রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


আগামীকাল সিরিয়ায় সংসদ নির্বাচন


প্রকাশিত:
১৯ জুলাই ২০২০ ০১:৫৩

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০৩:২৬

ফাইল ছবি

সিরিয়ার আগামীকাল রোববার (১৯ জুলাই) সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সেদেশের নির্বাচন পরিচালনা কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের কারণে এর আগে দুই বার এই নির্বাচনের তারিখ পেছানো হয়েছে। এবার করোনাভাইরাসের মধ্যেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ কারণে ভোটারদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ করা হয়েছে। আরব নিউজের খবরে এমনটাই জানানো হয়েছে।

নির্বাচন পরিচালনা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, সংসদের ২৫০ আসনের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন দুই হাজার একশ' জন। সারা দেশে সাত হাজার ৩১৩টি ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সিরিয়ায় ২০১২ সালে সংবিধান সংশোধন করা হয়। এরপর এ পর্যন্ত দু’টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের মোট ১৪টি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন রয়েছে আলেপ্পোতে। সেখানে আসন সংখ্যা ৫২। এরপরই আসনের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে দামেস্ক ও হোমস। সেখানে যথাক্রমে ২৯ ও ২৩টি আসন রয়েছে। সিরিয়ায় সংবিধান সংশোধনের পর ২০১২ সালের ৭ মে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল।

বর্তমানে বাশার আল-আসাদের বড় মিত্র ইরান-রাশিয়া। সিরিয়ায় শেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফোর্ড বলছেন, রাশিয়া মিত্র হিসেবে যে সিরিয়াকে পেয়েছে অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল, এবং এ ব্যাপারে কিছু করার উপায় তাদের নেই। একটা বিরাট মৃত পাখীর মত সিরিয়া রাশিয়ার গলায় পেঁচিয়ে আছে।

তবে ফোর্ড বিশ্বাস করতেন যে বাশার আসাদ এখনো ক্ষমতাসীন থাকবেন, তাকে কোথও যেতে হবে না।

“পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো আশা করছে যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বাশার আসাদকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কিন্তু আমার মনে হয় সেটা একটা আশা মাত্র – কোন বিশ্লেষণ নয়। কারণ বাশার আসাদের পরে কে আসবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।“

বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমান সময়ে খুবই সংকটের মধ্যে আছে। এর জন্য আসাদের বন্ধু বা শত্রূ – কারোরই হাতে এখন এমন শত শত কোটি টাকা নেই যা দিয়ে সিরিয়াকে আবার গড়ে তোলা যাবে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দফতরের প্রধান স্যার মার্ক লোকক বলছেন, সিরিয়ানরা এখন গণক্ষুধার শিকার যা এক বা দু‌ বছর আগেও ছিল না। এবং এ ঘটনা ঘটছে এমন সময় যখন পৃথিবী কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক পরিণাম সবেমাত্র উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।

সিরিয়ায় খাবারের দাম এবছর দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে লেবাননে ব্যাংক ব্যবস্থায় ধস। এতদিন সিরিয়া বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগের জন্য লেবাননকে কাজে লাগাতো। তবে সম্প্রতি লেবানেনর ব্যাংকগুলো পুরোপুরি বসে যাওয়া ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করে – তখন সিরিয়ার মুদ্রার মান ধপাস করে পড়ে যায়।

সিরিয়ায় এখনও যারা চাকরিবাকরি করছেন, তাদের গড় মাসিক বেতন ৫০ হাজার সিরিয়ান পাউন্ড। গত বছরের শেষ দিকে ‍এর মূল্যমান ছিল ৫০ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান। আর এখন তা নেমে এসেছে ১২ ব্রিটিশ পাউন্ডে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকেই দায়ী করছেন।

সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে যাচ্ছে এ সপ্তাহেই। এসব নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য শুধু সিরিয়া নয়, তার প্রধান দুই মিত্র ইরান ও রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে তার সবচেয়ে বড় শত্রূ বলে মনে করে।

যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য যাই হোক, নতুন এসব নিষেধাজ্ঞা সিরিয়ার অর্থনীতির যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটাকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। আসাদের ক্ষমতা সংহত কিন্তু বিদ্রোহী তৎপরতা থামেনি। তবে প্রেসিডেন্ট আসাদ সম্প্রতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কিছু সামরিক বিজয়ের কারণে ক্ষমতায় অনেক বেশি সংহত এবং নিরাপদ। বিশেষ করে রাশিয়া এ কাজে তাকে সাহায্য করেছে।

কিন্তু এখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এ যুদ্ধের শেষ পর্ব শান্তি নিয়ে আসতে পারবে না। উত্তর সিরিয়ার ভাগ্য এখন সিরিয়ানরা নির্ধারণ করবে না- করবে রাশিয়া , তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

ইসলামিক স্টেটের জিহাদিরা এখন মধ্য সিরিয়ার মরুভূমিতে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে চেষ্টা করছে। তারা আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে সরকার বাহিনীর সৈন্যদের হত্যা করছে। দক্ষিণ সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণ করেছে – কিন্তু গোপন বিদ্রোহী তৎপরতা চলছেই। এখন এই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্ষোভকারীরা আবার ফিরে এসেছে রাজপথে। তারা খোলাখুলিই ২০১১ সালের শ্লোগানগুলো দিচ্ছে, যার মূল দাবি বাশার আসাদ সরকারের পতন।

 

আরপি/আআ-০৬



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top