রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

নাচোলে প্রশাসনের নামে টাকা আত্মসাৎ, দিশেহারা পরিবার


প্রকাশিত:
২২ জুলাই ২০২০ ০২:০৪

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২৫

প্রতারক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নামে টাকা উঠিয়ে রামরাজত্ব চালাচ্ছে এক প্রতারক। এই প্রতারকের কবলে পড়ে নিঃস্ব অসহায় হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগি পরিবার গুলো। এই কথিত প্রতারকের বিরুদ্ধে নাচোল থানায় এক সপ্তাহ আগে ভুক্তভোগি পরিবার একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং রাঁতের আধাঁরে প্রতারকের বাসায় পিকনিক করে রফাদফা করে বিষয়টি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগি পরিবারগুলো।

অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে,গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরি পাইয়ে দিবে বলে নাচোল উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম একই এলাকার আব্দুর রশিদের বাড়িতে যাই। আশরাফুল ইসলাম আব্দুর রশিদকে বলেন,তোমার ছেলে যেহেতু দেখতে সুন্দর,মাপযোগ ঠিক আছে সেহেতু সেনাবাহিনীর মেজরকে লক্ষাধিক টাকা দিলে তোমার ছেলে মাসুম রেজার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরি হয়ে যাবে।

আব্দুর রশিদ ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বসবাসের শেষ জায়গা টুকু বিক্রি করে প্রথম ধাপে প্রতারক আশরাফুল কে ৫০হাজার টাকা দেয় আখিলা গ্রামের জাকারিয়ার সম্মুখে। চলতি বছরের জানয়ারি মাসের দিকে চাকুরি নিশ্চিত হয়ে যাবে সেনাবাহিনীর মেজরকে সম্পূর্ণ টাকা দেওয়ার কথা বলে আবারো একলক্ষ বিশ হাজার টাকা মাসুম রেজার বাবার কাছে থেকে নেয় প্রতারক আশরাফুল।

জানুয়ারি মাসের দিকে মাসুম রেজার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরি হওয়ার কথা ছিল প্রতারক আশরাফুলের কথা অনুযায়ী। কিন্তু জানুয়ারি মাসে মাসুম রেজার চাকুরি করে দিতে না পারায় প্রতারক আশরাফুল ইসলামের কাছে টাকা ফেরৎ চায় মাসুম রেজা। প্রতারক আশরাফুল মাসুম রেজার বাবা আব্দুর রশিদ কে জানায় টাকা তো সেনাবাহিনীর মেজর কে দিয়েছি। টাকা ফেরৎ দিতে সময় লাগবে। এভাবে মাসুম রেজার বাবা কে টাকা ফেরৎ দিবো বলে হয়রানি করতে থাকে আশরাফুল।

ভুক্তভোগির বক্তব্য অনুযায়ী, এবার প্রতারক আশরাফুল ইসলাম এর নতুন কৌশল অবলম্বন করে। টাকা ফেরৎ দিবেনা বলে গত ৩ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুর রশিদের বাড়িতে একটি গাঁজার ব্যাগ নিয়ে যাই আশরাফুল। সুকৌশলে গাঁজার ব্যাগটি আব্দুর রশিদের বাড়িতে রেখে দেয় প্রতারক আশরাফুল। সেই দিন সন্ধ্যায় আশরাফুল আব্দুর রশিদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবার সময় টাকা ফেরৎ দিতে পারবো না বলে সাফ জানিয়ে দেয় রশিদ কে।

পরের দিন অথাৎ ৪ জুলাই দুপুরে আব্দুর রশিদের বাড়ি তল্লাশি করে নাচোল থানা পুলিশ ১(এক) কেজি গাঁজা সহ আব্দুর রশিদের স্ত্রী কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরের দিন ৫ জুলাই ভোর ৫টার দিকে প্রতারক আশরাফুল নতুন প্রতারনার কৌশল অবলম্বন করে আব্দুর রশিদের আপন ভাই একই এলাকার আকবর আলীর বাড়িতে যাই।

