রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

‘পদ্মায় সব ডুইব্যা শ্যাষ, থাকি মানুষের বারান্দায়’


প্রকাশিত:
২২ আগস্ট ২০২১ ০৬:৩২

আপডেট:
২২ আগস্ট ২০২১ ০৬:৪৩

পদ্মার পাড়ে জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছেন মহরমি বেগম। ছবি: রাজশাহী পোস্ট

“পদ্মা নদীর পানিতে সবকিছু ডুইব্যা (ডুবে) শ্যাষ (শেষ)। কিছু জিনিস সরিয়েছি, তবে বাকিগুলো সরাতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের আক্রমণ। নদীতে ভাইস্যা (ভেসে) গেছে অনেক জিনিসপত্র। চার দিন ধরে কীভাবে আমাদের রাত কাটছে, এক উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না। কখনো নদীর পাড়ে, কখনো রাস্তায়, কখনো মানুষের বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে কোনোমতে রাতটুকু থাইকছি (থাকছি)”- শুক্রবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজশাহী পোস্টকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী নগরীর কেঁদুর মোড় এলাকার মহরমি বেগম।

গত মঙ্গলবার পদ্মা নদীতে ডুবে গেছে তার বাড়িঘর। সংসারে রয়েছেন স্বামী রতন আলী। তবে তিনি সাত বছর আগে দৃষ্টিশক্তি হারান, অন্ধ হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেন না। ফলে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন মহরমি নিজেই। প্রায় ১৫ বছর ধরে বাচ্চাদের চকলেট, পটেটো ও চানাচুর বিক্রি করে উপার্জিত টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। মাঝেমধ্যে অন্যদের বাড়িতে থালাবাসন পরিষ্কার করেন। কাজে খুশি হয়ে কেউ চাল ও শাকসবজি কিছু দিলে দুমুঠো খাবার খেয়ে কোনোমতে সংসার চলে তার।

বাচ্চাদের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করতেন বাড়ির পাশেই একটি খুপরি ঘরে। সেটিও চলে গেছে পদ্মাগর্ভে। সবকিছু হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন মহরমি। পরিবারে তিন মেয়ে ও এক শিশু পুত্র নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে তার। সহায় সম্বল হারালেও কয়েক প্যাকেট পটেটো ও চানাচুর সরাতে পেরেছিলেন আগেই। দু‘পয়সা পাওয়ার আশায় সেটি নিয়েই বসেছেন পদ্মার পাড়ে।

বাচ্চাদের কাছে জিনিস বিক্রি করছেন মহরমি বেগম। ছবি: রাজশাহী পোস্ট

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক প্যাকেট চানাচুর, পটেটো ও চকলেট নিয়ে পদ্মার তীর ঘেঁষে ডুবে যাওয়া বাড়িটির পাশে বসে আছেন মহরমি বেগম। শিশুরা এসে সেগুলো কিনছে এবং নদীর পাশে অবুঝ মনে আনন্দ করছে। তবে টাকা গুনে কাপড়ের ভেতরে রাখছেন তিনি এবং অপলক নয়নে মাঝেমধ্যেই তাকিয়ে দেখছেন ডুবে যাওয়া বাড়িটি।

এ সময় কথা হয় মহরমি বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামী অন্ধ হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব তাকেই নিতে হয়েছে। তিন মেয়ের বিয়ে দিলেও এক মেয়ের স্বামী খারাপ হওয়ার কারণে তাকে এখনো দেখাশোনা করতে হয়। একমাত্র শিশুপুত্র বাপ্পী, এক মেয়ে ও অন্ধ স্বামী এবং তার পেটের আহারের ব্যবস্থা তাকেই করতে হচ্ছে বিগত ১৫ বছর ধরে। কিন্তু পদ্মায় সব শেষ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।

মুর্ছা যেতে যেতে মহরমি বলেন, পানিতে সবকিছু ডুইব্যা গিয়ে ভাইস্যা ব্যাড়াচ্ছি। এখনো কেউ কোনো খাদ্য দেয় নি। একপোয়া চালও পাইনি। অসুস্থতার কারণে ভারি কোনো কাজকাম করতে পারি না। বাচ্চাদের এসব খাবার বিক্রি করে সংসার চলত। কিন্ত যেখানে বিক্রি করতাম ওই ঘরটাও ডুবে গেল। মনে খুব কষ্ট। বাসায় অন্ধ স্বামী আছে। তিন মেয়ে, এক ছেলে। কীভাবে যে বেঁচে আছি! কেহু কোনো কিছু সাহায্য দেয় নি।

স্থানীয়রা জানান, খুব কষ্ট করে সংসার চালিয়ে আসছেন মহরমি বেগম। তবে পদ্মায় বাড়িঘর ডুবে গিয়ে বেশ কষ্টে দিতনাতিপাত করলেও এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো ধরণের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে নি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা ত্রাণ কর্মকতা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা প্রদানে আমরা সবসময় প্রস্তুত। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী দেয়া শুরু হয়েছে। অসহায়দের খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতা করা হবে।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top