রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


আসছে ‘আঞ্চলিক খালামনি’ লিপির ‘নিয়তি’


প্রকাশিত:
২৩ জানুয়ারী ২০২০ ১৩:৩৯

আপডেট:
২৩ জানুয়ারী ২০২০ ১৪:০০

‘নিয়তি’ বইয়ের প্রচ্ছদ

 

প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। লেখক-পাঠকরা উদগ্রীব হয়ে থাকেন- কখন আসবে বইমেলা! প্রিয় লেখকের নতুন বই পেয়ে যেমন পাঠকরা মহাখুশি হন, তেমনি এতে তৃপ্ত হয় লেখক মন।

আসন্ন বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে ‘আঞ্চলিক খালামনি’ খ্যাত রাজশাহীর লেখক জুবাইদা পারভীন লিপির ‘নিয়তি’ গল্পগ্রন্থ। ১৫টি গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। এটি প্রকাশ করছে পেন্সিল পাবলিকেশন্স। এছাড়াও বইমেলায় আইডিয়া প্রকাশনী ও চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে সংকলনে লেখকের আরও দুইটি গল্প প্রকাশিত হচ্ছে।

‘নিয়তি’ জুবাইদা পারভীন লিপির দ্বিতীয় একক গ্রন্থ। এর আগে ২০১৪ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আমার যত কথা’। বনলতা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন তাঁর ছেলে জুবায়ের হাসনাইন। এছাড়াও গত বছর পেন্সিল পাবলিকেশন্স থেকে সংকলনে প্রকাশিত হয় লেখকের ‘আগুনের লেলিহান শিখা’ প্রবন্ধ।

লিপি জানান, ‘নিয়তি’ বইয়ের গল্পগুলোর প্রধান উপজীব্য বিষয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা, কিছু ভুল-ভ্রান্তি। নিয়তি বা ভাগ্য বলে একটা কথা আছে, এবং তা মানতেই হবে। এখানে ‘মা’ নামক গল্পটিতে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনই মা হবার কিছু কষ্টও উঠে এসেছে।

‘নিয়তি’ নামের গল্পটিতে তুলে ধরা হয়েছে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবার একাকিত্ব। সন্তানদের মানুষ করে বৃদ্ধ বয়সটা কেমন কাটে বৃদ্ধ মা-বাবার, সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে গল্পটিতে। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া সুখ-দুঃখের ঘটনাসহ বর্তমান সমাজের কিছু অবক্ষয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে বইটিতে।

জুবাইদা পারভীন লিপি ১৯৭১ সালের ১৯শে জুলাই রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী সরকারী পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে মেধা তালিকায় চতুর্থ হয়ে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করতেন লিপি। বাবা এ্যাডভোকেট মুহা. আবুল কালামের উৎসাহে স্কুল কলেজে কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নির্ধারিত বক্তৃতায় অংশগ্রহন করতেন। বিভিন্ন সময়ে জাতীয়-স্থানীয় পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। গত দুই বছর যাবত বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে নিয়মিত লিখছেন। বর্তমানে লেখালেখি ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।

ব্যক্তিজীবনে জুবাইদা পারভীন লিপি এক সন্তানের জননী। একমাত্র সন্তান জুবায়ের হাসনাইন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) লেখাপড়া করছেন। স্বামী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। লিপির নানা এমাজ উদ্দিন শেখ একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।

উচ্চ শিক্ষিতা লিপি খুব সুন্দরভাবে প্রমিত বাংলা বলতে পারলেও বেশিরভাগ সময়েই রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। শুধুমাত্র প্রয়োজনে ব্যবহার করেন প্রমিত বাংলা। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সকলের কাছেই পরিচিত লিপিকে তাই শিশু কিশোররা ‘আঞ্চলিক খালামনি’ বলে ডাকেন।

‘নিয়তি’ বইয়ে যা থাকছে-

১। মা

প্রতিটা মেয়েই মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চান। কিন্তু কথা থাকে তারপরও! পঞ্চান্ন বছর বয়সে আতিয়া বেগম লক্ষ্য করছেন তাঁর শরীরে হঠাৎ নতুন করে মাতৃত্বের লক্ষণ! কি করবেন উনি? মেয়ে জামাই নিয়ে ভরা সংসার যে আতিয়া বেগমের!