প্রতারক আশরাফুল ইসলাম আব্দুর রশিদের ভাই আকবর আলীকে জানায়, তোমার ভাইয়ের স্ত্রীর মামলা হালকা করার জন্য নাচোল থানার ওসি এবং তদন্ত ওসি হান্নান সাহেব কে টাকা লাগবে বলে আকবর আলীর কাছে থেকে সেদিন প্রথমে ৪২হাজার টাকা গ্রহন করে আশরাফুল। পরের দিন আবার ৬ জুলাই সকাল ১০টায় আব্দুর রশিদের স্ত্রীর মামলার তদন্ত কাজের জন্য তদন্ত ওসির নাম করে প্রতারক আশরাফুল আকবর আলীর কাছে ২৫ হাজার টাকা গ্রহন করে।

এর পর আকবর আলীর ভাই আব্দুর রশিদের স্ত্রী কে যাতে রিমান্ডে না আনে সেই লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের কথা বলিয়া আকবর আলীর কাছে আবারো ৩০ হাজার টাকা গ্রহন করে।

কিন্তু পরবর্তীতে আকবর আলী খোঁজখবর নিয়ে বুঝতে পারে যে,প্রতারক আশরাফুল ইসলাম কোন জায়গায় টাকা দেয়নী। এমনকি ভাতিজার চাকরি পাইয়ে দিতে ব্যার্থ হয় আশরাফুল ইসলাম। সেই লক্ষ্যে আকবর আলী প্রতারক আশরাফুল ইসলামের কাছে তাদের পাওনা টাকা চাইতে গেলে আকবর আলী কে প্রাননাশের হুমকি দেয়। ১২জুলাই আকবর আলী আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ এনে নাচোল থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করে।

ঘটনার এখানেই শেষ নয়,গত ৩ বছর পূর্বে নাচোল উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে মোহাঃ নাসরুজ জামান (তারেক) কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকুরি করে দিবে বলে সেনাবাহিনীর জনৈক মেজর মিঠুর নাম করে প্রায় ৮ (আট ) লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় আশরাফুল।

চাকুরি না হওয়ায় পরে ভুক্তভোগি তারেক আশরাফুলের কাছে টাকা চাইতে গেলে উল্টো তারেককে র‌্যাবের কাছে ক্রশ ফায়ারে দিবে বলে হুমকি দেয়। বিষটি নিয়ে ২০১৭ সালে নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের অফিসে একটি সালিশ হয়।সালিসে টাকা ফেরৎ দেওয়ার প্রতিশ্রতি দেন প্রতারক আশরাফুল। কিন্তু ভুক্তভোগি এখনও টাকা না পাওয়ায় নায্য বিচার থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগি আব্দুর রশিদ জানায়, আমি কিংবা আমার পরিবার কখনো মাদকের সাথে জড়িত নয়।আমাদের নামে থানায় কোন অভিযোগ ও ছিলনা কারো। আমার ছেলের সেনাবাহিনীতে চাকুরি দেওয়ার নাম করে প্রতারক আশরাফুল এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা নেয়। আমার শেষ আশ্রয়স্থলটুকু বিক্রি করে তাঁকে টাকা দিয়েছিলাম। সে এখন পর্যন্ত কোন টাকা দেয়নি বরং আমাদের বাসায় গাঁজার ব্যাগ রেখে আমার স্ত্রী কে পুলিশে ধরিয়ে দেয় সে। আমি প্রশাসনের কাছে নায্য বিচার দাবি করছি।

এ বিষয়ে আকবর আলী জানান,প্রতারক আশরাফুল ইসলাম আমার ভাইয়ের স্ত্রীর মামলা হালকা করার জন্য বিভিন্ন কথা বলে নাচোল থানার ওসির নাম করে আমার কাছে থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। আমি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোন সুরহা পাইনি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগি নাসরুজ জামান জানান,প্রতারক আশরাফুল ইসলাম সেনাবাহিনীতে চাকুরি দিবে বলে আমার কাছে ৩ বছর আগে ৮লক্ষ টাকা নেয়। সে সালিসে টাকা দিবে বলে প্রতিশ্রতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোন টাকা ফেরৎ আমাদের দেয়নি। প্রতারক আশরাফুল ইসলাম আমার জীবন টাই নষ্ট করে দিয়েছে।আমি এখন বেকার হয়ে বাড়িতে রয়েছি।

এ বিষয়ে আশরাফুল ইসলামের সাথে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নং ০১৭৮৯৯০১২২৪ তে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নি।

এ বিষয়ে নাচোল থানার ওসি সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

আরপি/আআ-২৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top