রাজশাহী রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১


‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনে লোকসান অর্ধকোটি টাকা


প্রকাশিত:
১৩ জুলাই ২০২৪ ২২:১৬

আপডেট:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৫:২৪

ফাইল ছবি

ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলা ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনের লোকসানের হিসাব। চলতি মৌসুমে মাত্র পাঁচদিন চললেও ট্রেনের ব্যয়ের পরিমাণ ছাড়িয়েছে অতীতের সমস্ত রেকর্ড। নানা অভিযোগ ও সমালোচনার পরও ট্রেনটির চালু নিয়ে শুরু থেকেই শেষ ছিল না বিতর্কের। রেলের পক্ষ থেকে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের কথা বললেও মাত্র ৭ দিনেই লোকসান গুণতে হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। সঠিক পরিকল্পনা ও আন্তরিকতার অভাবেই ব্যবসায়ীরা ট্রেনটিতে আস্থা হারিয়েছেন বলে মত সংশ্লিষ্টদের।


রেলওয়ের তথ্যমতে, চলতি বছর পাঁচ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন করা হয়েছে ১৮ হাজার ১৪৬ কেজি। এতে রেলের আয় হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪৫ টাকা। কুরবানি উপলক্ষে একই ট্রেনে দুই দিনে পশু পরিবহন করা হয় ১০৫টি। এতে রেলের আয় হয়েছে ৯২ হাজার ৮২০ টাকা। অর্থ্যাৎ এক সপ্তাহে ম্যাংগো স্পেশাল ও ক্যাটল ট্রেনে মোট আয় হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ১৬৫ টাকা।তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে ও আসতে দৈনিক খরচ হয়েছে ১০ লাখ ২৩ হাজার ৮৪০ টাকা। অর্থাৎ সাতদিনে ট্রেনটিতে মোট খরচের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা। আর এতেই রেলের লোকসান হয়েছে ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫ টাকা।

এদিকে পরিসংখ্যান বলছে, ট্রেন চালুর প্রথম বছর ২০২০ সালে ৪৭ দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯ কেজি। এতে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা, ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ৪৯ দিনে ট্রেনটি আম পরিবহন করেছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা, ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সবশেষ ২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন ১৮ দিনে আম পরিবহন করেছে ১২ লাখ ৭ হাজার কেজি। এতে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫০২ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৬২হাজার টাকা। অর্থ্যাৎ গত চার বছরে রেল আয় করেছে ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৪০ টাকা। যেখানে রেলের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। দিন শেষে রেলের লোকসান ১ কোটি ৮২ হাজার ৮৬০ টাকা। গত ৪ বছরে সেখানে এক কোটি টাকা লোকসান করেছে রেল। সেখানে চলতি বছর যাত্রাপথ বাড়ায় মাত্র ৭ দিনেই লোকসান হয়েছে অর্ধকোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে লাভজনক এই সেবা খাতটি লোকসানে পরিণত হচ্ছে। নেই আধুনিক সেবা, এমনকি পরিকল্পনা নিয়েও অসন্তোষ ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও আম পরিবহনে বিলম্ব ও মান ঠিক না থাকা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। আম পাঠানো ও গ্রহণের ক্ষেত্রেও পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। আর তাই ট্রেনের পরিবর্তে কুরিয়ারেই আগ্রহী সকলেই।

জানতে চাইলে বাঘার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রতি বছর দেশের বাইরে আম রপ্তানি করেন। সে কারণে আমের মান সবচেয়ে ভালো রাখতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতভাবে নিয়ে যেতে হয়। তবে ট্রেনে এসি লাগেজে আম পাঠানো গেলে মান ভালো থাকে। রাজশাহী থেকে সরাসরি সিলেট ও চট্টগ্রামে আম পরিবহনের সুযোগও নেই। ফলে ট্রেনের চাইতে কুরিয়ারেই বেশি ভালো হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি মতিউর ইসলাম বলেন, বাগান থেকে সরাসরি আম ট্রাকে করে ঢাকায় যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু ট্রেনে আম নেওয়ার জন্য স্টেশনে আসতে হয়। সেখান থেকে আম আবার স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আড়তে আম নিতে হয়। আবার এখানেও স্টেশনে গিয়ে আম দিয়ে আসতে হয়। এতে ওঠানো-নামানোসহ পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যায়। অনেক স্টেশনে রোদে ও বৃষ্টিতে আম ফেলে রাখা হয়। প্রতিটি স্টেশনে আম রাখার সুব্যবস্থা থাকলে ও ঢাকায় হোম ডেলিভারি চালু করা গেলে চাষীদের ট্রেনে পরিবহনে আগ্রহ বাড়তে পারে।

এদিকে ট্রেনটিকে জনপ্রিয় করতে রাজশাহীতে এসেছিলেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। ট্রেনে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ ফেরাতে অংশীজনদের নানা পরামর্শও নেন তিনি। চালানো হয় বিশাল প্রচার প্রচারণাও। তবে এত কিছুর পরও পাঁচ দিনের বেশি আম পরিবহন করতে পারেনি ট্রেনটি। এমনকি দুই দিন পশু পরিবহণেও মিলেনি তেমন সাড়া।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, রেলের লোকসানের কারণ হচ্ছে লোকজন আমাদের মাধ্যমে ম্যাংগো নেয় নি। আমাদের উপর বিশ্বাস রাখে নি। তারা ভেবেছে সড়কপথে সহজে নিয়ে যাবে। যখন কারো কিছুর একটা অভ্যাস হয়ে যায় সেখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে যায়, এটাই মূল কারণ। এখন যদি কেউ না আসে সেক্ষেত্রে আর কী করতে পারি। আমরা তো প্রচারণা ভালোই করলাম।

 

 

আরপি/জেডএফ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top