রাজশাহী বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৯শে ফাল্গুন ১৪৩১


মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায় ইনডোর প্ল্যান্ট


প্রকাশিত:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৭

আপডেট:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৫৩

রাজশাহী পোস্ট

বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপনে, যখন মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে, তখন ইনডোর প্ল্যান্ট আমাদের জন্য এক অভিনব সমাধান হিসেবে হাজির হয়েছে। প্রযুক্তির প্রভাবে যেখানে আমাদের জীবনকে বিষাদে ভরে দিয়েছে, সেখানে ইনডোর প্ল্যান্ট আমাদের জন্য একটি প্রাণবন্ত বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। ঘরের কোনে একটি গাছ রাখা শুধু সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং এটি আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারি। ইনডোর প্ল্যান্টের সবুজ রং এবং সতেজতা শুধু স্থানকে প্রাণবন্ত করে তোলে না, বরং এটি আমাদের মানসিক শান্তিও প্রদান করে। গাছের স্বাভাবিক উপস্থিতি আমাদের মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যা উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে ব্যাপক সাহায্য করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো ইনডোর প্ল্যান্টের প্রতি আমাদের আকর্ষণ কেন বাড়ছে? ঘরের পরিবেশে গাছের উপস্থিতি সত্যিই কি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সহায়ক?

হ্যাঁ অবশ্যই সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, গাছের উপস্থিতি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। গাছের উপস্থিতি শুধু আমাদের পরিবেশকেই সজীব করে না, বরং এটি আমাদের মনের মধ্যে শান্তি ও প্রশান্তিও নিয়ে আসে। ইনডোর প্ল্যান্ট বাতাস থেকে বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপাদন করে। যার কারণে আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের গুণগত মান উন্নত হয়। এটি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের পরিবেশকে আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। বিভিন্ন প্রকারের গাছের পাতা, ফুল ও রং আমাদের ঘরের শোভা বৃদ্ধি করে। সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো গাছপালা আমাদের মনোজাগতিক অনুভূতিকে উন্নত করে, যা আমাদের মাঝে এক অন্য রকম স্বস্তি এনে দেয়।

ইনডোর প্ল্যান্ট ছোট জায়গার জন্য অর্থাৎ ঘরে সাজানোর জন্য বা ঘরের কোনে রাখার জন্য খুব কার্যকর। সঠিকভাবে গাছ লাগানো বা সাজানো আমাদের ঘরকে সজীব করে তোলে এবং একটি আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে। ইনডোর প্ল্যান্টের নান্দনিকতা আমাদের মনের শান্তি বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে যেমন- পিস লিলি, স্নেক প্ল্যান্ট, জেড প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, ড্রাকেনা, ক্যাকটাস, রবার প্ল্যান্ট সহ আরো অনেক ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে। এই প্ল্যান্টগুলো বাতাসের বিষাক্ত পদার্থ যেমন ফরমালডিহাইড ও এক্রিলিক দূর করে। আবার এই ইনডোর প্ল্যান্টগুলো প্রাকৃতিক মেডিসিন হিসেবে কাজ করে রোগ প্রতিরোধক এবং বাতাসের আর্দ্রতাও নিয়ন্ত্রণ করে। আবার এদের মধ্যে কিছু প্ল্যান্ট এমনও আছে যা রাতের সময় অক্সিজেন তৈরি করে। যা ঘুমের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়াও আরো অনেক গাছ আছে যেমন- সুক্কুলেন্টস, পটস, বাম্বু পাম, ফিকাস এলাস্টিকা, ফিলোডেনড্রন, লেবু গাছ ইত্যাদি এই প্ল্যান্টগুলো ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যেমন কাজ করে তেমন আমাদের মানসিক চাপ ও উদ্যোগ কমাতেও বেশ ভূমিকা রাখে।

এই ইনডোর প্ল্যান্টগুলো শুধু রোপন করলেই হবে না বরং এর উপযুক্ত যত্নও নিতে হবে। কিছু গাছ আছে যেগুলো সরাসরি রোদ পছন্দ করে যেমন-সানসেভিরিয়া আবার কিছু গাছ আছে যেগুলো কম আলোতেও ভালো থাকে যেমন-পোথোস। তাই গাছের আলোর চাহিদা অনুযায়ী সঠিক স্থানে ইনডোর প্ল্যান্টগুলো রাখতে হবে। আবার গাছগুলোতে যথাসময়ে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন থাকতে হবে। এমনকি সময় সময়ে গাছের স্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও নজর রাখতে হবে। আবার প্রতি ৪ থেকে ৬ মাস পর পর গাছের ধরন অনুসারে উপযুক্ত সার ব্যবহার করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনে কীটনাশকও ব্যবহার করতে হবে। তাই এই ইনডোর প্ল্যান্টগুলোর যত্ন নেওয়া একটি ধ্যানের মতো কাজ করে। যা আমাদের মনকে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে এমনকি দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ কমাতেও সহায়তা করে। গাছের বৃদ্ধি দেখা একটি সৃজনশীল ও আনন্দদায়ক কার্যকলাপ। গাছের সঙ্গে সময় কাটানোর ফলে আমাদের মনে প্রশান্তি আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, গাছের প্রতি যত্নশীলতা আমাদের মনকে প্রশান্তি দেয় এবং উদ্বেগের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এমনকি গাছের সাথে আমাদের একটি ইতিবাচক অনুভূতিও তৈরি করে, যা মানসিক চাপ কমানোর জন্য অধিক কার্যকর।

ইনডোর প্ল্যান্ট শুধুমাত্র যে ঘরের শোভা বাড়ায় বিষয়টা কিন্তু তা নয়। বরং এটি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গাছের অক্সিজেন উৎপাদন, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ, এবং মনোযোগ বৃদ্ধি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। সঠিক গাছ নির্বাচন ও সঠিক যত্নের মাধ্যমে আমরা একটি শান্ত ও সজীব পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি ও প্রশান্তি নিয়ে আসে। গাছের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আমরা শুধু পরিবেশকেই নয় বরং নিজেদের আরও ভালোভাবে ধরে রাখতে পারি।


সৈয়দা ফারিভা আখতার
অনার্স তৃতীয় বর্ষ,ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।

 

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top