রাজশাহী সোমবার, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫শে ভাদ্র ১৪৩১

রাজশাহীর পাঁচ ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা


প্রকাশিত:
২০ আগস্ট ২০২৪ ১৫:১২

আপডেট:
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৪:৪৪

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

নানা সমালোচনার মধ্যেই চলতি বছরের শুরুতে নির্মাণ কাজ শুরু হয় রাজশাহীর পাঁচ ফ্লাইওভার। হয়েছে পাইলিং ও মাটি পরীক্ষার কাজও হয়েছে প্রায় সব গুলো ফ্লাইওভারের। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে সব রকমের কার্যক্রম। যন্ত্রপাতি গুটিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার ও নির্মাণ শ্রমিকরাও। আর এতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজশাহী নগরীর এই মেগা প্রকল্প। হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের কাজ হুট করে বন্ধ হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও সিটি কর্পোরেশনের দাবি, সরকার পতনের ফলে নির্মাণ কাজে কোনো সমস্যা হবে না।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, ‘সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্যাকেজে নগরীতে পাঁচটি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের ফ্লাইওভারে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কোর্ট স্টেশন রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৫২১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের ফ্লাইওভারে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর রেলক্রসিংয়ে ৮৯৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ভদ্রা রেলক্রসিংয়ে ৫২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের ফ্লাইওভারে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এছাড়াও নগরীর বর্ণালী সংলগ্ন বন্ধ গেট এবং নতুন বিলসিমলা রেলক্রসিং পর্যন্ত ১ হাজার ২৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থের ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহীর সবগুলো ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য বন্ধ রাস্তাগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে যান চলাচলের জন্য। গত কয়েকদিন আগেও এসব রাস্তা বন্ধ রাখা হয় পাইলিং ও মাটির মান যাচাইয়ের অযুহাতে। দিন-রাত সংলগ্ন এলাকায় টুং টাং শব্দে চলতো নির্মাণ কাজ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাসিকের সবচেয়ে বড় বাজেটের এই কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ভারি মেশিনপত্র সরিয়ে নিয়েছে। কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হবে তা বলতে পারছেন না নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও।

এদিকে নির্মাণ এলাকার সড়ক জুড়ে এখন খানা খন্দে ভরা। চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে এসব সড়ক। কোনো কোনো সড়কে রয়েছে বড় বড় গর্তও। হঠাৎ কাজ বন্ধ হওয়ায় প্রকল্প নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয়রাও। বিপাকে পড়তে হয়েছে পথচারী, অটো চালক ও সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকরাও। নির্মাণযজ্ঞ দ্রুত শেষ করে চলাচলের উপযোগী করারও দাবি তাদের।

রাজশাহী নগরীর বিলশিমলা এলাকার বাসিন্দা রিক্তা খন্দকার। তিনি বলেন, এই এলাকাটা অনেক সুন্দর ছিল বলে এই এলাকায় বাড়ি নিয়েছি। তবে গত ৩ মাস থেকে এই রাস্তায় চলাচল করাই যাচ্ছে না। একটু বৃষ্টি হলেও পানি জমে যাচ্ছে, কাঁদা হচ্ছে। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতেও কষ্ট হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভেবেছিলাম কাজ দ্রুত শেষ হবে। এখন দেখছি নির্মান কাজ বন্ধ। কবে শেষ হবে, কবে যে আমরা এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবো সেটাও জানি না। আমাদের দাবি কাজ দ্রুত শেষ করে আগের পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

নগরীর বহরমপুরের দোকানী মিলন রহমান বলেন, আমার পাশের দোকানে কালাইয়ের রুটি বিক্রি হতো। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা বিক্রি হতো। তবে রাস্তায় কাজ চলায় এখানে মানুষ আসে না। রুটি বিক্রিও অনেক কমে এসেছে। আমার দোকানেও বিক্রি অনেক কমেছে। এখন ভাড়া তোলায় দায়। আমাদের দাবি দ্রুত কাজ শেষ করা হোক।

এবিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, যারা এই প্রকল্পে নির্মাণ করছিল সেই সব ঠিকাদারই বাহিরের। যখন দেশের পরিস্থিতি খারাপ হয় তখন তাদের অনেক কিছুই লুটপাট হতে থাকে। ভয়ে তারা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে রাখেন। এর ফলে এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে। আমরা তাদের দ্রুত কাজে ফিরতে বলবো। তারা কাজ শুরু করতে চাই। এখন পুলিশও ফিরেছে। নিরাপত্তাও পাওয়া যাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মজিদ এন্ড সন্স, মীর আকতার, ডেনকো ও স্টান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (SEL) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলেও জানান প্রধান প্রকৌশলী।

তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডেনকোর ঠিকাদার টুটুলসহ একাধিক ঠিকাদারকে ফোন দিলেও তাদের পাওয়া যায় নি। ফলে তাদের বক্তব্যও পাওয়া যায় নি।

 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top