রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


রাজশাহী কলেজ হোক দেশের প্রথম আধা-স্বায়ত্তশাসিত কলেজ


প্রকাশিত:
১৮ জুলাই ২০২০ ০১:৫৯

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪৮

রাজশাহী কলেজ। ছবি: সংগৃহীত

১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী কলেজ বৃহৎ-বঙ্গ তথা উপমহাদেশের শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে মহিমায় ভাস্বর। প্রমত্তা পদ্মাতীরের মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত এই স্বর্ণগর্ভা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, প্রযুক্তি, প্রশাসন ও নেতৃত্বের বিচিত্র পরিসরে বাংলাদেশকে বিশ্বপরিমন্ডলে বিকশিত করেছে।

প্রায় দেড়শ বছরের কালপরিক্রমায় রাজশাহী কলেজকে উচ্চস্তরের শিক্ষার ডিগ্রি প্রদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সর্বশেষ ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এর অধিভুক্ত হতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ ব্যতীত দেশের সকল কলেজ এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনে ডিগ্রি পাস কোর্স, অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করে।

ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এই অধিভুক্তিকরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নতুন অভিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বার্থ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি আন্দোলন, প্রক্টরকে ঘেরাও, ফটক ভাঙচুর- এসব ঘটনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট কমাতে “ক্র্যাশ প্রোগ্রাম” ঘোষণা করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোকে ঠিকমত ক্লাস নেয়ার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পরীক্ষা নিতে ব্যস্ত থাকে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির দিকে নজর না দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন অনেকটা পরীক্ষানির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত হয়েছে।

রাজশাহী কলেজ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশসেরা। রাজশাহী কলেজের বর্তমান অবকাঠামো সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন জেলার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়েও অনেক ভালো। তাই রাজশাহী কলেজকে কোনো সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অধিভুক্ত না করে আধা-স্বায়ত্তশাসন দেয়া প্রয়োজন। যেন সাত কলেজ অধিভুক্তির মত তিক্ত অভিজ্ঞতা না হয়।

কিভাবে রাজশাহী কলেজকে আধা-স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা যেতে পারে তার একটি রূপরেখা-
আধা-স্বায়ত্তশাসন বলতে বোঝানো হচ্ছে যে, কলেজ তার একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীন থাকবে এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ “বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন” এর ৫ ধারার ১ উপধারায় ও ১৪ ধারায় প্রদত্ত বিধান অনুসারে একটি প্রজ্ঞাপন গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) আইনগতভাবে উক্ত আদেশের ১৫ ধারা অনুসারে রেগুলেশন প্রণয়ন করতে পারবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ও ইউজিসি কলেজকে মনিটরিং, বাজেট বরাদ্দ এবং শিক্ষার গুণগত মান রক্ষার জন্য কাজ করবে। একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় কলেজের কাজ হবে- কলা, সামজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধীনে ইউজিসি দ্বারা স্বীকৃত প্রোগ্রাম বা কোর্স এর নকশা ও পর্যালোচনা করা। অনার্স ডিগ্রি প্রোগ্রামের প্রতিটি বিষয় চার বছর মেয়াদি সমন্বিত কোর্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি এক বছর মেয়াদি বা গবেষণাভিত্তিক দুই বছর মেয়াদি কোর্স হিসাবে পরিচালনা করা।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য “STEM Education Modle” অনুসারে এবং দেশের চাহিদা মোতাবেক পাঠক্রম প্রণয়ন করা এবং পাঠক্রম প্রণয়নে দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, গবেষক ও পেশাজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করা। ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা ও বিভিন্ন ফি নির্ধারণ করা এবং শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা। বার্ষিক বা অর্ধ-বার্ষিক কোর্সভিত্তিক পরীক্ষা এবং গ্রেডিং ও ক্রেডিট পদ্ধতিতে সিজিপিএ (ঈএচঅ) গণনা করে ফল প্রকাশ করে পূর্ণ মার্কসিট ও প্রশংসাপত্র প্রদান করা।

পূর্ণ মার্কসিটসহ প্যারেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি তার প্রেক্ষিতে ডিগ্রি অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ কলেজের নাম উল্লেখপূর্বক নম্বরপত্র ও সনদ প্রদান করবে। এক্ষেত্রে প্যারেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হবে কলেজকে অধিভুক্তির জন্য সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং উক্ত কলেজকে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা।

শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কলেজের বিদ্যামান শিক্ষকমন্ডলী নিয়োজিত থাকবেন। তবে প্রত্যেকটি বিভাগের মোট শিক্ষকের ১০% শিক্ষক পে-স্কেল ২০১৫ অনুসারে কলেজকে নিয়োগ প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম অনুসরণযোগ্য। কলেজের প্রশাসনিক প্রধান হবেন অধ্যক্ষ এবং কলেজ পরিচালনার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ হিসেবে একটি গভর্নিং বডি, একাডেমিক কাউন্সিল, বোর্ড অফ স্টাডিজ, অর্থ কমিটি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও নিয়োগ কমিটি থাকবে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন, রুল ও পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি কলেজ কর্তৃক গঠিত সকল ধরনের কমিটি বিদ্যমান থাকবে। কলেজের আদর্শ মানদন্ড পরিমাপের ভিত্তিতে আধা-স্বায়ত্তশাসন আগামী ৫ বা ১০ বছর এর জন্য প্রদান করে সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অধিক ব্যয় এড়ানো যায়। প্রয়োজন হলে সরকার পূর্বের আধা-স্বায়ত্তশাসন ঘোষিত কলেজকে “Deemed University” তে রূপান্তর করতে পারবে।

সর্বোপরি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য এসডিজি-৪ লক্ষ্য অর্জন এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য রাজশাহী কলেজকে আধা-স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হলে তা হবে বাংলাদেশ সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

লেখক : বিবিএ অনার্স; এমবিএ (রাজশাহী কলেজ)। ই-মেইল : [email protected]

 

আরপি/আআ-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top