প্রাণঘাতী করোনার প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন আমবাগানে কর্মরত শ্রমিকরা। তারা এ সময় বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত। তাই মুকুলের সমারোহ দেখে তারাও আনন্দিত। এ বিষয়ে বাগান শ্রমিক জানে আলম বলেন, এ বছর মুকুল দেখে খুব আনন্দ লাগছে। আশা করা যায় ভালো ফলন হবে। মালিক যেমন লাভবান হবেন, আমরাও এ বছর পারিশ্রমিক একটু বেশিই পাবো। সারা বছর অপেক্ষায় থাকি আমের মৌসুমে তিন মাস কাজ করার জন্য। কিš‘ গত বছর কাজ করতে পারিনি। তাই উপার্জণও হয়নি আশানুরুপ।

আমের আড়তদার মো. সুমন জানান, এখন পর্যন্ত সবকিছুই অনুকুলে রয়েছে। গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুল এসেছে। গত বছর ব্যবসা খারাপের কারণে বাকি রয়েছে আড়ৎঘরের ভাড়া। এ বছর তা শোধ দিতে পারবো। আশা করছি এ বছর ফলন যেমন বেশি হবে, তেমনি দামও বেশি পাওয়া যাবে।

এসব বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, জেলা ঘুড়ে যা দেখেছি তাতে জেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ আমগাছে মুকুল এসেছে। আর চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে। আমের ভালো ফলনের বিষয়ে আমচাষিদের নিয়ে মাঠ দিবস, উঠান বৈঠক, সভা-সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন সময় পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছত্রাকনাশক কীটনাশক ব্যবহারে স্প্রের পরিমাণ, ফলন অথবা গুঁটি বাঁধার সময় কিংবা মার্বেল আকৃতি হবার সময় মোট তিনবার স্প্রে দেবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে হপার পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য। এ ছাড়া আমচাষিদের দুই মাস অন্তর আমগাছের পাশে সার দেয়ার জন্য উপ-সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার জন্যও যে কোন সময় যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জেলায় ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

আরপি/ এসআই-২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top