রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

৯ জোড়া ‘ঈদ স্পেশাল’ ট্রেন, একটিও ভাগে পেল না রাজশাহী


প্রকাশিত:
২৮ মার্চ ২০২৩ ২১:৪২

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩৪

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

প্রতিবারের মতো আসন্ন ঈদুল ফিতরেও ঘরমুখো যাত্রী চাপের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের ঈদে নয় জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে। তবে সেই স্পেশাল ট্রেনের একটিও পাচ্ছে না রাজশাহী।

শুধু রাজশাহীই নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের আওতাধীন অন্য দুই বিভাগীয় শহরের (রংপুর ও খুলনা) কেউই পায়নি বিশেষ ট্রেন। শুধুমাত্র রেলমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা পঞ্চগড় ও ঢাকা-চিলাহাটি রুটে দুইটি বিশেষ ট্রেন চলবে। 

সোমবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রেল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক ও সচেতন সমাজের প্রতিনিধিরা। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে বারবার এমন বৈষম্যের নিন্দাও জানিয়েছেন তারা। দাবি জানিয়েছেন অবিলম্বে এই বিশেষ ট্রেন চালুর। অন্যথায় শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহী থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অন্যান্য চাকরিজীবীদেরও নিরাপদ ঈদ যাত্রা হুমকিতে পড়তে পারে বলে মত তাদের।

এ বিষয়ে জানতে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খানের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। শিক্ষানগরী হিসেবে এই ট্রেনের ব্যবস্থা যদি না নেয় তাহলে বৈষম্য করছে। রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্যান্য অফিস-আদালতের যারা এখানে চাকরি করে তাদের জন্য অবশ্যই এই বিশেষ ট্রেন দেওয়া উচিত। যদি এই ট্রেন না দেওয়া হয় তাহলে রাজশাহীর মানুষের সঙ্গে বৈষম্য করবে তারা। আমি এই ব্যবস্থার নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। সঙ্গে অবিলম্বে একটা বিশেষ ট্রেন চালুর জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজশাহী সবসময় একটা ভালো ভূমিকা রাখে। সুতরাং রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে যারা দায়িত্বে আছে, তাদের প্রতি একটা আহ্বান রাখছি, অবিলম্বে শুধু এই ট্রেন না অন্যান্য বিষয়েও যে বৈষম্য হয় সেগুলো তারা বিবেচনা করবে। তা না হলে কেন এই বৈষম্য বারবার রাজশাহীর মানুষ বহন করবে? এটা তো হতে পারে না। বিভিন্ন দলের রাজশাহীর কেন্দ্রীয় নেতা যারা আছেন তাদের জায়গা থেকে এই ভূমিকাটা পালন করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, রাজশাহীতে ঈদ স্পেশাল ট্রেন না থাকার বিষয়টি এখনও কনফার্ম না আমি। যদি এই রুটে ট্রেন না দিয়ে থাকে তবে অবশ্যই দুঃখজনক। কেননা রাজশাহী অঞ্চলের প্রচুর লোকজন চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকে। এই সুযোগটা যদি তারা না পায় তাহলে রেল পশ্চিমাঞ্চলের জিএম ব্যর্থ। এতো বহুল প্রচলিত ট্রেন কেন রাজশাহী রুটে থাকবে না? উনি ট্রেন না দিয়ে থাকলে রাজশাহীবাসীর সঙ্গে চরম অন্যায় ও প্রতারণা করবেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, রাজশাহী তো এখন অবহেলিত ও বঞ্চিত নগরী। সমগ্র উত্তরাঞ্চলই বঞ্চনার শিকার। গত ২০ বছরে আমরা যদি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের হিসাব ধরি, মেগা প্রকল্পের হিসাব ধরি, একনেকে গত ২০ বছরে যতো প্রকল্প পাশ হয়েছে তা যদি জেলাভিত্তিক বন্টন করা হয়, দেখা যাবে সবচেয়ে অবহেলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাঞ্চলের এইসব জেলা। এটা একটা বঞ্ছনার শিকার, অন্যতম কারণ হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে একতা নেই। একতাবদ্ধ হয়ে তারা এলাকার উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করে না। কাজেই রেলের যে ঘটনা তার চেয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।

জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখানকার জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি দায় বদ্ধতার অভাব। তারা সেইভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারে না। আরও বেশি সংখ্যক রেল চালু হওয়া দরকার, রাস্তার যোগাযোগ আরও উন্নত হওয়া দরকার। বড় বড় লেন হয়ে যাচ্ছে, সারাদেশের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন দূর অঞ্চলের যোগাযোগে বিপ্লবী পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু রাজশাহীর যোগাযোগটা ক্ষীণ হচ্ছে, রেলের ব্যাপারেও নজর নেই। অনেক নব্য ধনী হয়েছে তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে এয়ারপোর্টের উন্নয়ন, মানুষের প্রতি তাদের অবহেলারই নজির। অবিলম্বে এই বিশেষ ট্রেন আরও বেশি করে করা দরকার, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপটা দরকার।

রেলমন্ত্রীর নিজ এলাকায় ঈদ স্পেশাল ট্রেনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনাকে একটা ধন্যবাদ দিতে হয় যে, উনি উনার অবহেলিত এলাকার ট্রেন যোগাযোগটা উন্নত করছেন, এটা ভালো, হোক। কিন্তু রাজশাহী একটা বিভাগীয় শহর, এখানে তো অবহেলিত হতে পারে না। বিশেষ ট্রেন থাকা উচিত।

এ ব্যাপারে রেল পশ্চিমাঞ্চলের জিএম অসীম কুমার তালুকদারের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে রেল পশ্চিমাঞ্চলের জন্য দুইটি স্পেশাল ট্রেন বরাদ্দ হয়েছে। একটি পঞ্চগড় ও অন্যটি চিলাহাটি-ঢাকা রুটে চলবে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে কোনো বিশেষ ট্রেন থাকছে না।

বিশেষ ট্রেন না রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি যাত্রীর ডিমান্ডের ওপর নির্ভর করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমাদের কাছে ডাটা আছে, কোন জায়গায় যাত্রী বেশি যাচ্ছে, সেটা রিসার্চ করা হয়, কোন এলাকার লোক বেশি উপকৃত হবে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজশাহী-ঢাকা রুটে তো চারটা ট্রেন, চারটাই ইন্টারসিটি। ঈদে এসবে একটা-দু’টা করে কোচ বাড়ানো হবে বলেও উল্লেখ করেন রেল কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ রাজধানীর রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন ঈদে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এমপি। সেই সিদ্ধান্তে বিশেষ ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেট, ভৈরব বাজার, কিশোরগঞ্জ, পঞ্চগড় ও চিলাহাটি রুটে চলবে। এছাড়া অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য মোট ২১৮টি (পূর্বাঞ্চল ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ১০২টি) লোকোমোটিভ ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

 

 

আরপি/এসআর-১০



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top