রাজশাহী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রিল্যান্সিংয়ে বদলে গেছে মোস্তাকিমের ভাগ্য


প্রকাশিত:
১৪ নভেম্বর ২০২১ ০৩:৩৯

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ০১:৪২

ফাইল ছবি

ঘরে বসেই বিদেশি সব চাহিদার কাজ সম্পন্ন করছেন। কাজের বিনিময়ে পাচ্ছেন অর্থ। তবে এই অর্থ দেশের টাকা নয়। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা রূপে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই আয় বদলে দিয়েছে বেকার মোস্তাকিম জনিদের ভাগ্য। ঘরে ফিরেছে স্বচ্ছলতা।

শুধু মোস্তাকিম জনি একা নন। শুধু গুরুদাসপুরেই তার মতো প্রায় হাজারখানেক যুবক এভাবেই ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে শত শত ডলার আয় করছেন। মোস্তাকিম জনির বাড়ি গুরুদাসপুরের সীমান্ত নাছিয়ারকান্দী গ্রামে।

মোস্তাকিম জনি জানালেন, শুরুতে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লি-কেশনের ওপর ক্লাস নিতেন। কিন্তু তাতে দিনাতিপাত হচ্ছিল না। একারণে আয়ের বিকল্প চিন্তা ঘিরে ধরে। সেসময় নতুন করে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের মতো কাজ তিনি রপ্ত করেন। এরপর পর ২০১৭ সালে শুরু হয় তার ফ্রিল্যান্সিং জগতের কর্মজজ্ঞ।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করে মোস্তাকিম জনি সফল হয়েছেন। ঘুঁচেছে সংসারের অভাবও। এখন সংসারের চাহিদা পূরণ করে তিনি নিজের লেখা-পড়ার খরচের যোগানও দেন এই আয় থেকেই। মোস্তাকিম জনি বর্তমানে চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদরাসায় মিসকাতে পড়াশোনা করছেন। তবে সরকারিভাবে সহায়তা পেলে তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য বড় ইন্সটিটিউট গড়তে চান।

মোস্তাকিম জনির বাবা লোকমান হোসেন জানালেন, তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তিনি পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন । এলাকায় কোকারিজের ব্যবসা করলেও বয়সের ভারে এখন পারছেন না ওই ব্যাবসা করতে। কিন্তু ওই সীমিত আয়ে তিন ছেলের লেখা-পড়া এবং সংসারের খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য ছিল।

তবে মেঝ ছেলে মোস্তাকিম জনি কওমি মাদরাসায় লেখাপড়া করলেও ফ্রিল্যান্সের মাধ্যমে আয় শুরু করেন। মূলত তার পর থেকেই সংসারে অভাব দূর হতে থাকে। মোস্তাকিমের ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থে তারা এখন সাবলম্বি।

গুরুদাসপুরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সহকারি প্রোগ্রামার মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, তাদের অফিসের হিসাবমতে- গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১ হাজারের বেশি শিক্ষিত যুবক ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যপক পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন।

আগামী এক বছরে ফ্রিল্যান্সার বৃদ্ধি পাবে অধিক হারে। তবে সরকারিভাবেও এসব ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি নতুনদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার জন্য উৎসাহি করতেও কাজ করা হবে।

আরেক ফ্রিল্যান্সার আবু সাঈদ জানান, ছোট অফিসে তার অধিনে অন্তত ২০ জন তরুণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত রয়েছেন। মূলত বিদেশিদের দেওয়া চাহিদার ভিত্তিতে তারা ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলোপমেন্ট, গ্রাফিক্স, কিওয়ার্ড রিসার্চ, এসইও, সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং, গুগল অ্যানালাইটিকসহ নানা ধরণের কাজ করে থাকেন। কয়েক ঘন্টার কাজে প্রতিটি চাহিদায় নূণ্যতম ১০০ ডলার আয় হয়। এই আয়ে যেমন বেকারত্ব দূর হচ্ছে তেমনি দেশের রেমিট্যান্সও বাড়ছে।

গুরুদাসপুরের সরকারি বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার জানান, গুরুদাসপুরের বহু যুবক এখন ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করে বেকারত্ব দুর করছেন। চাকরির পিছনে ছোটাছুটি না করে শিক্ষিত যুবকরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

আরপি/এসআর-০৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top