রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


পাবনায় পুলিশ স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন


প্রকাশিত:
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:০১

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১৯

 স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন। ছবি: প্রতিনিধি

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের ওয়াদুদ হোসেনের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানার প্রতারণা, মিথ্যাচার ও অপকর্ম নিয়ে পাবনা প্রেসক্লাবে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাঁথিয়ার দাড়ামুদা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের মেয়ে ও সোহেল রানার স্ত্রী জালেকা খাতুন।

জালেকা খাতুন জানান, গত ৩০/০১/২০১২ খ্রিঃ তারিখে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরির জন্য নগদ ৫ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে সোহেল রানা তাকে বিয়ে করে। কিন্তু চাকুরীর স্বার্থে সোহেল রানা এই বিয়ের কথা গোপন রাখে। পরবর্তীতে রেশন উত্তোলনসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে গত ২১/০২/২০১৪ খ্রিঃ তারিখে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্যে দ্বিতীয় আরেকটি কাবিননামা করা হয়।

প্রায় ৪ বছর যাবৎ স্বামী-স্ত্রী রুপে তাদের সংসার জীবন ভালোভাবেই অতিবাহিত হয়। এর মধ্যে সোহেল-জালেকা দম্পতির ঘরে পুত্র সন্তান আবু হুরাইরার জন্ম হয়। বর্তমানে তার বয়স ৫ বছর।

এরইমধ্যে গত ২৭/০৮/২০১৬ খ্রিঃ তারিখে সোহেল রানার বোন শোভার চাকুরীর জন্য স্বামী সোহেল রানা, শ্বশুর, শাশুড়ী ও বাড়ীর অন্যান্য লোকজন জালেকার ভাইদের কাছ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক এনে দেওয়ার দাবী করে। এতে অসামর্থ্যরে কথা জানালে তারা সকলে মিলে জালেকাকে বেদমভাবে মারপিট করে সন্তানসহ বাড়ী থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকে জালেকা ও তার সন্তান ভাইদের বাড়িতেই অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে।

জালেকার স্বামী সোহেল রানা বা তার বাড়ীর লোকজন তাদের কোন খোঁজখবর না নেয়ায় নিরুপায় হয়ে জালেকা গত ০৮/০২/২০১৭ খ্রিঃ তারিখে পাবনার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। যার নং- সি.আর-৩২/২০১৭ (সাঁথিয়া)। মামলাটি বর্তমান চলমান অবস্থায় রয়েছে। সোহেল রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদী ও স্বাক্ষীদের একের পর এক হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬/০৯/২০১৭ তারিখে দু’জন স্বাক্ষীসহ জালেকা যৌতুক মামালায় আদালতে হাজিরা শেষে বাড়ী ফেরার জন্য পাবনা জেলা পরিষদের গেটের সামনে অটোরিক্সার জন্য অপেক্ষাকালে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে সোহেল রানা এবং আরও ৬/৭ জন লোক দেশীয় অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা জালেকা ও স্বাক্ষীদের বেদমভাবে মারপিট করে। মামলা প্রত্যাহার না করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয় এবং জোরপূর্বক নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে পাবনা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পাবনা থানার মামলা নং-৩৭, তাং-১৪/১০/২০১৭ খ্রিঃ।

এছাড়া গত ২৪/০২/২০১৭ খ্রিঃ তারিখে দেনমোহর ও খোরপোষের দাবীতে জালেকা বাদী হয়ে সোহেল রানার বিরুদ্ধে জেলা পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা পারিবারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। যার পারিবারিক মোকাদ্দমা নং-৭/১৭। এ মামলায় পারিবারিক আদালত সোহেল রানাকে ৩ মাসের কারাদন্ড এবং দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ মোট ৬ লাখ ২৭ হাজার ৩ শত ৩৩ টাকা ৫ কিস্তিতে জালেকাকে প্রদানের রায় ঘোষণা করে। রায় ঘোষণার পর সোহেল রানা ৪০ হাজার টাকা আদালতে জমা দিয়ে অবশিষ্ট টাকা জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তাকে জামিন দেয়।

জামিনে বের হয়ে কিস্তির টাকা জমা না দিয়ে সোহেল রানা পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপলি মামলা দায়ের করলে আদালত তার আপিল মামলা খারিজ করে দেন। এরপরও সোহেল রানা দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ আদালত নির্ধারিত কিস্তির টাকা জমা দেয় নি। এদিকে জালেকা শিশুপুত্র সাথে নিয়ে দেনমোহর ও খোরপোষের টাকা পাওয়ার আশায় বছরের পর বছর আদালতে ঘুরছে।

এছাড়াও জালেকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সিকিউরিটি সেলের এ.আই.জি সহ পুলিশের বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘুরতে ঘুরতে হাঁপিয়ে উঠেছে।

সোহেল রানার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার (হাইওয়ে) বগুড়া রিজিয়ন, বগুড়া কার্যালয়ে একটি বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয় যার নং-০৪/১৭। উভয়পক্ষের সাক্ষ্য প্রমাণাদি গ্রহণ শেষে উক্ত মামলার রায়ে সোহেল রানাকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত এবং পরে চুড়ান্তভাবে চাকুরিচ্যুত করার আদেশ প্রদান করা হয়। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে গত ১০/০৩/২০১৯ খ্রিঃ তারিখে সোহেল রানা কর্তৃক বিভাগীয় আপিল মামলা দায়ের করা হলে আপিল আদালত তার মামলা খারিজ করে দেয়। এরপর সোহেল রানা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বগুড়া আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। যার নং ৩৬/১৯। বর্তমানে সোহেল রানা এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মামলায় তাকে বিভাগীয় মামলার সাজা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এদিকে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আদালতের মামলা সম্পর্কে মামলার বাদী এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবিকে কোন তথ্য দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন জালেকা।

এদিকে একের পর এক জালেকা ও তার সন্তানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে সোহেল রানা। এতে নাবালক সন্তানকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জালেকা। এ ব্যাপারে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

আরপি/আআ-১৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top