রাজশাহী রবিবার, ১২ই মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১


সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিব্রতকর : হাইকোর্ট


প্রকাশিত:
১৫ আগস্ট ২০২২ ০৪:৩৩

আপডেট:
১২ মে ২০২৪ ০০:১৪

ছবি: সংগৃহিত

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশিদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়নি বলে সুইস রাষ্ট্রদূতের দাবি অস্বীকার করেছে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে তারা বলেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর পক্ষ থেকে যে বিভিন্ন সময় তথ্য চাওয়া হয়েছে।

আজ রবিবার (১৪ আগস্ট) স্বপ্রণোদিত হয়ে জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য দেন আইনজীবীরা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সঠিক নয় বলেছেন। ’


বিএফআইইউ এর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে বিএফআইইউ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে থেকে অনুরোধ করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।

অর্থপাচার ও সন্ত্রাসীকাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ বিদেশি এফআইইউদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এ তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব (ইএসডব্লিউ)। বাংলাদেশ ২০১৩ সালে ইএসডব্লিউ-এর সদস্য হয়। এরপর এসডব্লিউ-এর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউ-কে এ তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড।

বিএফআইইউ থেকে পাওয়া এ তথ্য তুলে ধরে আইন কর্মকর্তা মানিক বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত না জেনে বক্তব্য দিয়েছেন। উনি ঠিক বলেননি।

তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘তার মানে বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে, উনারা তথ্য দেননি। ’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের একটা বক্তব্য দিতে হবে। কারণ ‘ডিক্যাব টকে’ উনার দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয়। হুট করে কীভাবে এমন কথা বললেন, এটা আমাদের বোধগম্য নয়। ’

এসময় দুদকের আইনজীবী আদালতকে জানান, ‘২০১৪, ২০১৯ এবং ২০২১ সালে বিএফআইইউ থেকে দুদক তথ্য চেয়েছিল। দুদকের এ অনুরোধে বিএফআইইউ তথ্যের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর কাছে অনুরোধ করে। কিন্তু বিএফআইইউ শুধু একটা তথ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রদূত এটা জানেন না। জানলে এমন বক্তব্য দিতেন না। এটা টোটালি ইগনোরেন্স (অজ্ঞতা) থেকে দেওয়া। ’

এ পর্যাায়ে আদালত বলেন, ‘এ বক্তব্য বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। দুদক-রাষ্ট্রপক্ষ যে তথ্য ও বক্তব্য দিয়েছে, তা তাঁর (রাষ্ট্রদূত) বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আপনাদের (রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক) বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিভ্রান্তি দূর হবে। অর্থ জমাকারীদের বিষয়ে আপনারা তথ্য চেয়েছেন। তারা দিচ্ছে না। দিলেও শর্ত সাপেক্ষে। আপনারা তথ্য চেয়েছেন ও পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন, পরিষ্কার করেছেন। মানুষ মূল্যায়ন করবে সত্যি বলেছেন কি না । ’

এরপর আদালত আগামী ২১ আগস্ট পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের দেওয়া এসব তথ্য হলফনামা করে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাবের এক অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এসব বিষয়ে (তথ্য পাওয়ার বিষয়ে) কীভাবে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়, সে বিষয়ে সরকারকে সব ধরনের তথ্য আমরা দিয়েছি। কিন্তু আলাদাভাবে অর্থ জমা করার তথ্যের বিষয়ে কোনো অনুরোধ আসেনি। ’

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সেখানকার ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক, যা আগের বছরের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস। বিচারাধীন সে রিটে কয়েক দফা শুনানি ও আদেশ হয়। গত ৩০ জানুয়ারি আদেশে আদালত সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে দেশের কারা অর্থ জমা রেখেছে বা পাচার করেছে, তা জানতে চান। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেই মামলাটি বিচারাধীন।

আরপি/ এসএডি-৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top