রাজশাহী বুধবার, ৯ই অক্টোবর ২০২৪, ২৫শে আশ্বিন ১৪৩১


ধোঁয়াশার তামাটে রঙ


প্রকাশিত:
২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:১৭

আপডেট:
৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৩৪

এবছর ‘জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার’ পেয়েছেন রফিকুজ্জামান রণি। তিনি ১৯৯২ সালের ৩০ ডিসেম্বর চাঁদপুর কচুয়া উপজেলার দোঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশা সাংবাদিকতা। পুরস্কারপ্রাপ্ত পাণ্ডুলিপি ‘ধোঁয়াশার তামাটে রঙ’ থেকে পাঁচটি কবিতা প্রকাশ করা হলো।

 

কুয়াশা ফিরে আসে

 

রাতের ট্রেনে চড়ে এবার কুয়াশা আসবে বাড়ি, আসবে অন্ধরাতের

মায়া! উড়াল জ্যোৎস্নার খাম হাতে নিয়ে প্রতিবার যে ফিরে আসতো—

সেতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে; তার মৃত্তিকা ছুঁয়েছে ঘাস

 

আজো পাখির কলস্বরের মতো ফুঁপিয়ে ওঠে বিষণ্নরাত—দূর অতীতে

বাজে ঘুঙুরের শব্দঝঙ্কার, ঝরাপাতার দুঃখরোল—কাল থেকে

কালান্তরের বন্দর ছেড়ে যায় নোঙরবিহীন সময়ের খেয়াতরী

 

আজো একটি জাহাজ ভেড়েনি,

আজো একটি মানুষ ফেরেনি

 

দূরে, আরো দূরে ট্রেনের ঝক-ঝক-ঝক রোদন-আর্তি নামে, নামে

সকাল-সন্ধ্যা, বিকেল-রাত এবং দুঃস্বপ্ন : কুয়াশা ফিরে ফিরে আসে—

একজন মানুষ ফেরে না কেন?

 

দেয়াল

 

দেয়াল ওঠেছে চোখে—মন ও মননে

নৌকাগুলি কুমির, বৈঠারা কালসাপ

দেয়াল উঠেছে বুকে—সৃজন ও হননে

সম্প্রীতিতে আগুন, কালের অভিশাপ

 

পত্র ও পল্লব—দেয়ালে ছেয়েছে দেয়াল

ইট জড়ানো পাথর-কঠোর পথ

দেয়াল খেয়েছে চিন্তা এবং খেয়াল

দেয়ালে ঠেকেছে আদর্শ ও মত

 

ক্ষুৎপিপাসা

 

নিদেনপক্ষে ওই সূর্যটা আমার চাই—

এই ক্ষুৎপিপাসায়; সমুদ্র আরো

তৃষালু করে তুলেছে,

আর তাই—

খেতে চাই সূর্যের ক্ষীরিকা

নক্ষত্রের তরল দুধই আমার তৃষ্ণা মেটাবে।

 

কম্পাসবিহীন রাতের কাছে হাত পেতে কী লাভ?

তার গায়েও যে শিখণ্ডীর কামিজ।

পাললিক শূন্যতা যদি তোমার দিকে ঠেলে দেয়

তবে এক প্লেট আগুনের পায়েস দিও—

আমি তা আয়েশ করে খাবো!

 

কাঁধেই পেতেছি ঘাঁটি

 

আমি তো আমার লাশই কাঁধে নিয়ে হাঁটি।

 

দিনের শেষে—

একপ্লেট আগুনের জন্যে

বোতলভর্তি বিষের জন্যে

আর একটা ঘাড়-ধাক্কার জন্যে

আমি ঘরে ফিরে আসি!

 

আমি তো দুই যুগের পাপিষ্ঠ সন্তান

প্রাকৃতিক মমি!

 

ঈশ্বর আমাকে ছোঁবেন না

অনল আমাকে পোড়াবে না

পানি আমাকে ডোবাবে না

রাখবে না কখনো মাটি—

আমি তাই নিজের কাঁধেই

নিজেই পেতেছি ঘাঁটি!

 

প্রত্যাশা

 

শতবর্ষী হে রাত! আমার চক্ষু ফিরিয়ে দাও—আমি হতে চাই পতঙ্গযুগের

ক্লোরোফিল—আমাকে ফিরিয়ে দাও ঢেঁকির গণসংগীত, ঐতিহ্যের ফসিল আর

উৎসবের কোলাহল—জবান দিলাম, গাইয়ের দুধেল ওলানে ঢুঁসামারা দুষ্টু

বাছুরটির দেখা পেলে—আমি আর কাঁদবো না!

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top