রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

ভোলাহাটে গণমাধ্যমের ফাঁদ পেতেছে প্রতারক চক্র


প্রকাশিত:
৫ জুলাই ২০২০ ২২:২০

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩৯

ছবি: প্রতারক চক্র

শিক্ষাদীক্ষা থাক আর না থাক গণমাধ্যমের ফাঁদ পেতে একটি অসাধু চক্র নিজেদের বড় মাপের সাংবাদিক পরিচয়ে সরকারী গণমাধ্যম আইনকে তোয়াক্কা না করে নানা অপকর্মের জড়িয়ে জাতির ৪র্থ স্তম্ভকে কলংকিত করছে একটি সংঘবদ্ধ অসাধু চক্র।

বলা হয়ে থাকে সাংবাদিকেরা জাতির আয়না। সমাজের নানা দিক তুলে ধরে সমাজ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করবে সাংবাদিক। কিন্তু গণমাধ্যমের সরকারি নিয়ম তোয়াক্কা না করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ৩য় শ্রেনি ও এইচএসসি পড়ুয়া অল্প শিক্ষিতরা প্রিন্ট, অনলাইন পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক, ইউটিউব টেলিভিশনের চেয়ারম্যান, ক্রাইম রিপোর্টারসহ একাধীক পত্রিকার বিভিন্ন পদ ধারণ করে জাঁদরেল গণমাধ্যম ব্যক্তি সেজে প্রতারণার ফাঁদ পেতে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপদেষ্টার পদ ব্যবহার করে প্রতারণার সুযোগ পাকাপোক্ত করে চলেছে। অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে গণমাধ্যম শত্রু অসাধু চক্রের ভয়াবহ চিত্র।

মিজানুর- ভোলাহাট উপজেলার ধরমপুর গ্রামের বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃপক্ষ ভোলাহাট জোনে দক্ষ শ্রমিক কলিমুদ্দিন কালুর ছেলে বর্তমান এইচ এসসি পরীক্ষার্থী মিজানুর রহমান। সরকারী গণমাধ্যম আইনকে তোয়াক্কা না করে চলতি মাসের ১৫ মে সাপ্তাহিক দেশ চিত্র নামের একটি প্রিন্ট পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটিতে কোন নিয়ম না মেনে একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী কোর্ট-টাই পরে নিজ ছবি ব্যবহার করে সাপ্তাহিক দেশ চিত্রের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দেশ চিত্র টিভির চেয়ারম্যান পদবী দিয়ে সারা দেশের প্রতিনিধি বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় সংবাদদাতা ও বিজ্ঞাপনদাতা নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।

এছাড়াও তিনি প্রেস সোসাইটি ( সাংবাদিকদের কল্যাণে নিয়োজিত) জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক সংগঠনের সভাপতি, ভোলাহাট উপজেলার হেল্প লাইনের প্রচার সম্পাদক, দৈনিক বিশ্ব মানচিত্রের স্টাফ রিপোর্টার, কচিকাঁচার বার্তার নির্বাহী সম্পাদক, সুন্নি সমাচারের রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান, দৈনিক তারুণ্যের আলোর বার্তা সম্পাদক, আমাদের জামালগঞ্জের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান, জিনিয়াস বাংলা টিভির ভোলাহাট প্রতিনিধি, পল্লীশক্তি বার্তা ডটকমের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, সাপ্তাহিক দেশ চিত্রকে পরবর্তীতে অনলাইন হিসেবে নিলেও প্রকাশক, সম্পাদক অফিসের ঠিকানা পরিবর্তনের মহাৎসবে মেতে উঠেন। মন চায়লেই পরিবর্তনের ঝড় তুলেন। পত্রিকার নাম পরিবর্তন করাও সময়ের ব্যাপার। সাপ্তাহিক দেশ চিত্র থেকে দৈনিক দেশ চিত্র (অনলাইন), দৈনিক থেকে দৈনিক সাহিত্য দেশ চিত্র। প্রকাশক সম্পাদক পরিবর্তনেও হিড়িক ফেলে দেন এ চক্রটি। কখনো নিজে প্রকাশক সম্পাদক আবার কখনো এ চক্রের অন্যকে প্রকাশক তৈরী করে ফেলেন।

এবার অনুসন্ধানের চোখ পড়ে তার কখিত পত্রিকার ঠিকানার দিকে। তার দেশ চিত্র কথিত পত্রিকার একাধীক অফিস রয়েছে। কার্যালয়গুলোর মধ্যে প্রধান কার্যালয় আরমান কর্পোরেশন সোসাইটি(২য় তলা), শহীদ নাজমুল সরণী, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাণিজ্যিক কার্যালয় খন্দকার সুপার মার্কেট (কামারদহ রোড), আহমদপুর, বড়ইগ্রাম, নাটোর, কার্যালয় হাজী মার্কেট (২য় তলা), পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, ভোলাহাট, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় নিউমাকের্ট রাজশাহী।

অনুসন্ধানে গিয়ে এ সব জায়গাতে কোন অফিসের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে প্রকাশক সম্পাদক থাকেন ভোলাহাটে, বাড়ীও ভোলাহাটে অফিস কি করে দেশের বিভিন্ন জায়গাতে হয় এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ চক্রটি ভোলাহাট উপজেলার বেশ কিছু প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণার সুযোগ নিতে কথিত পত্রিকার উপদেষ্টা বানিয়েছেন।

