রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

তীব্র সার সংকটে আলু চাষীদের দুশ্চিন্তা


প্রকাশিত:
২০ নভেম্বর ২০২২ ০৩:১৮

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০১:৩৫

ছবি: সংগৃহীত

রবি মৌসুমের শুরুতেই তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে রাজশাহীর বাজারে। বিশেষ করে পটাশ সারের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। যেটুকু রয়েছে তাও কিনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। তবুও সারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে চাষীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর উপজেলাগুলোতে ৭৫০ টাকার প্রতি বস্তা পটাশ সার কিনতে কৃষকদের গুণতে হচ্ছে ১৪’শ থেকে ১৫’শ টাকা। আবার অতিরিক্ত দামে সার কিনতে গিয়েও দাঁড়াতে হচ্ছে লাইন ধরে। কাঙ্খিত পরিমাণ সার না পেয়ে ঘুরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। ফলে আসন্ন রবি মৌসুমে আলু চাষসহ অন্যান্য সবজি চাষ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রাজশাহীতে অন্য জাতের তুলনায় কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও এ্যাস্টেরিক জাতের আলু উৎপাদন হয় অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে আগের তুলনায় বেড়েছে আলুর চাষ। ৩৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৭৬ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন আলু চাষের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে কৃষি বিভাগ। অর্থাৎ প্রতি হেক্টর জমিতে ২৬ দশমিক ৫০ টন আলু চাষ করার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইতোমধ্যে জেলার বেশ কিছু জায়গায় আলু চাষ শুরু করেছে চাষীরা। চলতি নভেম্বর মাসজুড়েই আলু চাষের মহোৎসব চলবে জেলাজুড়ে। মাসের বাকি সময়েই আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর এলাকার আলু চাষী রাকিব হোসেনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আলু লাগানোর জন্য জমি রেডি করা হচ্ছে। সপ্তাখানেকের ভেতরেই পুরোদমে আলু রোপণ শুরু হবে। গত মৌসুমে স্টোরে ওভারলোড হওয়ায় কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যে আলুর দাম ৬০ টাকা কেজি, সেটা ৫০ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে স্টোর ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচ বেড়ে গেছে।

সার সংকটের কারণে আলু চাষ থেকে পিছু হটছেন অনেক কৃষক। তাদেরই একজন তানোরের কালীগঞ্জ এলাকার শরিফ হোসেন। তিনি বলেন, আলু লাগানোর সময় শুরু হয়েছে। তবে এবার আমি আলু চাষ করছি না। আলু চাষের অনেক খরচ, সার যাচ্ছে না ঠিকমতো, জমির দামও অনেক সেজন্য আলু চাষ করছি না এবার।

তিনি আরও বলেন, গত বছর ৫০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করছি, এবার একটুও করবে না। সারের দাম অনেক। বিশেষ করে পটাশ, ডিলার ছাড়া কোনো মাধ্যমে পটাশ পাওয়া যাচ্ছে না। আর ডিলারের মাধ্যমে যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে ততটুকু দিয়ে আসলে আলু হয় না। সরকারিভাবে প্রতি বিঘা আলুর জমিতে ৪০ কেজি পটাশ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বিঘায় কমপক্ষে দুই বস্তা পটাশ না দিলে আলুর ভালো ফলন পাওয়া যায় না। যার কারণে পটাশ ওইভাবে পাইলাম না, অনেক দাম। এখনই ১৪’শ থেকে সাড়ে ১৪’শ টাকা দাম এক বস্তা পটাশের। অথচ পটাশের সরকারি রেট সাড়ে ৭’শ টাকা।

ডাবল দামে পটাশ কিনে আলু চাষ করে অনেক খরচ। ১৪ সালে যখন আলু চাষ শুরু করি তখন এক বিঘায় ২৭ হাজার টাকা খরচ হতো। গত বছর এক বিঘা আলুতে ৫৪ হাজার টাকা খরচ করেছি। ৭/৮ বছরে আলুর খরচ ডাবল বেড়ে গেছে। এবছর ৬০ হাজার টাকা পার হয়ে যাবে মনে হচ্ছে, জমির দামও প্রতি বিঘা ২/৩ হাজার টাকা বেড়ে গেছে। সার্বিক দিক চিন্তা করে আলু চাষের চিন্তা ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানান এই কৃষক।

সার সংকট প্রসঙ্গে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, ‘পটাশ সারের আমাদের যে রেগুলার বরাদ্দ ছিল তারপরেও যেহেতু স্থানীয় অনেকেই ওভারডোজ ব্যবহার করে, তাদের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী আমরা বরাদ্দও পেয়েছি।’

‘কিন্তু যশোরের নওয়াপাড়ার যেখান থেকে বরাদ্দটা নিতে হবে সেই জায়গার সিরিয়াল জটিলতার কারণে সারটা আসতে একটু সময় লাগছে। তবে এ সপ্তাহের মধ্যেই পুরো সারটা আসবে বলে আশা করছি। কৃষকদের যে মনে হচ্ছে সার নাই সার নাই, ওই সার আসলে আর সেটা মনে হবে না। এক সপ্তাহ পরে সার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষি কর্মকর্তা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন বলেন, সার সংকট বা দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা মাঠ পরিদর্শনেও গিয়েছি, এরকম কেউ কিছু বলে নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন (বিএফএ) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আবু কালাম বলেন, ‘সার যা পেয়েছি সারের সংকট নেই। কিন্তু সারা বাংলাদেশে একই সঙ্গে সারের চাহিদার কারণে ডেলিভারি পয়েন্টে একটু সমস্যা হচ্ছে। আলুর সিজন ও রবি মৌসুম হওয়ায় একটু সমস্যার তৈরি হয়েছে।’

অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজশাহীতে ৮৯ জন বিসিআইসি সার ডিলার আছি। সরকারি রেটের বাহিরে সার বিক্রির আমাদের কোনো সুযোগ নেই। সরকারি যত সংস্থা আছে সবাই সার বিক্রি মনিটরিং করে, আমাদের দোকানে বসে থাকে, বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নাই। তবে আমাদের বাহিরে যারা সার বিক্রি করছেন তারা অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করে থাকতে পারে। আর লোকবল সংকটের কারণে সরকারি কর্মকর্তারাও সেভাবে তদারকি করতে পারছেন না।’

 

 

আরপি/এসআর-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top