কৃষকের জীবিকার উৎস টুটিকাটা খাল
                                এক সময় সেচের পানির অভাবে আবাদি জমির মাটি ফেটে চৌচিড় হয়ে যেতো। পানির অভাবে মাঠের ফসলের সাথে সাথে কৃষকের স্বপ্নও পুড়ে যেতো। গ্রামের আঁকা বাঁকা পথের কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া খাল বিলে পলি পরে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যেতো বিস্তীর্ন ফসলের মাঠ অন্যদিকে শুস্ক মৌসুমে পানরি অভাবে ফসল ফলাতে পারতেননা কৃষক। কিন্তু এখন কৃষির উপরে সরকারের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও কর্ম পরিকল্পনার কারনে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। সেই সাথে সাথে দুঃক্ষ দুর্দশা থেকে মুক্তি পেয়েছে কৃষক।
প্রায় ২০ বছর পর পুনঃখননকৃত খালের পানিই এখন অসহায় কৃষকের জীবিকার উৎস হয়েছে। চাষবাদ হচ্ছে রবিশষ্যসহ বিভিন্ন ফসল। বাড়তি উপকার হিসেবে যোগ হয়েছে গৃহপালিত প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন।
নওগাঁর ধামইরহাটে টুটিকাটা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি’র আওতায় এলজিইডির তত্বাবধানে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে ৩.১ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়। খননের পরে আশীর্বাদ হিসেবে খালে জমতে শুরু করেছে পানি। খালের ওই পানি দিয়ে কৃষক তার জমিতে পাট চাষাবাদ, ঢেঁড়স, করলা, শসাসহ বিভিন্ন সবজি জাতীয় রবিশষ্য চাষাবাদ করতে পারছেন। খালে মাছ চাষ করে জেলেরা মাছ ধরে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে তা বাজারে বিক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার গাংরা গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও জাইদুল ইসলাম জানান, তারা খালের জমানো পানি দিয়ে পাট, ঢেঁড়স, করলা, শসা, পুঁইশাক, লালশাক ও খিরা আবাদ করতে পারছেন। এতে তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম হয়েছে। পানি দিয়ে তারা অনেক সময় তাদের ধান চাষও করতে পারছেন যা আগে কখনো সম্ভব হয়েওঠেনি। অসময়ে শুস্ক মৌসুমে এই খালের পাড়ে পানি দিয়ে মাল্টা, পিয়ারা ও লেবু বাগান করতে সক্ষম হয়েছেন বলে কৃষক আমিনুর রহমান জানান।
এছাড়াও খাল সংলগ্ন এলাকার মোজাফফরের ছেলে নুরুজ্জামান বলেন, আমি ২২ টাকা দরে দেশী হাঁসের বাচ্চা কিনেছি, টুটিকাটা খালেই আমার হাঁসগুলোকে লালনপালন করছি। এগুলো আর ২ মাস পর ডিম দিতে থাকবে এবং প্রতিটি হাঁস সাড়ে ৩শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে।
টুটিকাটা পাবসস লিঃ এর সভাপতি মোতারব হোসেন জানান, খালের দুই পাড়ে তারা সামাজিক বনায়ন করেছেন, গাছগুলো প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় যেমন ভুমিকা রাখছে তেমনি এই খালের সকল সদস্যদেরকেও আর্থিক ভাবে সচ্ছলতা এনেদিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলী হোসেন বলেন, গ্রাম পর্যায়সহ বিভিন্ন এলাকায় যে সকল খাল খনন বা পুনঃখননযোগ্য সে সব খালগুলো খনন করে কৃষির প্রসার বৃদ্ধি ঘটিয়ে দরিদ্র মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। আমরা দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই করোনাকালে টুটিকাটা খাল খননের মধ্যমে সাধারণ কৃষক তাদের জীবিকা উন্নয়নে চরমভাবে লাভবান হয়েছেন।’
আরপি/এমএইচ-৭
বিষয়: নওগাঁ

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: