রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১০ই জুলাই ২০২৫, ২৬শে আষাঢ় ১৪৩২


আষাঢ়ের আগমন প্রকৃতির রঙ বদলের গল্প


প্রকাশিত:
১০ জুলাই ২০২৫ ০০:০১

আপডেট:
১০ জুলাই ২০২৫ ০০:০২

রাজশাহী পোস্ট

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আষাঢ় ও শ্রাবণ এই মাস বর্ষাকাল। এই সময় আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে এবং প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়। কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেলে প্রকৃতি পায় নতুন রূপ। ফসলের মাঠ ও গাছপালা সজীব হয়ে ওঠে। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান,
শিব ঠাকুরের বিয়ে হলো
তিন কন্যে দান।
এক কন্যে ঘোমটা দেয়,
এক কন্যে হাঁসে,
এক কন্যে খাট চাপিয়ে
শিব ঠাকুর নাচে।

বর্ষাকালে নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বর্ষাকালে চারপাশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে মনোরম। এসময় বিভিন্ন ফুল যেমন কদম, হাসনেহেনা, জুঁই, গাঁদা ইত্যাদিতে মাঠ-ঘাট, নদী-খাল সবজায়গায় সবুজের সমারোহ দেখা যায়। ধানক্ষেত, জলাশয়, বাগান সবই জীবন্ত হয়ে ওঠে।গ্রামের রাস্তাঘাট কাঁদা মাখা হয়ে পড়লেও কৃষকের মুখে হাসি ফোটে, কারণ বৃষ্টি ছাড়া ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়। বর্ষা প্রধানত কৃষিনির্ভর বাঙালি জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমন ধানের চারা রোপণ হয় এই সময়। জলসেচের জন্য প্রাকৃতিক বৃষ্টিই মূল ভরসা। এ সময় মাঠে পানি জমে ধান চাষের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

বর্ষাকালের সৌন্দর্য অপরূপ। ছোট নদী, ঝর্ণা ও পুকুরে জলকেলি করে ছোট ছোট মাছ। বৃষ্টির পানি পড়ে কাদার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। শিশুরা আনন্দে কাদায় খেলাধুলা করে। অনেকে নৌকা বাইচের আয়োজন করে, যা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বর্ষার দিনে খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা, পাটিসাপটা পিঠে , গরম চা ও পিঁয়াজু, বেগুনি খাওয়ার মজাই আলাদা।

বাঙালির ঘরে এসব যেন উৎসবের সমান। আবার বর্ষার মেঘ, বৃষ্টি ও কাদা-জলে ভিজে প্রেমিক-প্রেমিকার মনে নতুন আবেগের জন্ম দেয়। অনেক কবিতা ও উপন্যাসে এ অনুভূতি ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন কবি যেমন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল সকলের কবিতায় ও গানে বর্ষা বিশেষ স্থান পেয়েছে। এত আনন্দ মধ্যে বর্ষাকাল অনেক সময় আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি উপচে প্লাবন হয়, বাড়িঘর ডুবে যায়, ফসল নষ্ট হয়। শহরে ড্রেনেজ সমস্যা ও জলাবদ্ধতা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে। দিনমজুর মানুষরা কাজ বের হতে পারে না। এতে আমাদের অর্থনীতি বেশ হুমকি মুখে পড়ে ।

সবমিলিয়ে বর্ষাকাল বাঙালির জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি বাঙালির জীবনে কেবল এক প্রাকৃতিক পরিবর্তন নয়, এটি হৃদয়েরও পরিবর্তন আনে। মেঘের গর্জন, বৃষ্টির টাপুর-টুপুর শব্দ, কাক-ডাকা ভোরে ভিজে যাওয়া বাগান সব মিলে বাঙালির জীবনে এক মধুর সঙ্গীত হয়ে বাজে। তাই কবি বলেন,

বর্ষা এলো ঘন-ঘন মেঘে,
গগনে গরজে বজ্র-রবে।
তুমি এলে না হে প্রিয়,
আমার ভরা বাদল-ছলে।

স্নেহা মির্জা
শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ সম্মান ১ম বর্ষ, মার্কেটিং বিভাগ

আরপিিআআ


বিষয়: আষাঢ়


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top