২। বিউটি পার্লার

লোক ঠকিয়ে বিয়ে করতে রাজি না দীপা। বিউটি পার্লারে অমন সাজগোজ করে নিখুঁত চেহারা নিয়ে কিছুতেই কমিউনিটি সেন্টারে বসে ‘কবুল’ বলে বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয় সে। এই নিয়ে পরিবারে ভীষণ অশান্তি শুরু হয়। দীপা কাউকেই বোঝাতে পারছে না, ওর বান্ধবী শেলির বিয়ের বিষয়টি। দীপার বিয়ের মধ্যে বান্ধবী শেলির বিয়ে! জানতে হলে পড়তে হবে ‘নিয়তি’ বইটি।

৩। স্বপ্নের মত

মিনি তালতলা বাজারের কাছে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পায় না প্রেমিক শিশিরকে। হঠাৎ একজন বয়স্ক মহিলা বলেন, শিশির কেন ঐ ছেলের নাম সোয়েব! মিনির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। মিনি কি খুঁজে পাবে প্রেমিক কে? আজ দিশেহারা মিনি!

৪। যাকাত

কষ্টের সাথে লড়াই করে এমএ পাস করেছে মন্টু। ওরই আপন খালা মন্টুদেরকে বছরে একবার যাকাত দেয়। সেই টাকাতেই মন্টুদের পুরো পরিবার চলে অনেক কষ্টে। আচ্ছা মন্টু কি চাকরী পাবে? আর পেলেই কি গ্রামের অশিক্ষিত বুড়ো মা-বাবাকে নিজের কাছে রাখবে?

৫। মিতুর বিয়ে ও একটি বোরকা

ভীষণ হাসি খুশি চঞ্চল মেয়ে মিতু। ভাই বোনেরা এবার ওর বিয়ে দিতে চায়। ওর মা মনে করে মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ত বয়স বাইশ-তেইশ। মিতুরও কোন আপত্তি নেই বিয়েতে। কিন্তু একি কথা এই যুগে? বিয়ের দিন হতেই নাকি বোরকা পরতে হবে মিতুকে! মিতু কি এতে রাজি হবে ?

৬। লামিয়ার মধুচন্দ্রিমা

বিয়ের কনে সেজে নববধূ লামিয়া স্টেজে বসে আছে। হঠাৎ দেখে ওর শাশুড়িও একই শাড়ি পরেছে ছোট ছেলের বিয়েতে। শুধু শাড়ি নয়, সাজগোজ পুরোটাই লামিয়ার মত। লামিয়া মনে মনে বেশ ঘাবড়ে যায় শাশুড়িকে দেখে। এতটা সৌখিন শাশুড়ির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে তো লামিয়া!

৭। ভালোবাসার ঋণ

রাহেলা বেগমের বাতের ব্যথার সাথে সাথে মনের ব্যথা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। দু’চোখে একটুও ঘুম নেই রাহেলার। উনার মনের মধ্যে একটি শঙ্কা, যদি রানুর শাশুড়ি জেনে যায় রানুর আসল পরিচয়! আসল পরিচয় ফাঁস হলে কি হবে রানু আর রাহেলার!

৮। জীবনতরী

পেটের ক্ষুধার কাছে মান-ইজ্জত, সম্মান সবই কি তুচ্ছ! জবা ভাবে রোজ রাতে। সন্ধ্যা নামতেই জবার জীবনে ঘোর অমাবশ্যা নেমে আসে। নিজের দুধের শিশুর খাবার জোটাতে জবাকে হতে হয় বাপের বয়সী পুরুষের খাবার! শেষমেষ কি করবে জবা?

