রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

স্বচ্ছলতার স্বপ্ন যখন নেট কারখানায়


প্রকাশিত:
২৭ নভেম্বর ২০২০ ০২:০৪

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৩৭

টার্কি আর কোয়েল ফার্মের লোকসানে পিছিয়ে পড়ে অনেক কারখানায় ঘুরে চাকরি পাননি নুরল ইসলাম। সমাধানের পথ খুঁজে না পাওয়া সমস্যাও মাথায় ভনভন করে ঘুরতে থাকে তার। এসব সমস্যা নিয়ে দুই বন্ধুর মুখোমুখি আলাপচারিতায় বাড়তে থাকে ঘনিষ্ঠতা। স্বাবলম্বী হতে তারা গড়ে তুলেন মিনি কারখানা। তবে কাজের অভিজ্ঞতা জানা থাকলেও পুঁজি ও মেশিন সঙ্কটের কারণে কারখানা আরম্ভ করার পূর্বেই যেন থমকে যেতে হয়েছে তাদের। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কথা ভুলে পরিশেষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় যেন দৃঢ় প্রত্যয়ী দুই বন্ধু নুরল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম।

ঋণ করে ১টি মেশিন কিনে বাঘা পৌরসভার বানিয়াপাড়ায় জান্নাত আলীর বাড়ি সংলগ্ন মার্কেটে দুই মাস আগে পাঁচশ’ টাকার ছোট্ট একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে জিআই তার দিয়ে নেট তৈরির মিনি কারখানা চালু করেন তারা। এতে দুই হর্স পাওযারের ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স মটর আর জিআই তার কেনা দিয়ে মোট খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আবারও শুরু করেন। বেকার জীবনে স্বচ্ছল হওয়ার স্বপ্নে তাদের পথচলা। কারখানার নাম দেওয়া হয় ‘বাঘা নেট ঘর’। শুরুতেই ব্যাপক সাড়া মেলে তাদের কারখানায় জিআই তারের তৈরি নেটের। হাঁস-মুরগির খামার, বাগানসহ বিভিন্ন জমিতে বাঁশের বেড়ার পরিবর্তে এই জিআই তারের তৈরি নেট সেখান থেকে কেনা শুরু করেন ওইসব মালিকরা। কারখানায় পার টাইম কাজ করে ৭ থেকে ১০ জন বেকার যুবক। সাইজ ভেদে তাদের প্রতিজনকে দেওয়া হয় ১ থেকে ১০ টাকা ফুট হিসেবে। ১ থেকে ৪ ইঞ্চি দূরুত্বের নেট তৈরি করা হয় ওই বাঘা নেট ঘরে। বিভিন্ন সাইজের তৈরি নেট বিক্রি হয় ৮ থেকে ৩০ টাকা ফুট হিসেবে।

উদ্যোগক্তরা জানান, প্রতিদিন স্বয়ার ফিট হিসেবে ৪ থেকে ৫ হাজার নেট তৈরি করা সম্ভব। যার বিক্রয় মূল্যে দাঁড়াবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ দঁড়াবে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। তবে সেই লক্ষ্যে এখনো পৌঁছাতে পারেননি তারা। পুঁজির অভাবে অটো মেশিন কিনতে পারছেন না। যার দাম ৪ লক্ষ টাকা। তাই সহজ কিস্তিতে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা পেলে তাদের কারখানাটি হয়ত এক সময় অনেক বড় হবে। আর এখানেই কর্মহীন ১০ থেকে ১৫ মানুষ কাজ করে নিজেরাই নিজেদের পুনর্বাসিত করতে পারবেন।

বুধবার (২৫ নভেম্বর) সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দুই বন্ধুর একজন মেশিন চালাচ্ছে আরেকজন তারের বান্ডিল থেকে মেশিনে তার ধরিয়ে দিচ্ছে। আর নেটের কাজ করছে অন্যরা। এদের একজন বাঘা পাবলিক ক্যাডেট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র জাহিদ। সে জানায়, অবসর সময়ে গ্রামে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। করোনাকালীন ছুটিতে স্কুল বন্ধ আছে। তাই প্রাইভেট পড়ার খরচ যোগাড়ে কাজ করছে সে। প্রতিদিন আয় করছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। তার এ টাকা অস্বচ্ছল সংসারে উপকারে আসছে।

নুরল ইসলাম জানান, কাজের সন্ধানে তারা ঝিনাইদহ যান। সেখানে গিয়ে তাদের এই কাজটি চোখে পড়ে। ভাবলেন বাঘা উপজেলায় নেট তৈরির কারখানা নেই। কাজটি শুরু করলে চলবে। সেই চিন্তা থেকে স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুই হর্স পাওয়ারের ইলেকট্রনিক্স মর্টার মেশিন কেনেন। আর নিজেদের কাছে থাকা টাকা দিয়ে নেট তৈরি মেশিন ও জিআই তার কিনে একটি ভাড়া দোকানে কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজের অর্ডারও পান তারা।তাদের প্রত্যশা স্বপ্ন পূরণে আর বেশী দেরি নাই।

 

আরপি/এসকে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top