উপদেষ্টাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উল্লেখিত জনপ্রতিনিধিদের শর্ত সাপেক্ষে উপদেষ্টা হওয়ার সম্মতি দিলেও কারো করো সম্মতি ছাড়াই নাম উল্লেখ করেছে। এর প্রতিবাদও জানিয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এ চক্রটি বিজ্ঞাপন প্রকাশে সরকারী কোন নিয়ম না মেনে নিজ ইচ্ছে মত কমমূল্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশের চটকদারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মিজানের পড়া লেখার খরচ যোগন দেন সহৃদয়বান এক ব্যক্তি। তার বাবা সামান্য মুজুরীতে শ্রমিকের কাজ করেন। কি করে এতো কিছুরির দায়িত্বে রয়েছেন। তার আয়ের উৎস কোথায় এনিয়ে জন মনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তার বেশ কিছু অনুসারি রয়েছেন। সম্প্রতি কথিত পত্রিকার প্রকাশক ও প্রেস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এইচএসসি পরীক্ষার্থী মমিন আলীসহ বেশ কয়েক জন। মিজানের সাথে যোগাযোগ করা হলে এলোমেলো বক্তব্য দিয়ে বিষয়গুলো এড়িয়ে যান।

এতো গেলো মিজান গ্রুপ। এবার আওয়াল। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কর্ণখালি গ্রামের মোফাজ্জুল হকের ছেলে আব্দুল আওয়াল। তিনি পড়াশুনায় ভোলাহাট মোহবুল্লাহ মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু তিনি নিজেকে রাজশাহীর সৃষ্টি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী বসবাস করেন ঢাকার মিরপুরে। তার প্রতারণার ফাঁদ মিজান কৌশলেয়। লোভনীয় বেতন দেওয়ার ফাঁদে ফেলে দেশের বিভাগ জেলা উপজেলায় প্রতিনিধি নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। তিনি মা মিডিয়া ইউটিউবের চেয়ারম্যান, এমএ আওয়াল ব্যক্তিগত ইউটিউব. ম্যানেজিং ডিরেক্টর মা মিডিয়া, দৈনিক তারুণ্যের আলোর প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ নাগরিক ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি, দৈনিক চাঁপাই ক্রাইম বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক শীর্ষ টাইমসের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি।

আওয়াল নিজের লোভনীয় পদপদবী ব্যবহার করে নারী ফূর্তিতে বেশ পারদর্শি। তার পত্রিকার অফিস ঠিকানা ভোলাহাট মেডিকেলমোড় ব্যবহার করলেও কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ইউটিউব টিভির ঠিকানা কর্ণখালি দেয়া থাকলেও কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। এ ব্যাপারে আওয়ালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার দুটি অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ কয়েকটা ইউটুইব চ্যানেল আছে। তবে তার কোন অফিস নাই বলে স্বীকার করেন। তিনি চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করেন।

ভূয়া ক্রাইম রিপোর্টার আলমগীর। তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে অনুসন্ধানী টিম ছুটে যায় বিভিন্ন জায়গায়। খোঁজ নিতে বেরিয়ে আসে ভয়ংকর তথ্য। ৩য় শ্রেনি পর্যন্ত পড়ালেখা। বাবা দিনমুজুর নাম কয়েস। বাড়ী ভোলাহাট উপজেলার আদাতলা গ্রামে। সরকারী (খাস)জমিতে(বাড়ী)বসবাস। নিজে মুশরীভূজা বাজারে কম্পিউটারে গানলোডের কাজ করে। এ বয়সে ২টা বিয়ে করে ফেলেছেন। বড় বউয়ের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন। নিজেকে সিএন২৪বিডি অনলাইন পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে জেলার ইটভাটা পুকুর খননসহ বিভিন্ন জায়গাতে চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছেন।

চাঁদাবাজি করতে নিজের নাম আলমগীর, ক্রাইম রিপোর্টার, সিএন২৪বিডি, ২৮, তাজম্যানসন(২তলা), কাউরান বাজার, ঢাকা লিখে ভিজিটিং কার্ড বানিয়ে তা ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুয়া ক্রাইম রিপোর্টারের ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে চৌরাই মোটরসাইকেলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে অনলাইন পোর্টালের প্রকাশক ও সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আলমগীর তার পত্রিকার কেউ না। সে যদি তার পত্রিকার ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে অপরাধসহ যে কোন সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করে তবে তিনি কোন দায় নিবেন না বলে জানান। এ ব্যাপারে আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করলেও একসময়ে সাংবাদিকতা করেছেন বলে জানান। তবে তিনি ৫ম শ্রেণী পাশ করেননি বলে নিশ্চিত করেন।

ভোলাহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম কবির বলেন, গণমাধ্যমের ফাঁদপেতে এসব প্রতারক চক্র গণম্যাধমের ভাবমূর্তি চরম ভাবে ক্ষতি করছে। এতে করে গণমাধ্যম দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে। ফলে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী করেছেন। সেই সাথে এসব প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

 

আরপি/আআ-০১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top