রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

সিঁদুর রাঙ্গা মুখে দেবীকে বিদায়


প্রকাশিত:
৬ অক্টোবর ২০২২ ০৫:২৩

আপডেট:
৬ অক্টোবর ২০২২ ০৬:০১

ফাইল ছবি

‘ধান-দূর্বার দিব্যি, ফের এসো মা/মা তুমি আবার এসো’—যেন ভক্তদের এমন আকুতিতেই বিদায় নিলেন দেবী। ভক্তদের আনন্দ-অশ্রুতে সিক্ত হয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের মতো বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবী দুর্গার ঘুম ভাঙানোর বন্দনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হলো আজ বিজয়া দশমীতে।

বাবার বাড়ি বেড়ানো শেষে কৈলাসে দেবালয়ে ফেরার সময় হলো আনন্দময়ী দেবী দুর্গার। আর তাই তো ভক্তকূলকে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানিয়ে ফিরলেন অসুর দোলনী দেবী দুর্গা। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরলেন দেবী। বছর ঘুরে আবারও তার ভক্তদের মাঝে পিতৃগৃহে ফিরবেন বলে আশা ভক্তদের।

বুধবার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই বিহিত পূজার পর ভক্তের প্রার্থনা, ঢাক, ঢোল, কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি আর শঙ্খনিনাদে হিন্দু রমণীদের পরম কাঙ্খিত সিঁদুর খেলায় মুখরিত হয়ে ওঠে মন্ডপগুলো। একদিকে বিদায়ের সুর আর অন্যদিকে উৎসবের আমেজ সব মিলিয়ে নতুন মাত্রা পায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের এই উৎসবটি।

ভক্তরা বলছেন, অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সকল অপশক্তির বিনাশ হয়। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের দশমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহীত পূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি।

নিয়মানুসারে ঢাকের তালে তালে দেবী দুর্গাসহ কার্তিক, গণেশ, স্বরস্বতীসহ অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতিমাগুলো সাত পাক ঘুরিয়ে নৌকায় তোলা হয়। কিছুক্ষন নৌভ্রমনের পর মাঝ পদ্মায় বিসর্জন দেওয়া হয় দেবী দূর্গাকে। সবশেষে বিকেল থেকে শুরু হয় বিসর্জনের মূল আয়োজন।

তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী জেলায় সর্বমোট ৪৫৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে মহানগর এলাকার ৭৫টি ও জেলার ৯ উপজেলায় ৪৫১টি মণ্ডপে উদযাপিত হলো দুর্গোৎসব। নগরীর ৭৬টি মন্ডপের প্রায় সবগুলো প্রতিমাই বিসর্জন দেওয়া হয় পদ্মার নদীর বিভিন্ন ঘাটে। আর জেলা পর্যায়ের মণ্ডপ বিসর্জন দেওয়া হয় স্থানীয় নদী কিংবা জলাধারে।

দুর্গোৎসব উদযাপনের অনুভূতি জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী প্লাবন কুমার বলেন, ‘দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব৷ প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ভক্তরা অত্যন্ত ভক্তি আর শ্রদ্ধার সাথে তা পালন করেছে৷ রাজশাহীতে অনেক সুন্দরভাবে এবারের দুর্গাপূজা পালিত হয়েছে৷ পাশাপাশি বিশেষ করে প্রশাসনের ভূমিকা ও সহৃদয়তা ছিল অনন্য৷’

এখন পর্যন্ত (বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত) ৮/৯টি মন্ডপের প্রতিমা পদ্মা নদীর মুন্নুজান ঘাটে বিসর্জন দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর প্রায় সবগুলো প্রতিমাই মুন্নুজান ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপি মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম  বলেন, নগরীর ৯৫টি মণ্ডপে অনেকটা আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে নগরীতে পূজা উদযাপিত হচ্ছে। নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে ২৭টি পুলিশের ও দুইটি গোয়েন্দা পুলিশেরসহ মোট ২৯টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। প্রতি ৩/৪টি মণ্ডপে একটি করে মোবাইল টিম নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, পূজাকে ঘিরে সিটিএসবি, ডিবি, নৌ-পুলিশ ও সিআরটি সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি নগরীজুড়েও ৫০০ সিসিটিভি ক্যামেরা চলমান রয়েছে, যেগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বিসর্জন স্থলের আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায় নি। খুবই সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপন হচ্ছে। পুরো নগরীকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা।

আরপি/ এসএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top