রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

বায়োফ্লকে স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শফিক


প্রকাশিত:
৩০ নভেম্বর ২০২০ ২০:৫০

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৬

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আদনান শফিক

আদনান শফিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। পড়াশুনা প্রায় শেষ প্রান্তে। চাকরির পিছনে না ছুটে হতে চান উদ্যোক্তা। বেছে নিয়েছেন স্বল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ পদ্ধতি বায়োফ্লক। বায়োফ্লকে স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তির পর থেকেই মনে মনে স্বপ্ন বুনতে থাকেন উদ্যোক্তা হবেন। ক্যাম্পাস জীবনের বছর দুয়েক না পেরুতেই শুরু করেন পরীক্ষামূলক সবজি চাষ। প্রথমেই ব্রকলি চাষে সফলতা পান তিনি। এরপর আলু, মূলা, কপি, পালং, ড্রাগনসহ প্রায় ১০-১২টি সবজির টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছেন প্রায় ৪০ হাজার লিটারের ৩টি বায়োফ্লক ট্যাংক। দিনে দিনে রাজশাহীর সিলিন্দা এলাকায় শাহাদত, ওবাইদুল্লাহকে সাথে নিয়ে স্বপ্নের চারাগাছ বড় করছেন এই তরুণ। অন্য দু-জন চাকরির কথা চিন্তা করলেও শফিক হতে চান উদ্যোক্তা।

আদনান জানান, নতুন করে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করার কিংবা পুকুরে মাছ চাষ অনেকটাই আশঙ্কাজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কখন কি হয় বলা যায় না। তাছাড়া খরচ, উৎপাদন কম। বেশ কয়েক বছর ধরে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রযুক্তি বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে কোনো পুকুর, খাল-বিল কিংবা নদী-নালার প্রয়োজন হয় না। বরং অল্প জায়গায় ইট-সিমেন্ট দিয়ে ট্যাংক কিংবা ত্রিপল দিয়ে ঘের তৈরি করে টানা কয়েকবছর মাছ চাষ করা যায়। আয়ও করা যায় উল্লেখযোগ্য। এ ধারণা থেকেই মাছ চাষে আগ্রহ হয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার আনোয়ারখালি গ্রামের আব্দুল মতিনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে আদনান শফিক। প্রথবস্থায় ইউটিউবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরামর্শ নেন এক মাছচাষি বড় ভাইয়ের কাছে। হাতে কলমে মাছ চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তাঁর কাছে। এবার প্রশিক্ষণ শেষে পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ের লক্ষ্যে প্রথম এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন।

ভাড়া বাসায় থাকতেন নগরীর ডাবতলা এলাকায়। সেখান থেকেই পাশের ফাঁকা জমি লিজ নেন সবজি চাষ ও মাছ চাষের জন্য। ২০২০ সালের শুরুর দিকে তিনটি ট্যাংকসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করেন তিন বন্ধু। টিউশনি আর পরিবার থেকে সামান্য টাকায় কঠোর মনোবলে নেমে পড়েন কৃষিকাজ ও মাছ চাষে।

তিনি জানান, খুব সহজেই যে কেউ অল্প পুঁজিতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। একটি ট্যাংক ১৮ হাজার, আরেকটি ১৫ হাজার এবং আরেকটি ছোট ৭-৮ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। এ পদ্ধতিতে মাছের জন্য খাবার খুব কম দিতে হয়। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের উচ্ছিষ্ট এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে তা পুনরায় মাছকে খাওয়ানো যায়। এতে খাবারের খরচ অনেক কমে যায়। মাত্র ৬০০-৭০০ গ্রাম খাবার খাইয়ে এককেজি মাছ উৎপন্ন করা যায়। অথচ এককেজি মাছ উৎপাদনে খরচ হয় ৮০-৯০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, মাছ চাষে সফলতা পেলে এই প্রজেক্ট আরো বড় আকারে কয়েকজনকে নিয়ে এগিয়ে যাব। শুরুতে সামান্য টাকা হলেও বন্ধু-বান্ধবরা সাহস করেেত পারছেন না। পরে হয়ত অনেককেই পাওয়া যাবে।

চাকরি নয়, বায়োফ্লকে স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শফিক। এরকম শিক্ষিত তরুণদের মাছ চাষে স্বাবলম্বী এবং সুবিধা বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মৎস্য মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভজনক। তবে আমাদের জেলা-উপজেলাতে অনেকেই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। অনেকে না জেনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাছের চাষ শুরু করেছেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক কিছু বিষয় আছে যা জানা জরুরি। না জেনে মাছ চাষ শুরু করে লোকসান খেয়ে বায়োফ্লককেই দায়ী করছেন। আসলে এটি খুবই লাভজনক একটি পদ্ধতি।

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top