রাজশাহী বুধবার, ১৭ই এপ্রিল ২০২৪, ৪ঠা বৈশাখ ১৪৩১

গুলিতে নিহত রাজমিস্ত্রী বাবুলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম


প্রকাশিত:
১৫ অক্টোবর ২০২১ ০২:৫৩

আপডেট:
১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:২৯

ছবি: প্রতিনিধি

কুমিল্লার একটি মন্দিরে কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগে সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় সংঘটিত পুলিশের সাথে সংঘর্ষে তিনজনের একজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

নাম তার বাবুল (৩০)। সেখানে চলছে শোকের মাতম আর আহাজারি। পেশায় সে একজন রাজমিস্ত্রী। বুধবার (১৩ অক্টোবর) এশার নামাজের পর হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই রাজমিস্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা মধ্যপাড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে। সে হাজীগঞ্জে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো।

এ বিষয়ে নিহতের পরিবার, তার সাথে থাকা শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের গুলি ছোঁড়ে।

এ সময় মন্দিরের পাশে থাকা একটি নির্মাণাধীন ভবনের ৭ম তলায় থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয় রাজমিস্ত্রী বাবুল। পরে তার সাথে থাকা অন্যান্য শ্রমিকরা গুরুতর আহত অবস্থায় বাবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে হাজীগঞ্জে নিহত বাবুলের সাথে থাকা তার চাচাতো ভাই শ্রমিক মোশাররফ হোসেন মুঠোফোনে জানান বাবুলের অধীনে ১০ জন রাজমিস্ত্রী ও শ্রমিক কাজ করতো। এমনকি সেও রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো।

বুধবার সন্ধ্যার পর কাজ থেকে ফিরে এসে গোসল সেরে জানালার পাশে বসেছিল সে। পরে হঠাৎ করে আনুমানিক রাত সাড়ে আটটার দিকে এলাকায় ঘটিত সংঘর্ষের একটি গুলি তার বাম চোখে এসে লাগে।

এতে সে মেঝেতে পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে উঠিয়ে তড়িঘড়ি করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বওে সে মারা গেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে নিহত বাবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা আসছে বাবুলের বাড়িতে। তার মা, বাবা, স্ত্রী, দুই মেয়েসহ স্বজনদের কান্নায় বাতাস যেন ভারি হয়ে পড়েছে।

স্বজনদের আহাজারি ও মাতমে পরিবেশ শোকাবহ হয়েছে বাগডাঙ্গা মধ্যপাড়া গ্রামের বাবুলের বাড়িসহ আশেপাশের এলাকা।

দূর দূরান্ত থেকে দেখতে আসছে আত্মীয় স্বজনরা। বিকাল ৩টার দিকে হাজীগঞ্জ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাবুলের লাশবাহী গাড়ি রওনা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মরদেহ রাখা ছিল।

নিহত বাবুলের মা রেজিয়া বেগম বলেন, ছেলে গত ৩ বছর ধরে ওখানে (হাজীগঞ্জ) কাজ করে। কালকে রাতে শুনতে পেলাম ওখানে নাকি পুলিশের সাথে গোলাগুলি হয়েছে এবং আমার ছেলে মারা গেছে।

ছেলেকে তো পাব না, তাই এখন লাশের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু লাশটাও নাকি আনতে দিচ্ছেনা। অনেক ঝামেলা করছে।

রাজমিস্ত্রী বাবুলের স্ত্রী এখনও মানতে পারছেন না তার স্বামী বেঁচে নেই। বড় মেয়ে সুমাইয়া (১০) ও পাঁচ বছরের ফাতেমাকে নিয়ে কি করবে কিভাবে সংসার চালাবে এই চিন্তায় কয়েকবার অজ্ঞান হয়েছেন তিনি। কাঁদতে থাকা বাবুলের স্ত্রীকে শান্তনা দিচ্ছেন আত্মীয় স্বজনরা।

কিন্তু স্বামী হারিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। বাবুলের স্ত্রী জানান, আজকে (বৃহস্পতিবার) ২ মাস পূর্ণ হলো হাজীগঞ্জ যাওয়া। তার অবদানেই সংসার চলে। সে চলে গেল। দুটি মেয়েকে নিয়ে কিভাবে থাকবো, কিভাবে বাঁচবো কিছুই জানি না।

বাবুলের বাবা শামসুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরের পর লাশ হাজীগঞ্জ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। লাশ নিয়ে আসা হলেই কবর খোঁড়া হবে। সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছি দুইটি মেয়েকে নিয়ে। তাদের কি হবে, কোথায় থাকবে কিছুই বুঝতে পারছি না।

প্রতিবেশী মাসুদ রানা জানান, বাবুলের সাথে আমাদের এলাকার আরও অনেক মিস্ত্রী ও লেবার ওখানে একসাথে কাজ করে। গোসল করে রুমে অনেকেই একসাথে ছিল।

কিন্তু হঠাৎ করে জানালা দিয়ে গুলি এসে কেবল তারই বাম চোখে আঘাত করে। এতেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিবার খুব অসহায়। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে অনুরোধ জানায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, তারা খুবই অসহায় পরিবার। বাবুল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। সে চলে যাওয়ার পর তারা খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়ে গেল।

একজন নিরপরাধ মানুষ, অথচ পুলিশের গুলিতে মারা গেল। প্রশাসনের কাছে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াবার অনুরোধ করছি গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে।

তবে বিকেল ৪টায় সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে জানান, হাজীগঞ্জ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে লাশ রওনা দিয়েছে।

লাশ আসলে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। সার্বক্ষণিক পরিবারটির সাথে যোগাযোগ রাখছি। বাবুলের পরিবারকে সরকারি বিভিন্ন সহায়তা প্রদানের জন্য চেষ্টা করবো।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৩ অক্টোবর) রাতে গোলাগুলির পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এতে ১৭ জন পুলিশ সদস্যও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

 

আরপি/ এমএএইচ-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top