রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


দেশে চাহিদার চেয়ে ২ লাখ ২৪ হাজার টন লবণ বেশি


প্রকাশিত:
২০ নভেম্বর ২০১৯ ২১:৪৪

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৯

ফাইল ছবি

চলতি বছর দেশে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড। দেশে চাহিদার চেয়ে ২ লাখ ২৪ হাজার টন লবণ বেশি আছে। কিন্তু এসব কিছু ছাড়িয়ে সংকটের গুজবে মঙ্গলবার অস্থির হয়ে উঠে লবণের বাজার।

এদিন রাজধানীসহ দেশের কোথাও কোথাও ৩৫ টাকার প্রতি কেজি লবণ ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এক গুজবে পেঁয়াজের পর এ পণ্যটির বাজারও কিছু সময়ের জন্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। গুজব ছড়ানোর পরপরই সরকার, চাষী ও ব্যবসায়ী- সব পক্ষই বলছে, দেশে লবণের কোনো সংকট নেই।

আগের যে কোনো বছরের তুলনায় এবার লবণের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ।

এদিকে লবণের দাম নিয়ে গুজব ছড়ানোর ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যে ১১৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

এছাড়াও ২৭ জনকে জরিমানা ও ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ক্রেতাদের কাছে এক কেজির বেশি লবণ বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে।

কেউ গুজব ছড়ালে অথবা অতিরিক্ত দাম নিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন হুশিয়ারি দিয়ে প্রেস নোট জারি করেছে সরকার।

পাশাপাশি বলা হয়েছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকট রয়েছে- এ মর্মে গুজব রটনা করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে দেশে ৬ লাখ টনের বেশি লবণ মজুদ আছে। আর প্রতি মাসে দেশে ভোজ্য লবণের চাহিদা ১ লাখ ১০ হাজার টন।

সে হিসাবে ৫ মাসেরও বেশি লবণ মজুদ আছে। এছাড়া নভেম্বরের শেষে নতুন মৌসুম শুরু হবে। ফলে লবণে সংকটের প্রশ্ন আসে না।

তিনি বলেন, উল্টো আমাদের কাছে তথ্য ছিল অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে এ বছর ব্যবসায়ীরা লবণ বিক্রি করতে পারছিলেন না।

চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি। তিনি বলেন, এ বছর ১৮ লাখ টনের বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। চাহিদার তুলনায় যা অনেক বেশি।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও চট্টগ্রামের এমএন কবির অ্যান্ড ব্রাদারের মালিক নূরুল কবির বলেন, লবণ নিয়ে যা হচ্ছে সবই গুজব। দেশে লবণের কোনো সংকট নেই। কমপক্ষে ৩ মাসের লবণ মজুদ আছে।

ভোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দয়া করে কেউ প্যাকেটের গায়ের চেয়ে বেশি দামে লবণ কিনবেন না।

এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। লবণসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এর নম্বর হচ্ছে- ০২-৯৫৭৩৫০৫ (ল্যান্ড ফোন), ০১৭১৫-২২৩৯৪৯ (সেলফোন)। লবণ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। অপপ্রচার চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে।

কোনো ব্যবসায়ী লবণের দাম বাড়ালে বাজার মনিটর করে তাদের জেল-জরিমানা করতে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ টনেরও বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। প্রতি মাসে আমাদের ভোজ্য লবণের চাহিদা থাকে কম-বেশি ১ লাখ টন।

বিসিকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৬ লাখ ২১ হাজার টন। কিন্তু ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে যা ৩ লাখ টন বেশি। এছাড়াও এ বছরের এ উৎপাদন এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

এদিকে লবণের অতিরিক্ত দাম চাইলে ক্রেতাদের সরাসরি ফোন দিতে বলেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মঞ্জুর শাহরিয়ার গণমাধ্যমে দুটি মোবাইল নম্বর দিয়েছেন।

এগুলো হল- ০১৭৭৭-৭৫৩৬৬৮ এবং ০১৬২৪২৭৬০১২। এছাড়া ৯৯৯-এ ফোন দিতে পুলিশের পক্ষ থেকেও অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর

আরপি/এমএইচ


বিষয়: লবন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top