প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি
রাজশাহীসহ দেশব্যাপী পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন তরুণেরা। রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের পক্ষ থেকে এ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আজ রোববার (১৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এর মাধ্যমে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস সভাপতি মোঃ শামীউল আলীম শাওন ও কোষাধ্যক্ষ মোঃ আতিকুর রহমান আতিক যৌথ স্বাক্ষরিত এ স্বারকলিপিতে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন ও সুরক্ষায় রাজশাহীসহ দেশব্যাপী পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫ কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা দাবি জানানো হয়।
স্বারকলিপিতে উল্লেখিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে : ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর ৪ (২) ধারা এবং ৬ক (২) ধারা সহ প্রয়োজন অনুযায়ী ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ -কে যুগোপযোগী সংস্কার করা, তামাকের ক্ষতিকর দিক এবং তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণমাধ্যম তথা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক তামাক বিরোধী ও আইন সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
একইসাথে তামাক বিরোধী ও আইন সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান কার্যক্রমে স্ব-স্ব স্থানের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও তরুণ সংগঠনগুলোকে সংযুক্ত করার দাবিও জানানো হয়েছে। এছাড়াও তামাক চাষ রোধকল্পে সাধারণ জনগণের মধ্যে জনচেতনতা সৃষ্টি এবং তামাকচাষীদের বিকল্প ফসল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি ব্যপকভাবে পরিচালনা করার জন্যও স্বারকলিপিতে দাবি জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে প্রদানকৃত স্বারকলিপির অনুলিপি রেজিস্ট্রি ডাকযোগে যথাক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপচিালক ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (যুগ্ম সচিব) বরাবরও প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহীতে পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫ কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা সহ তিন দফা দাবিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, নগর পুুলিশের কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক, জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন ও জেলার সিভিল সার্জন ডা. মহা. এনামুল হক কে ইয়্যাসের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
এসডিজি’র তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা ‘সবার জন্য সুস্বাস্থ্য’ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে WHO Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) বাস্তবায়ন এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধকে কৌশল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১৯ সালে ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করা হবে’ বলে ঘোষনা দেন।
অন্যদিকে, আইন অনুসারে পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫-এর ৭ ও ৮ ধারা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন।
কিন্তু তারপরেও প্রকাশ্যে ধূমপান রোধে আইনের দৃশ্যমান প্রয়োগ হয়নি বলে দাবি করে অবিলম্বে রাজশাহীসহ দেশব্যাপী পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহণে প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫ কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের যুযোপযোগী সংস্কারের জোর দাবি জানানো হয়।
আরপি/এমএএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: