রাজশাহী সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


রাবি ছাত্রলীগ: প্রক্সিকাণ্ড, অপহরণকারী, মাদকসেবী ও বিবাহিতদের নিয়ে মাঠ গুছাচ্ছে বাবু


প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:১৩

আপডেট:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:১৪

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৬ তম বার্ষিক সম্মেলন আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর। ইতোমধ্যে দলীয় মাঠ গুছিয়ে ক্যাম্পাসে প্রচারণা শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। তবে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু তার সক্রিয়তার জন্য বেশি আলোচিত হচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে ক্যাম্পাসে রাজনীতিতে কাদের দ্বারা সক্রিয় তিনি?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী অধিকাংশ নেতাকর্মী তার সাথে যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রক্সি মামলায় অভিযুক্ত, বিবাহিত, ড্রপআউট নেতা, মাদকাসক্ত ও ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বিতর্কিত নেতারা তার সাথে যুক্ত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি করছেন। এছাড়াও শেরেবাংলা হলের একটি রুমকে কেন্দ্র করে তিনি রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যে রুমে নিয়মিত মাদকের আড্ডা চলে এবং তার সাথে থাকা অধিকাংশ নেতা-কর্মীর সেখানে আড্ডা দিতে যায় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাবির গণিত বিভাগের দুই ছাত্রীকে প্রাণনাশের হুমকি ও তাদের বন্ধুদের মারধরের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের তিন নেতা ও এক কর্মীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন শাখা ছাত্রলীগের উপ-ক্রীড়া সম্পাদক রাব্বিউল ইসলাম রূপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান, জিয়াউর রহমান হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ ও সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী ফরহাদ হাসান। তারা সবাই এখন মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর সাথে রাজনীতি করছেন।

আরও পড়ুন: আমের বাগানে ২ শতাধিক ফেনসিডিল, রেহাই হলো না যুবকের

এদিকে ছাত্রলীগের উপ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রুপক ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অনেক আগেই ড্রপ আউট হয়েছেন। বাবুর সাথে রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখছেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন ও সহ-সম্পাদক আল-মামুন। তারা দুজনই বিবাহিত।

রাবি শাখার দুই বিতর্কিত নেতা জোহা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিন ইসলাম ও সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। গত মে মাসে তারা দুজন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারিকে উঠিয়ে এনে টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে। এছাড়া নিয়মিতভাবে হলের সিট বাণিজ্য ও আবাসিক শিক্ষার্থীকে জোর করে নামিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করে। এজন্য হল প্রশাসন মাজহারুলকে হল থেকে বের করে দেয়। এছাড়া স্বাধীনতা দিবসের মতো জাতীয় দিবসের খাবার লুট করারও অভিযোগ রয়েছে মোমিনের বিরুদ্ধে। তারাও আছেন বাবুর সাথে প্রথম সারির কাতারে।

এছাড়া সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্সি ও অপহরণ মামলার আসামী শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাকোয়ান সিদ্দিক (প্রাঙ্গণ) কে এই ঘটনার আগে বাবুর মটরসাইকেল শোডাউন ড্রাইভার হিসেবে দেখা গেছে। বর্তমানে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কৃত প্রাঙ্গন এখন পলায়িত আছেন।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা। তারা বলছেন, যার রাজনৈতিক সহচররা আসামী, ড্রপআউট, মাদকসেবী হয় সে কিভাবে ভালো হতে পারে। হতে পারে সেও এই সকল কাজে পরোক্ষভাবে যুক্ত আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও রাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ হলো বাংলাদেশের পুরানো একটি রাজনৈতিক সংগঠন। ছাত্রলীগ শুরু থেকেই এই সংগঠনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ব্যাপারে একেবারেই সুস্পষ্ট যে, যারা আন্দোলন সংগ্রাম করার পাশাপাশি যুগপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে সে রকম ছাত্রই আসলে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা জরুরী। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যাদের মধ্যে নেই, তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেউ নেতৃত্বে আসুক এটা আমার প্রত্যাশা না। আর ছাত্রলীগ শুধু নয় ছাত্র সংশ্লিষ্ট যেকোনো সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে হলে প্রথম শর্তই হল তাকে ছাত্র হতে হবে।

এতে সমালোচনা করেছেন পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা। তারা বলছেন,আর কোন দোষী ও অপরাধীর আশ্রয়দাতারা যাতে নেতৃত্বে না আসতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, সামনে নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত ও চাঙ্গা রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা হিসাবে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগকে নিয়ে যারা কাজ করবে, যাদের নামে কোনো অভিযোগ নেই, ভাবমূর্তী স্বচ্ছ এবং করোনাকালসহ দেশের যেকোনো মুহুর্তে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেছে এমন কেউ নেতৃত্বে আসুক। আর কোন দোষী ও অপরাধীর আশ্রয়দাতারা যাতে নেতৃত্বে না আসতে পারে। আমাদের অবিভাকদের কাছে এটাই চাওয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নেতা বলেন, একটা মানুষ এতদিন যাবত রাজনীতি করছে না, হুট করে এসেই বিতর্কিত নিয়ে সম্মেলন করছে। এটা আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা এবং স্থানীয় অবিভাবকদের দেখা উচিত।

দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার পর সম্মেলন সামনে রেখে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে পদপ্রত্যাশী মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আমি দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলাম না। করোনাকালীন সময়ে আমি নিষ্ক্রিয় ছিলাম। কারো কাছে যদি মনে হয় যে, করোনাকালীন সময়েও রাজনীতি করতে হবে, তাহলে আমার কিছু বলার নাই।

কর্মীদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সাথে অনেক কর্মী আছে। এখন তাদের ব্যক্তিগত কর্মকান্ডের দায়ভার তো আমি নিতে পারি না।

হল কক্ষে নিয়মিত মাদকের আসর বসানোর বিষয়ে এই নেতা বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। মিছিল-মিটিং বা শোডাউনে গেলে মদ-গাজার পার্টি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এবিষয়ে তোমাদের (সাংবাদিকদের) কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে, তোমরা নিউজ করো। তবে, আমি মাদক খাই না এবং প্রশ্রয়ও দেইনা।

আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন ওবায়দুল কাদের

রাবি শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি গোলাম কিবরীয়া বলেন, যেহেতু নতুন নেতৃত্ব শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে, ছাত্রদের দাবি আদায়ে কাজ করবে, সেহেতু তাদেরকে নিয়মিত ছাত্র হতে হবে অবশ্যই। আর এই বিষয়গুলো নিয়ে সম্পূর্ণভাবে সিদ্ধান্ত নিবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য আমাদের লিটন ভাই। তাদেরকে এই বিষয়গুলো আমরা অবহিত করব। ড্রপআউট, অছাত্র, বিবাহিত কিংবা নিষ্ক্রিয় ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কোনো কাজে সম্পৃক্ত থাকলে অবশ্যই আমাদের অবিভাবকরা বিষয়গুলো দেখবেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব একটি বিতর্ক বিহীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি উপহার দিতে। এ বিষয়ে আমরা অবশ্যই সচেষ্ট এবং আমরা সর্বোচ্চভাবে ইচ্ছুক যে কোন প্রকার বিতর্ক আমাদের এই কমিটি নিয়ে না হয়।’

 

 

 

আরপি/এসআর-১৯



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top