রাজশাহী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১


লকডাউনে গরিবের জন্য ‘এটিএম’,পদ্ধতিতে চাল


প্রকাশিত:
১৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৬

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২১

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বের শতাধিক দেশে লকডাউন জারির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন দেশের কোটি কোটি নিম্নবিত্ত এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

করোনা সঙ্কটে বিপর্যয়ের মুখে পড়া নিজ দেশের গরীব মানুষের সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন ভিয়েতনামের এক উদ্যোক্তা। দেশটির হো চি মিন শহরে নিজ উদ্যোগে একটি চালের এটিএম বুথ বসিয়েছেন তিনি; এটির আবিষ্কারকও তিনিই। কর্মহীন মানুষদের সহায়তার জন্য স্থাপিত এই বুথ চালু থাকছে ২৪ ঘণ্টা। সেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে চাল নিতে পারবেন দরিদ্র শ্রেণির মানুষ।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি বিপর্যয় ডেকে আনলেও ভিয়েতনামে এখন পর্যন্ত রোগী পাওয়া গেছে মাত্র ২৬২ জন। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর- করোনায় দেশটিতে এখন পর্যন্ত একজনও মারা যাননি। চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ভিয়েতনাম সরকার দেশটিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে; যে কারণে এই দেশটি করোনা নিয়ন্ত্রণে এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছে।

গত ৩১ মার্চ থেকে ভিয়েতনামের সরকার দেশজুড়ে ১৫ দিনের সামাজিক দূরত্ব কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর ফলে দেশটির অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়; কর্মহীন হয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।

এনগুয়েনে থি লির স্বামী কর্মহীনদের একজন; যিনি করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। ৩৪ বছর বয়সী তিন সন্তানের মা এই নারী বলেন, চালের এই এটিএম আমাদের জন্য খুবই উপকারী। এই ব্যাগ চাল দিয়ে আমাদের একদিন ভালোভাবেই চলে যায়।

তিনি বলেন, এখন আমাদের অন্যান্য খাবার দরকার। আমাদের প্রতিবেশিরা কিছু কিছু সময় সামান্য খাবার দেন। এছাড়া আমাদের কাছে ইন্সট্যান্ট নুডলস আছে।

চালের ওই এটিএম মেশিন থেকে একজন একবারে দেড় কেজি চাল নিতে পারেন। তবে এই চাল সবাই নিতে পারেন না। যারা ফুটপাতের বিক্রেতা কিংবা হকার ছিলেন, লটারির টিকিট বিক্রি করতেন অথবা যারা দিন এনে দিন খেতেন শুধুমাত্র তারাই বুথ থেকে চাল নিতে পারেন।

চালের এটিএম বসানোর নেপথ্যের উদ্যোক্তা হো চি মিন শহরের বাসিন্দা হোয়াং তুয়াং আনহ। পেমায় ব্যবসায়ী হোয়াং প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এই এটিএম তৈরি করেছেন। এর আগে হো চি মিন শহরের হাসপাতালগুলোতে স্মার্ট ডোরবেল দিয়েছিলেন তিনি।

এখন তার তৈরি এই চালের এটিএম বুথ দেশটির রাজধানী হ্যানয়, হুয়ে এবং ডানাং শহরেও বসানো হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। বুথে সরাসরি কোনো মানুষ না থাকলেও দূর থেকে সেটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য কর্মী রয়েছে। হোয়াং লেন, মহামারির কারণে দেশের চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটেও মানুষ যাতে খাবার এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী পায় সেটিই নিশ্চিত করতে চান তিনি।

তিনি বলেন, আমি এই মেশিনটির নাম দিয়েছি চালের এটিএম। কারণ মানুষ এটি থেকে চাল তুলতে পারেন। সেখানে এখনও অনেক ভালো মানুষ আছেন; যারা তাদের (চালগ্রহীতা) দ্বিতীয় সুযোগ দিতে চান।

লি নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমি ইন্টারনেটে এই রাইস এটিএমের ব্যাপারে জেনেছি। এটি যাচাই করার জন্য এখানে এসেছি। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আসলেই চাল বেরিয়ে আসছে। মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা এটি চালু রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন লি। এখন বাসা ভাড়া পরিশোধ করাই পরিবারের সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে জানান তিনি।

 

আরপি/ এমবি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top