রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

হারিয়ে গেছে বিলভাতিয়ার জলজ উদ্ভিদ


প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২১ ২০:৩২

আপডেট:
২৪ মে ২০২১ ২০:৪১

ছবি: ডানে পূর্বের ও বামে বর্তমান বিলভাতিয়া

কানায় কানায় পানিতে ভরা যৌবনে থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার দেশের ২য় বৃহত্তম বিল বিলভাতিয়া। প্রায় ১৯ হাজার বিঘার বিল ভাতিয়া জলজ উদ্ভিদ, দেশীয় মাছ, জলজ প্রাণীসহ বৈচিত্রময় এই বিলকে ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আবহাওয়ার বৈশ্বিক পরিবর্তন ও আমাদের অবিবেচনা প্রসূত, লাগামহীন ভূ-গর্ভস্থ্য পানি ব্যবহারের ফলে এই বিশ্ব যেমন উষ্ণ ও অবাসযোগ্য হচ্ছে। তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং পৃথিবীর জলজ ও স্থলজ নানা প্রজাতি পড়ছে মারাত্মক হুমকিতে। ফলে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য জীববৈচিত্র।

এই বিলে জন্মাতো প্রচুর প্রাকৃতিক দল ঘাস। জমির উর্বতার বৃদ্ধির জন্য ভোদ ও ভেদর। পদ্ম, শাপলা, শালুক, চাকা, মাখনা সিংগারা, ভ্যাট ইত্যাদী। দল বেঁধে আসে নানা বর্ণের দেশী বিদেশী পাখি। মানুষ আর পশু পাখির কল কাকলিতে ভরে থাকতো এই ভাতিয়ার বিল। কিন্তু হারিয়ে গেছে সেই সৌন্দর্য্য। হারিয়ে গেছে পানি। বিলভাতিয়া আজ কঙ্গল পড়ে আছে। যৌবন যৌলুস কিছুই নেই। চেনার উপায় নেই বিলভাতিয়াকে।

যেখানে থাকতো থৈ থৈ পানি ও পদ্ম। হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসতো সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। সে জায়গায় নেই আজ এক ফোঁটা পানিও। পদ্ম গাছের মরদেহ শুকিয়ে পড়ে আছে। প্রচন্ড দাবদাহে মাটি ফেটে বিলের চারে দিক করছে হাহাকার। শুকনা বিলের কোথাও নেই ঘাস।

ঘাসের সন্ধানে গরু নিয়ে ছুটে চলা ১৫ বছরের রাখাল বালক রবু। তাকে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে বিলভাতিয়ার কথা জানতে চাইলে রাজশাহী পোস্টকে বলেন, যে জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছি এখানে পদ্ম ফুটে থাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগে। আমরা গরু চরাতে এসে পদ্ম চাকা, ফুল তুলে নিয়ে যেতাম। বাহির থেকে প্যান্ট শার্ট পরা মানুষ এসে নৌকায় চড়ে পদ্মচাকা তুলতো। ছবি তুলতো। অনেকেই পিকনিক বা বিাড়িতে খানা দিলে পদ্ম পাতা তুলে নিয়ে যেতো। আজ এ জায়গাটা শুকিয়ে আছে। পদ্মচাকার গাছগুলো মরে গেছে। চেনায় যায় না এখানে পদ্মচাকার গাছ ছিলো।

এদিকে মাঠে আসা কৃষক সহিমুদ্দিন জানান, ভাইত্যাতে পানি নেই। প্রচন্ড তাপে শুকিয়ে সব জায়গাতে ফাঁটল ধরেছে। যার কারণে পদ্মচাক্কা,শাপলা, শালুক, চাকা, মাখনা সিংগারা, ভ্যাটসহ নানা প্রকার জলজ উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভোলাহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান জানান, দিনের পর দিন মানুষ মাটি কেটে ভরাট করে আবাদি জমির তৈরী করা এবং স্লুইচ গেট শিবগঞ্জ উপজেলার মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের ইচ্ছে মত পানি বের করার কারণে বিলভাতি পানি শূন্য হয়ে যায়। তিনি বলেন, সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে যদি দীঘি তৈরী করে তবে পানি সংরক্ষিত হলে কৃষি, জলজ উদ্ভিদ ও দেশী মাছ পাওয়া যাবে।

এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রাজশাহী পোস্টকে বলেন, জলজ উদ্ভিদ ফিরে পেতে হলে দেশের ২য় বৃহত্তম বিল বিলভাতিয়ার উপর সরকারকে ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। খনন করে পানি ধরে রাখলে জলজ উদ্ভিদকে বাঁচানো যাবে সেই সাথে কৃষি ফসল উৎপাদনে কৃষকের পানি সমস্যা দূর হবে।

 

 

 

আরপি/এসআর-০৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top