রাজশাহী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


৩৫৪০ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে যাবে তো?


প্রকাশিত:
২২ আগস্ট ২০১৯ ২৩:২৩

আপডেট:
২২ আগস্ট ২০১৯ ২৩:২৬

 

আজ বৃহস্পতিবার ৩৫৪০ জন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা রয়েছে। এর আগে ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায়, একজনকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। আজও যদি কেউ রাখাইনে ফিরতে না চায়, তাহলে এ নিয়ে আরেক দফা ব্যর্থ হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা। বিবিসির বরাত দিয়ে প্রকাশিত জাগো নিউজের সংবাদে এমনটা জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। কিন্তু প্রত্যাবাসনের খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত শরণার্থীরা। তারা বলছেন, মিয়ানমার সরকার তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন করবেন না।

এছাড়া রাখাইনে ফেরার মতো সহায়ক পরিবেশ না থাকায় সেখানে ফিরতে চাইছে না রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও তাদের ফেরত পাঠাতে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু না চাইলে জোর করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতিতে আজ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।


কক্সবাজারের উখিয়ায় ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে বাস করেন খিন মং। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করা সংগঠন রোহিঙ্গা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। খিন মন জানান, এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ইউএনএইচসিআরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোর করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারপরও জোর করে ফেরত পাঠানো হবে কি না, সেজন্য তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে।

প্রত্যাবাসনের জন্য আজ ২২শে আগস্ট সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। মিয়ানমারের তরফ থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য এই তারিখ প্রকাশের পর বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশন জানায়, ৩৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে বৃহস্পতিবার (২২ অগাস্ট) ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কাজ চলছে।

২০১৭ সালের ২৫শে আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এরপর জাতিসংঘসহ নানা সংস্থার নানা উদ্যোগের পর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সরকারের আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৮ সালের ২৩শে জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।

এছাড়া গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায়, একজনকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। আজও যদি কেউ রাখাইনে ফিরতে না চায়, তাহলে এ নিয়ে আরেক দফা ব্যর্থ হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা।

বিবিসি বাংলাকে রোহিঙ্গা নেতা খিন মং বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা শিবিরের কেউই কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চায় না। এমনকি যেসব পরিবার প্রত্যাবাসনের তালিকায় রয়েছে, তারাও এ বিষয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গারা জানিয়ে দিয়েছে, তার মিয়ানমারে ফেরত যেতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার সরকার যে ভেরিফিকেশন কার্ডের কথা বলছে, তা আসলে নিতে চান না তারা। এমন কার্ড বিদেশিদের দিয়ে থাকে মিয়ানমার সরকার। এর পরিবর্তে মিয়ানমারের বৈধ ও পূর্ণ নাগরিকত্বের স্বীকৃতি চান তারা।

খিন মংয়ের দাবি, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের যেসব ঘরবাড়িসহ সব ধরনের সম্পত্তি অন্যরা দখল করে নিয়েছে, সেগুলো উদ্ধার করে ফেরত দিতে হবে। আর এসব দাবি নিশ্চিত হলেই স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি তারা।

প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিয়ানমার সরকার তাদের দাবি মেনে না নিলে ফেরত যেতে চান না তারা।

প্রত্যাবাসনের জন্য যাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চান কিনা তা জানতে ওই রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন, ইউএনএইচসিআরসহ সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা এক নারী রোহিঙ্গা শরণার্থী জানান, তিনি ভয়ে সাক্ষাৎকারই দিতেই যাননি।

বুধবার (২১ আগস্ট) রোহিঙ্গাদের এমন আতঙ্কের বিষয়ে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে কর্মস্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ রত ৬১টি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। যাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

আরপি/এএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top