৯। নিয়তি

লেখাপড়া শিখে উচ্চশিক্ষিত হবার জন্য যা কিছু করা লাগে, তাইতো করে মা বাবা। সন্তানের জন্যই মা বাবার যত ভাবনা! কিন্তু সন্তান কি কখনো মা বাবার কথা ঠিক এভাবেই ভাবে? যদি তাই ভাবতো তবে এত এত বৃদ্ধাশ্রম কেন তৈরী হচ্ছে? যারা শেষ বয়সে জানটুকরা সন্তানের সাহচর্য পান না, কেমন কাটে তাদের নিত্যকার দিন?

১০। প্রতারক

দুই মেয়ে এক ছেলে আর প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার আজিম সাহেবের। কেউ কখনো বলতে পারবে না আজিম মানুষটা খারাপ। কিন্তু রোড এ্যাকসিডেন্টের পর কি যে হলো সবাই আজিমকে ঘৃনা করছে। বড় মেয়ে তো মুখই দেখবে না বাবার! এমন সময়ই একটা ফোন এলো! কে কে ফোন করলো তবে!

১১। পেটুক আমি (রম্য)

দুই বান্ধবী ঢাকা শহরে খুব বেড়াচ্ছে। সারাদিন হৈ হৈ করে ঘুরছে আর বেশ কিছু নাম করা জায়গার খাবার খাচ্ছে। এত খেয়ে রাতে বাড়ি ফেরার পথে কি ঘটলো যে ওরা গ্রীনরোডে গাড়ি থামালো! লিফটের ন’তলার বাটন চেপেই ওরা যেন বোবা হয়ে গেলো!

১২। একটা ভুল নিঃশ্বাস

সন্তান আল্লাহর দান। কথাটা প্রায় সময়েই ভুলে যায় আমরা। তারপর আমরা শুরু করি খোদার উপর খোদকারী করা! কিন্তু সেটা যে পরবর্তিতে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা বুঝি রবি-সিমিরও জানা ছিলো না! সিমিতো চলেই গেলো, রবি কেমন আছে পালিত কন্যা চাঁদনিকে নিয়ে? ঐ পরিবারে চাঁদনি এখন কতটা আলো ছড়াচ্ছে?

১৩। আশার কথা

দুনিয়াটা খুব সহজ জায়গা নয়। এখানে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয়। এমনই জীবন যুদ্ধে নেমেছে আশা। কিন্তু ও একা কি পারবে এই লড়াইয়ে জিতে ভালোভাবে নিজের জায়গা করে নিতে ? কেউ কি আশার কথা শুনবে ?

১৪। স্বার্থসাধক

‘প্রেমে মজিলে মন কিবা হাঁড়ি কিবা ডোম!’ সত্যি খনার এই বচন খুবই সত্যি! স্কুল শিক্ষক তৌফিককে, রুমা নামের হতদরিদ্র মেয়েটি ছলে বলে কলাকৌশলে বিয়ে করলো। কেমন আছে ওরা দুজনে? ইদানিং তৌফিক নিজের মনেই বলে, বিসিএস ক্যাডার স্বামী যদি স্কুল শিক্ষিকা বউ নিয়ে চলতে পারে এই সমাজে, তবে বিসিএস ক্যাডার বউ কেন স্কুল শিক্ষক স্বামীর পরিচয় দিতে লজ্জা পায়?

১৫। পাসওয়ার্ড

আমাদের সকলের জীবনের পাসওয়ার্ড কার হাতে? নিশ্চয়ই আল্লাহর হাতে! তবে কেন এত অশান্তি রিমি আকিবের জীবনে? নিত্যদিনের ফেসবুক পাসওয়ার্ড চাওয়া-চাওয়ি আর হুমকি, এসব কি ওদের দু’জনকে তবে আলাদা করে দিবে? নষ্ট হয়ে যাবে এত বছরের সংসার জীবন!

 

আরপি/ এএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top