রাজশাহী বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৯শে ফাল্গুন ১৪৩১


বিলুপ্তির পথে জাতীয় ফুল শাপলা


প্রকাশিত:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫৪

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১০:৩২

রাজশাহী পোস্ট

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। শৈশবের সেই সাদা শাপলার সৌন্দর্য এবং এর সঙ্গে জড়িত স্মৃতিগুলো এখন কেবলই ফিকে হয়ে আসছে। একসময় গ্রামের খাল-বিল, ডোবা ও জলাশয়ে যে শাপলার সমারোহ দেখা যেত, তা আজ অনেকটাই বিরল। অতিরিক্ত জনসংখ্যা, অযত্ন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃষিক্ষেতে নির্বিচারে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার এই বিলুপ্তির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

শাপলার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি আমাদের দেশের মুদ্রা, সরকারি দলিল ও প্রতীকে চিত্রিত রয়েছে, যা জাতির পরিচয় বহন করে। একসময় প্রাকৃতিকভাবে খাল-বিলের পানিতে পরিচর্যা ছাড়াই শাপলা ফুটত। এর শুভ্র রঙ যেমন আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, তেমনি এটি জাতির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। কিন্তু আজ গ্রামীণ জনপদে শাপলার সেই সাদামাটা সৌন্দর্য যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রবীণরা শৈশবের শাপলা ফুলে খেলার মিষ্টি স্মৃতিগুলো মনে করে আজও মুচকি হাসেন, কিন্তু বাস্তবে সেই দৃশ্য এখন শুধুই অতীত।

শাপলা কেবল সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি বহন করে আরও মূল্যবান গুণাবলি। এর ঔষধি গুণের মধ্যে রয়েছে হজম সমস্যা নিরসন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং অতিরিক্ত পিপাসা নিবারণের ক্ষমতা। প্রাচীনকালে শাপলার লতা ও ডগা সবজি হিসেবে বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু এখন সেই দিনগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে কৃষিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শাপলার প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। খাল-বিল ও ডোবা ভরাট করে পুকুর ও ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে শাপলার জন্মস্থান সংকুচিত হয়ে পড়ছে। একসময় যেখানে শাপলার সৌন্দর্য ছড়িয়ে থাকত, আজ সেখানে ইট-পাথরের অট্টালিকা দাঁড়িয়ে গেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবেও শাপলার অস্তিত্ব হুমকির মুখে। সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়া, খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়া এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে শাপলার জন্মানোর স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে মাটিতে লুকিয়ে থাকা শাপলার বীজ ও মা শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শাপলার সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত করবে।

শাপলা আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। এই ফুলের বিলুপ্তি আমাদের জাতীয় চেতনার এক গভীর ক্ষতি ডেকে আনবে। তাই শাপলা রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত জাতীয় ফুলের এই মহিমা রক্ষায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে, আগামী প্রজন্ম হয়তো আর কোনোদিন শাপলাকে জাতীয় ফুল হিসেবে দেখতে পাবে না। পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আগেই যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

 

মোসাঃ তামিম তুলি
অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।

 

 

আরপি/আআ

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top