পরিবহন ধর্মঘট, ট্রেনই ভরসা যাত্রীদের

সড়ক আইন সংশোধন ও অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে সমগ্র রাজশাহী বিভাগে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে পড়েছেন বাসযাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাস চলাচল বন্ধ থাকায় শেষ ভরসা হিসেবে ট্রেনের দিকেই ছুটছেন যাত্রীরা। আসন না পেলেও যে কোনো উপায়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন যাত্রীরা। পুরো স্টেশন এলাকায় দিনভর যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি।
টিকিট কাউন্টারগুলোতে প্রায় সারাদিনই ছিল দীর্ঘ লাইন। রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রী চাপ ছিল অনেক বেশি। আসন ও খাবার বগির পাশাপাশি নামাজ রুমেও গাদাগাদি করে বসে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন অলি আহম্মেদ (৬২)। তিনি জানান, রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় আটক ট্রাক ছাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম থেকে গত শনিবার রাজশাহী এসেছিলেন তিনি। তার গাড়ি থেকে গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় ড্রাইভার, গাঁজা ব্যবসায়ীসহ ৩/৪ জন সবাই ছাড়া পেয়েছে, শুধু গাড়ি আটকে আছে। গাড়ি ছাড়ানোর জন্য আরও একবার আসতে হবে বলেও জানান তিনি।
চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ের এই ব্যবসায়ী বলেন, গত শনিবার রাজশাহী বাসে আসায় অনেক সময় সাশ্রয় হয়েছে। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। তাই বাসে যেতে পারলাম না। নয়তো এতক্ষণে আমি ঢাকা পার হয়ে যেতাম।
তিনি আরও বলেন, তারা বাস চলাচল বন্ধ রাখায় আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বাস বন্ধ থাকায় আমার ব্যবসারও ক্ষতি হলো। এখন বাধ্য হয়ে ট্রেনে যাচ্ছি, সিট ছাড়াই টিকিট কাটতে হয়েছে। উপায় নেই, যেতে তো হবে!
রাজশাহী নগরীর কোর্ট বাজার এলাকার মামুনও ঢাকায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্টেশনে। তিনি বলেন, বাস বন্ধ থাকায় অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ট্রেনের টিকিট পাইছি, তবে সিট ছাড়াই। কিন্তু কিছুই করার নেই, ব্যবসার কাজে জরুরি ঢাকায় যেতেই হবে। বাস না থাকায় ট্রেনই ভরসা।
রাজশাহীর পাশের জেলা নাটোরের লালপুর থেকে স্বামী-বাচ্চা ও বোনসহ রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন শিমু আক্তার নামের এক গৃহবধূ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাটোরের লালপুর থেকে রাজশাহীর দূরত্ব খুবই কম। আমরা ডাক্তার দেখাতে নাটোর না গিয়ে রাজশাহীতেই আসি। বাসে হলে খুব বেশি সময়ও লাগে না। কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় আজ ট্রেন ছাড়া উপায় নেই।
স্বামী আমাদের রেখে টিকিট কাটতে গিয়েছেন, মনে হয় টিকিট পাইলেও সিট পাবে না আজকে। অন্য দিনের তুলনায় আজ স্টেশনে অনেক বেশি মানুষ। আর টিকিট লাইনও অনেক দীর্ঘ। সিট পাই আর না পাই কষ্ট করে হলেও বাসায় ফিরতে হবে বলে জানান এই গৃহবধূ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আমাদের ট্রেন শিডিউল অনুযায়ীই চলছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ট্রেনের উপর চাপ বেশি থাকবে। তবে টিকিট ছাড়া বা স্ট্যান্ডিং টিকিট ছাড়া আমরা কাউকে ভ্রমণ করতে দিবো না।
এছাড়াও ট্রেনের ছাদে বা অন্যত্র দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে কাউকে উঠতে দেওয়া হবে না। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট ছাড়া যাত্রীদের আমরা ডিসচার্জ করবো। সর্বোপরি সুন্দর ও নিরাপদ ট্রেন ভ্রমণ উপহার দিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বদ্ধপরিকর বলে জানান এই রেল কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করা, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে থ্রিহুইলার, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ও জ্বালানি তেলসহ যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাস করাসহ ১১ দফা বাস্তবায়নে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেন রাজশাহী বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এর প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে বিভাগজুড়ে।
আরপি/এসআর-০৯
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: