রাজশাহী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


না ফেরার দেশে ফকির আলমগীর


প্রকাশিত:
২৪ জুলাই ২০২১ ০৬:১৬

আপডেট:
২৪ জুলাই ২০২১ ১৫:৫১

ফকির আলমগীর। ফাইল ছবি

একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর আর নেই। করোনার কাছে হেরে গেলেন লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায়। শুক্রবার (২৩ জুলাই) ১০ টা ৫৬ মিনিটের দিকে রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। স্ত্রী, তিন ছেলে রেখে গেছেন ফকির আলমগীর।

তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে মাশুক আলমগীর রাজিব। তিনি জানান, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর রাত ১০টা ৫৬ মিনিটের দিকে তাঁর মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

ফকির আলমগীর বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বর ও খুসখুসে কাশিতে ভোগার পর চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে গত ১৪ জুলাই কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার পর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় রাতে গ্রিন রোডের ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউ প্রয়োজন পড়লে গুলশানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকায় জটিলতা বাড়তে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফকির আলমগীরের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়।

ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফকির আলমগীর। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এ শিল্পী। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর।

ফকির আলমগীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।

সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পর্যন্ত পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্‌দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top