উম্মে সিদ্দিকা সুইটির ছোট গল্প ‘বকুল সমাচার’
![প্রতীকী ছবি](https://rajshahipost.com/uploads/shares/3333-2023-03-08-23-10-23.jpg)
আহ্ দাদি! তোমারে না কতোবার কইছি পড়ার সময় শব্দ করবা না– বাইরে খটখট আওয়াজে বাইরে আসে ১৩ বছরের ছোট্ট রুনু। দেখে দাদি প্রতিদিনের মতো আজও কিছু একটা পিসছে।
–দাদি হেইডা তুমি কী করো রোজ রোজ?
৫৫ বছরের বৃদ্ধা জমিলা ঘোলা ঘোলা চোখে নাতনীর দিকে বিরক্ত মুখে তাকিয়ে বলে– এইসব আর তুমি কেমনে বুঝবা। কিছু হইতে না হইতে যাও ডাক্তারখানায়। খালি ট্যাহা নষ্ট করতেই শিখছো। বিরক্ত লাগলেও রুনু দাদির কাছে যায়–
–দাদি রাগ কইরো না। কও না হেইডা কি বানাইতাছো?
–বকুল গাছের নাম হুনছোস রে ছেমরি। হেইডা হচ্ছে বকুলের ফুল। রুনুর মনে পড়ে গতকাল তার মায়ের বকুল ফুলের পাকোড়া বানানোর কথা তাই সে ঝট করে বলে– আইচ্ছা দাদি হেইডা কি সেই বকুল ফুল মা যেটার পাকোড়া বানাইছিল। দাদি তার ছোট্ট নাতনীর কথায় হেসে বলে,
–হ রে তোদের সেই বুকুলের কথায় কইতাছি।
–দাদি আজ কি তুমি পাকোড়া বানাইবা?
–না, হেইডা আমি দাঁতে লাগাইবো। দাদির কথায় হোহো করে হেসে উঠে ছোট্ট রুনু। বলে,
–তোমার মাথা খারাপ হইয়া গেছে দাদি। ফুল কেও দাঁতে লাগায় নাকি। নাতনীর এমন বাচ্চামি কথাতে না হেসে পারেনা জমিলা।
–আমাগো বয়স হইয়া গেছে। দাঁত পইড়া যায়, দাঁত দিয়া পুঁজ–রক্ত পড়ে। তাই যদি আমি প্রতিদিন একবার এই ফুল পিইসসা দাঁতে লাগায় তাইলে আমাগো দাঁত শক্ত হইবো, পু্ঁজ পড়া বন্ধ হইবো। তোরা এইসব কেমনে জানবি। তোদের তো কেউ গাছপালা সম্পর্কে বলে নাই। তাইলে আর কেমনে জানবি। দাদির কথায় মন খারাপ করে রুনু। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে সে এই গাছ সম্পর্কে পড়েছে তার পাঠ্য বইয়ে। ফট করে বলে উঠে–
–এই গাছটার বিষয়ে জানি আমি। ইন্ডিয়ান ম্যাদলার, সুরভী, মলছারী, মধুগান্ধা, বজ্রাদান্তি এমন আরও অনেক নাম আছে দাদি। আমি ভুইল্লা গেছি। নাতনীর মন খারাপ হলো দেখে কাছে ডেকে তিনি বলেন– আর কি কি জানো আমাগো একটু কওতো বুজান।
রুনু উৎসাই পেয়ে বলে উঠে– এইডা ১৫ মিটার উঁচু একটা গাছ কিন্তু তার ফুল হয় এই একটুখানি। মাত্র ১ সে.মি.। জানো দাদি ফুলটা অনেক ছোটো হলেও এর কতো সুগন্ধি। শুকাইয়া গেলে গন্ধতো আরও বাইড়া যায়। আর কি সুন্দর দেখতে ফুলটা। সাদার মাঝে হালকা হলুদ। এইডা আবার কেউ কেউ দেবদেবীর পূঁজায় ব্যবহার করে। কালিদাস নামের একজনের "মেঘদূত ” বইয়ে প্রথম এই ফুলের উল্লেখ পাওয়া যায়।
আইচ্ছা দাদি সেদিন মা কে কইলাম মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে, মাইগ্রেনের সমস্যা। তহন মা কি যানি একটা খাওয়াইলো হেইডা কী ছিলো দাদি?
–ওহ হেইডা বকুল ফুলের রস ছিলো। তুমার মা ঐ বকুল ফুল শুকাইয়া চু্র্ন–বিচুর্ন কইরা তার সাথে গরম পানি আর মধু মিশাইয়া দিছিলো যেন তুমার খাইতে তিতা না লাগে।
–ওহহহ এই জন্যে খেতে মিষ্টি লাগছিলো।
–হ রে হ । এইহানে আগাইয়া আসো বুজান তুমারে একটা গল্প কই।
–কী গল্প কও দাদি?
–একবার তুমার বাপজানের কি যানি একটা অসুখ হইলো, কি যে কষ্ট পাচ্ছিলো। তহন একখান ডাক্তার ডাইকা দেহানো হইলে ডাক্তারে কয় আমাশয় হয়ছে। আমি জিগাইলাম– তাহলে এইডা কেমনে ভালো হইবো। তহন ডাক্তার কইলো বকুল ফুলের কথা।
–এইটা হচ্ছে ক্রনিক ডিসেন্ট্রি (আমাশয়)। প্রতিদিন কয়েকটা করে বকুলের ফল পিসে নিয়ে মধু/চিনি মিশিয়ে খালি পেটে খেতে হবে তাহলেই আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। এই বকুল তো অনেক উপকারি। এর বাক–বাকলী, ফল–ফুল ডায়রিয়া রোগের ও উপকার করে। এছাড়াও যাদের হজমে সমস্যা আছে, খাবারে অনীহা, অপুষ্টিতে ভোগে তাদের প্রতিদিন সকাল – বিকাল ২ বেলা বকুলের পাতা বেঁটে খালি পেটে খেতে হবে৷ তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে। বীর্যপাতে সমস্যা দেখা দিলেও এটা ভেষজ হিসেবে ব্যবহ্রত হয়। আবার এই ফুলের রস হ্রদরোগ নিরাময় করতেও সাহায্য করে। সেতী/দাদ রোগেও এর পাতার প্রলেপ দেওয়া যায়।
রুনু লক্ষ্য করলো কথাগুলো বলতে বলতে দাদির চোখে পানি চইল্লা আসছে।
–দাদি কী হয়ছে তোমার?
–হেই গাছখানা তোর দাদা খুব সখ কইরা লাগাইছিলো। আমারে বইললা গেছে যত্ন নিতে। আমার কিছু হইয়া গেলে তুমি গাছটার যত্ন নিও বুজান।
–আাইচ্ছা দাদি। (বলেই জড়িয়ে ধরে তার দাদিকে)
লেখক
উম্মে সিদ্দিকা সুইটি
সহযোগী সদস্য, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি (আরসিআরইউ)
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: