রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাত

পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নির্বাক মাইদুল, বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন


প্রকাশিত:
৬ আগস্ট ২০২১ ০০:৩২

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:১৭

ছবি: প্রতিনিধি

ভাগনে মামুন ও ভাগনে বৌ সুমিকে আনতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মামুনের শ্বশুরবাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের তেরোরশিয়া গ্রামের হোসেন আলীর বাড়ি যাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজনগর ডাইলপাড়া গ্রামের মাইদুল ইসলাম (৩৫)। যাত্রাকালীণ সবাই মিলে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন। তবে সব আনন্দ মূহুর্তেই নিরানন্দে পরিণত হয় বজ্রপাতের আঘাতে। বুধবার (৪ আগস্ট) এক বজ্রপাতেই মাইদুল হারালেন জন্মদাতা মা-বাবা, ভালোবাসার ভাই-ভাবি, বোনসহ নিজের পরিবারের সাত সদস্যকে। আর একই দিন বিকেলে নিজ বাড়ির আঙিনায় নিজ হাতে স্বজনদের দাফন করেন অশ্রুসিক্ত নয়নে।

এর আগে একই দিন দুপুর ১২ টার দিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর দক্ষিণ পাঁকা ঘাটে পৌঁছানোর পরপরই বৃষ্টি শুরু হলে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘাটের ইজারাদারের ছোট কুঁড়েঘরে আশ্রয় নেন প্রায় ২৫ জন। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট শব্দে পতিত বজ্রপাতে মারা যান ১৮ জন। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নিহত ১৮ জনের মধ্যে রয়েছেন মাইদুল ইসলামের বাবা মো. তোবজুল (৭০), মা জমিলা বেগম (৬০), ভাই মো. সাইদুল (৪০), ভাবি টকি বেগম (৩০), ভাতিজা মো. বাবু (১৫), বোন লেতুন বেগম (৪৫) ও ভাগনে মো. বাবলু (২২)।

এদিকে একই সময় একই স্থানে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১২ জন। আহতরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও এক শিশুকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বর মামুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নামোসূর্য নারায়ণপুর গ্রামের পাতুর ছেলে।

ঘটনার দিন রাতে মাইদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, কতজন মারা গেছে আমার জানা নাই। শুধু জানি আমি এতিম হয়ে গেছি, নিঃস্ব হয়ে গেছি। ওই সময় হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো বলে মেয়েকে নিয়ে ধীরে ধীরে নৌকা থেকে নামছিলাম। আর নেমে ছাউনিতে যাবার আগেই বজ্রপাত হয়। সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যাই। যখন জ্ঞাণ ফিরলো তখন জানলাম আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আব্বা-আম্মা, ভাই-বোন, ভাইগনা-ভাতিজা, বোইন মরে গেছে। মাটিও দিলাম বাড়ির আইগনায়। বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ফেলেন তিনি।

এদিকে ওই ঘটনায় নিহত সহবুলের ভাই রাকিব আলী বলেন, সোমবার সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জনতার হাট গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে মো. মামুনের সঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের তেরোরশিয়া গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে সুমি খাতুনের বিয়ে হয়। বুধবার বর ও কনেকে আনতে পদ্মা নদী পেরিয়ে নৌকায় করে কনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন বর পক্ষের লোকজন। পরে দুপুর ১২টার দিকে তারা পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা ঘাটে পৌঁছলে বৃষ্টির কারণে নৌকা থেকে নেমেই ঘাটের পাশে ছাউনির নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন অনেকে। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই আমার ভাইসহ ১৮ জন মারা যায়।

এ বিষয়ে মহারাজনগর ডাইলপাড়া গ্রামের কলেজ ছাত্র সাকিব আলী মাইদুলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, নিজে উপস্থিত থেকে পরিবারের সাত সাত জনকে মরতে দেখে নির্বাক মাইদুল। বাড়ির সামনেই এলাকাবাসী একই সাথে একই সারিতে ৭টি কবর খুঁড়ে সবগুলো মরদেহ দাফন করেছে। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।

তবে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ। ঘটনার পর এলাকা ঘুড়ে এসে তিনি বলেন, নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

 

আরপি/এসআর-১১



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top